সৃষ্টির সেরা জীবের মধ্যে আদমসন্তানই শ্রেষ্ঠ

নিউজ ডেস্ক ঃ
ইসলাম।।  পৃথিবীর সেরা জীব হিসেবে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে দিয়েছেন বিশাল মর্যাদা। যা অন্য কোনো জীব বা প্রাণীকে দেওয়া হয়নি। আল কোরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘আর অবশ্যই আমি আদম-সন্তানদের মর্যাদা দান করেছি। স্থলে ও সমুদ্রে আমি তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি এবং পবিত্র জিনিস দিয়ে আমি তাদের রিজিক দান করেছি, আমি অন্য যত কিছু সৃষ্টি করেছি তার অধিকাংশের ওপরই তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭০।

‘আল্লাহ আদম -সন্তানকে বিভিন্ন দিক দিয়ে এমন সব বৈশিষ্ট্য দান করেছেন যা অন্য সৃষ্ট জীবের মধ্যে নেই। মানুষের সুশ্রী চেহারা, সুষম দেহ, অঙ্গগুলো এর অন্তর্ভুক্ত।’ (ইবনে কাসির)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই আমি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে পয়দা করেছি।’ সুরা আত ত্বিন, আয়াত ৪। মানুষকে আল্লাহ সব সৃষ্টবস্তুর মধ্যে সর্বাধিক সুন্দর করেছেন।

ইবনে আরাবি বলেন, ‘আল্লাহর সৃষ্টবস্তুর মধ্যে মানুষ অপেক্ষা সুন্দর কেউ নেই।’ সুবহানাল্লাহ! কেননা আল্লাহ মানুষকে জ্ঞানী, শক্তিমান, বক্তা, শ্রোতা, কুশলী, প্রজ্ঞাবান করে সৃষ্টি করেছেন। এগুলো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর গুণাবলি। মানুষকে আল্লাহ যেসব গুণ দান করেছেন তা অন্য কোনো জীবের মধ্যে নেই।

এছাড়া বুদ্ধি ও চেতনায় মানুষকে বিশেষ স্বাতন্ত্র্য দান করা হয়েছে। এর সাহায্যে সে ঊর্ধ্বজগৎ ও অধঃজগৎ নিজের কাজে নিয়োজিত করতে পারে। আল্লাহ মানুষকে বিভিন্ন সৃষ্টবস্তুর সংমিশ্রণে বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য প্রস্তুত করার শক্তি দিয়েছেন, সেগুলো তার বসবাস, চলাফেরা, আহার্য ও পোশাক-পরিচ্ছদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই তাকে কথা বলা শিখিয়েছেন।’ সুরা আর রহমান, আয়াত ৩-৪। এর অর্থ হচ্ছে মানুষকে তার মনের ভাব প্রকাশ বা অভিপ্রায় ব্যক্ত করার তৌফিক তিনি দান করেছেন। মানুষের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ গুণ হলো আল্লাহ তার মধ্যে একটি নৈতিক অনুভূতি সৃষ্টি করে দিয়েছেন যার কারণে সে প্রকৃতিগতভাবেই ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, জুলুম- ইনসাফ, উচিত-অনুচিতের পার্থক্য করে এবং চরম অজ্ঞতার মধ্যেও তার ভিতরের এ আত্মজ্ঞান ও অনুভূতি লোপ পায় না।

পৃথিবীকে আল্লাহ মানুষের বসবাসের উপযোগী করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তো তোমাদের দুনিয়ায় বসবাসের স্থান দিয়েছি এবং তাতে তোমাদের জীবিকারও ব্যবস্থা করেছি।’ সুরা আরাফ, আয়াত ১০। আল্লাহ তাঁর নিয়ামতের মধ্যে আরও যা দিয়েছেন তা হলো লজ্জাস্থান নিবারণের জন্য পোশাক। আল্লাহ বলেন, ‘হে বনি আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করা ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদের পোশাক দান করেছি এবং আরও দিয়েছি তাকওয়ার পোশাক, আর এটাই সর্বোত্তম পোশাক। এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম, হয়তো তারা এর মাধ্যমে উপদেশ গ্রহণ করতে পারবে।’ সুরা আরাফ, আয়াত ২৬।

পোশাক দ্বারা শরীর আবৃত করার আসল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন ও আল্লাহভীতি। তাকওয়ার পোশাক বলতে সৎকর্ম ও আল্লাহভীরুতাকে বোঝানো হয়েছে। কোনো কোনো আলেম বলেন, হাতের আঙুল দ্বারা আহার করাও মানুষেরই বিশেষ গুণ। মানুষসহ সব জন্তুই মুখে আহার গ্রহণ করে। কিন্তু একমাত্র মানুষই বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের সংমিশ্রণে খাদ্যকে সুস্বাদু বানিয়ে আহার করে। একমাত্র মানুষই সংমিশ্রিত খাদ্য প্রস্তুত করে এবং খায়। সৃষ্টির সেরা জীব হওয়ার পরও মানুষ আল্লাহর নাফরমানি করে।

আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে। অকৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে পরিগণিত হয়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ।’ সুরা আদিয়াহ, আয়াত ৬। আল্লাহর সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ বান্দা হিসেবে আমরা যেন অকৃতজ্ঞ বান্দা না হই সে সাহায্যই তাঁর কাছে সব সময় কামনা করি এবং তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন গড়তে পারি সে তৌফিক যেন তিনি আমাদের দান করেন। তাঁর কাছে এই আমাদের প্রার্থনা

SHARE