নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন নিয়ে সংশয়

• কর্মপরিকল্পনা থেকে অনেক পিছিয়ে ইসি। 

• গত ডিসেম্বরের মধ্যে আইনের সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্ত করার কথা ছিল। 

• প্রায় সব কটি দল আরপিওর কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংশোধন আনার প্রস্তাব দেয়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনী আনার ঘোষণা দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হবে। কিন্তু এখনো আরপিওর খসড়াই চূড়ান্ত করতে পারেনি ইসি। ফলে আগামী নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন করতে পারা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

ইসির ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বরে আইন সংস্কারের খসড়া প্রস্তুত ও গত ফেব্রুয়ারিতে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা। কিন্তু কর্মপরিকল্পনা থেকে অনেক পিছিয়ে ইসি। ইসির আইন ও বিধিমালা সংস্কারসংক্রান্ত কমিটির আরপিওতে ৩৫টি সংশোধনী আনার সুপারিশ নিয়ে গত ৯ এপ্রিল ও গতকাল বৃহস্পতিবার আলোচনা করে কমিশন। তবে খসড়া চূড়ান্ত হয়নি। সুপারিশগুলো আরও পর্যালোচনার জন্য আবার কমিটিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

গতকাল কমিশনের বৈঠক শেষে ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, আইন সংস্কারসংক্রান্ত কমিটি আরপিওর ৩৫টি সংশোধনী প্রস্তাব করেছে। এগুলো নির্বাচন কমিশনাররা পর্যালোচনা করেছেন। কমিশন মনে করে, এগুলো আরও পর্যালোচনা করা দরকার। কোনটা বাস্তবতার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য, কোনটা গ্রহণযোগ্য নয়, তা উপকমিটি আবার পর্যালোচনা করে প্রস্তাব করবে। প্রস্তাব পাওয়ার পর আবার কমিশন আলোচনা করবে।

ইসির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ নিয়মে পর্যালোচনা শেষে আবার সুপারিশ তৈরি করে কমিশনে দেওয়া হবে। কমিশন আরপিওর সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্ত করার পর তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে, ভেটিং শেষে যাবে মন্ত্রিসভায়। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর উঠবে সংসদে। সংসদ থেকে যাবে সংসদীয় কমিটিতে। সেখান থেকে আবার সংসদে আসার পর তা পাস হবে। আবার সরকারি দল না চাইলে পাস হওয়ার সুযোগ নেই। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া আগামী নির্বাচনের আগে শেষ করা সম্ভব হবে কি না সংশয় আছে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আইনের সংশোধনী আনা হলে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

চলতি দশম সংসদে এই সংশোধনী পাস করানো যাবে কি না, প্রশ্নের জবাবে সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, উপকমিটির রিভিউ প্রস্তাব পাওয়ার পর বোঝা যাবে, আরপিওর সংশোধনী এই সংসদে পাস করে কার্যকর করা যাবে কি না। তিনি বলেন, ‘আমরা যত শিগগির সম্ভব প্রস্তাব পাওয়ার পর সংসদে পাসের জন্য পাঠাব। আইন সংস্কারসংক্রান্ত কমিটিকে কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব তাদের পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।’

গত ডিসেম্বরের মধ্যে আরপিওসহ অন্যান্য আইনের সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্ত করার কথা। সে হিসেবে আরপিওর খসড়া চূড়ান্ত করতে ঘোষিত সময়সূচির চেয়ে ইসি এখন সাড়ে তিন মাস পিছিয়ে আছে। রোডম্যাপ অনুযায়ী আইন সংস্কার করতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে আরপিও সংস্কার সম্পর্কিত নয়। যেহেতু রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে, অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। সচিব বলেন, আইনের সংশোধন চলমান প্রক্রিয়া। প্রত্যেক কমিশন কিছু না কিছু সংশোধন আনে। সে হিসাবে আরপিও যুগোপযোগী করার জন্য সংশোধন আনার চেষ্টা করছে এই কমিশন। হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, আরপিও বাংলায় করায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য একজন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হবে। সহজবোধ্য করার জন্য বাংলায় অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গত জুলাইয়ে সাতটি কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল ইসি। এর একটি আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার। সেখানে আরপিও সংশোধনের কথাও বলা হয়। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী সুশীল সমাজ, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে এ-সংক্রান্ত পরামর্শও নেয় ইসি। প্রায় সব কটি দল আরপিওর কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংশোধন আনার প্রস্তাব দেয়।

ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার আগে থেকেই আরপিও সংশোধনের কাজে হাত দেয় ইসি। নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বে আইন সংস্কারের লক্ষ্যে একটি কমিটি করা হয়। আরপিও সংস্কারের বিষয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতামত নেওয়া হয়। মাঠ কর্মকর্তা ও সংলাপে পাওয়া সুপারিশ পর্যালোচনা করে এই কমিটি ৩৫টি সুপারিশ তৈরি করে। তবে সেখানে বহুল আলোচিত সেনা মোতায়েনের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

SHARE