কোমলমতি শিশুদের জন্য বাঁধনের ‘স্বচ্ছ শিক্ষালয়’

মনজু ইসলাম।।মেঘনার বুকে জেগে উঠা একটি বিচ্ছিন্ন চর। যার চারিধারে রয়েছে মেঘনার উত্তাল ঢেউ।প্রায় দুই দশক আগে চরে শুরু হয়েছে বসতি। কিছু স্থায়ী বসতি থাকলেও এই চরে রয়েছে সরকারের দেয়া একটি আশ্রায়ন প্রকল্প ছিন্নমূল সহ কয়েকশত জেলে পরিবার এখানে বসবাস করে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস সহ প্রকৃতির নানা দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকতে হয় চরের মানুষ গুলোর। নদীতে মৎস্য শিকার আর কৃষি কাজ এদের আয়ের একমাত্র উৎসা।ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের বৈরাগীয়ার চর। মূল ভূখণ্ড ভোলা থেকে বিচ্ছিন্ন এই চরে শতাধিক পরিবার ও শিশুদের জন্য নেই নুন্যতম সুযোগ সুবিধা। নেই চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা। পরিবারে বেড়ে উঠা এসব শিশু জন্মের পর থেকেই অবহেলিত এখানকার শতাধিক শিশু শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলাধূলা ও বিনোদনের ব্যাবস্থা থেকে বঞ্চিত।পিতা মাতার কর্মে শ্রম দিয়েই কাটে তাদের জীবন।জেলার স্থানীয় একটি অলাভজনক উন্নয়ন সংস্থা ‘বাঁধন’। এই সংস্থাটি দীর্ঘ ২১ বছর ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় নানা ধরনের সমাজিক ও মানবিক সহায়তা দিয়ে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। দূর্গম এলাকায় সুবিধা বঞ্চিত মানুষের মানবিক সহায়তা দিতে অসচ্ছল মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এই সংস্থাটি।ইতিমধ্যে চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষকে সেবা দিতে নিজস্ব অর্থায়নে ভোলার চরফ্যাশনে স্থাপন করেছে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র এবং আম্বিয়া খাতুন প্রতিবন্ধী স্কুলসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি চর বৈরাগীয়ার শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে প্রতিষ্ঠা করেছে স্বচ্ছ শিক্ষালয়।এর ফলে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে শিক্ষা বঞ্চিত শতাধিক শিশু। এখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অভিজ্ঞ শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরন করা হয়েছে। এ শিক্ষা কেন্দ্রটি চালু হওয়ায় শিক্ষার আলো দেখবে এই চরের শিশুরা এমনটাই প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।বাঁধনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নওশাদ হোসেন কেন্দ্রটি উদ্বোধনের সময় বলেন,মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই চরে শতাধিক পরিবার বসবাস করছে স্কুলে যাওয়া উপযোগী শিশুদের শিক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই। এসব শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য স্কুলটি চালু করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, আপাতত ‘বাধন’ এর নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এই । পরবর্তীতে সরকারি বা বেসরকারি কোন সহায়তা পেলে এর পরিসর আরও বৃদ্ধি করা হবে। এখন একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৭০ জন শিশু নিয়ে প্রাথমিকভাবে এটি চালু করা হয়েছে।এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান নওশাদ হোসেন, মহাসচিব ও প্রোজেক্ট ডাইরেক্টর শাহ আলম বাদশাহ, সংস্থার সহকারী ব্যবস্থাপক ফরিদুল ইসলাম, অর্থ-সচিব শামীম উল আলম, সংস্থার ডিস্ট্রিক্ট কো-অর্ডিনেটর নূসরাত জাহান নূহা, স্বচ্ছ চিকিৎসালয়ের চিকিৎসক আলতাফ হোসেন ও শিক্ষক মহিন আহমেদসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এ কার্যক্রম সম্পর্কে স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নান্নু বলেন, এ চরে শিশুদের লেখা পড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। ‘বাঁধন’ একটি শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করায় এই চরের শিশুরা লেখা পড়া করার সুযোগ পেয়েছে। লেখা পড়ার মধ্য দিয়ে এখানে একটি সুন্দর পরিবেশ গড়ে উঠবে বলে আমি আশা করি।

ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান

SHARE