গলাচিপায় পল্লী চিকিৎসকের উপরে সন্ত্রাসী হামলা; এমপির বন্ধু ও কাছের লোকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ

 

পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়ানে মোঃ হাবিবুর রহমান (৫০) নামের এক পল্লী চিকিৎসকের উপরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে । আহাত ওই চিকিৎসক পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় ওই পল্লি চিকিৎসকের নামেই থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। সংসদ সদস্য এস এম শাহাজাদা সাজু এর বন্ধু হারুন ও আব্দুল মন্নান হাজী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টার দিকে উপজেলার আমখোলা ইউনিয়ানের বৌবাজার এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। জানা যায়, একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসী (৩ ডিসেম্বর)রাতে ‘চারিআনি বাউরিয়া মৎসজীবী সমবায় সমিতির ‘ দুই সদস্য আবু তালেব ও ফয়সাল এর উপরে অতর্কিতভাবে হামলা চালয়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে (৪ ডিসেম্বর) আরেক সদস্য পল্লি চিকিৎসক হাবিবুর রহমানের ওষধের দোকান বন্ধ রাখাতে বলে সন্ত্রাসী মোঃ ফারুক (৫০)। সন্ত্রাসীদের কথা অমান্য করে দোকান খোলার কারনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা হলো মোঃ বশির হাং, আকবর হোসেন, নেসার মৃধা, নজরুল ওরফে ফন্টে, হালিম হাং, নাজমুন গং।বর্তমানে ওই চিকিৎসকের ওষুধের দোকান বন্ধ রয়েছে। মিথ্যা মামলার ভয়ে ওই চিকিৎসক পালিয়ে বেড়াচ্ছে। চিকিৎসক হাবিবুর রহমান জানায়, আমার ছেলে নাজমুল শুক্রবার সকালে দোকান খোলতে গেলে সন্ত্রাসীরা দোকান বন্ধ রাখতে বলে। এতে নাজমুল দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে আসে। সকাল সাড়ে ৯ দিকে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি খলিলুর রহমান ফোন দিলে আমি দোকান খোলতে যাই । সন্ত্রাসীদের কথা অমান্য করে দোকান খোলায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার উপরে অতর্কিত ভাবে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি আমাকে উদ্বার করতে। আমি চিৎকার চেঁচামিচি করলে আমার মা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে সে তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয়। পরে আমার স্বজনরা এসে উদ্বার করে আমাকে পটুয়াখালী হাসপাতালে নিয়ে যায় ।সন্ত্রাসীরা আমার নামেই থানায় অভিযোগ করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানায়, বশির হাং সহ আরো অনেকে মিলে হাবিব ডাক্তারকে মারধর করেছে। হাস্যকর বিষয় হলো আবার তার নামেই থানায় মামলা করা হয়েছে শুনেছি । হাবিব ডাক্তারের দোকানের পাসেই বশির হাং চৌকিতে বসে মাছ বিক্রি করেন। সেই চৌকির ক্যাশবাক্স থেকে ৫০ হাজার টাকা হাবিব ডাক্তার হামলার সময় নিয়েছে। এমন অভিযোগ পেয়ে গালাচিপা থানার এএসআই কাজী শাহাদাত হোসেন তদন্ত করেতে আসেন।
এএসআই কাজী শাহাদাত হোসেন বলেন, বশির হাং থানায় অভিযোগ করেন। তদন্ত করার জন্য আমি ঘটনা স্হানে গিয়ে বাদী এবং বিবাদী কাউকে পাইনি। ওই পল্লি চিকিৎসকের ছোট ভাই ইউসুপ জানায়, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেও আমরা হয়রানির শিকার হয়েছি। ভর্তি হওয়ার পরের দিন হাসপাতালের ডাক্তার আমার অসুস্থ ভাইকে কয়েকটা টেষ্ট দেয় এবং বলে এগুলো করিয়ে রাখবেন আগামীকাল দেখবো। কিন্তু বিকালে কয়েকজন সন্ত্রাসীরা হাসপাতালে আসে চিকিৎসক কে ভয় ভিতি দেখিয়ে আমার ভাইয়ের নাম কেটে দেয়া হয়েছে। নার্সেরা আমার অসুস্থ ভাইকে হাসপাতাল থেকে নামিয়ে দিচ্ছিল। আর তারা তাকিয়ে দেখছিল। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোহাম্মদ আবদুল মতিন এর সাথে যোগাযোগ করলে সে হাসপাতালে থাকতে বলে। পরে আমরা তিনদিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে যাই। সংশ্লিষ্ট সুত্রে যানা যায়, এরা এলাকার বেশ চিহ্নিত সন্ত্রাসী । সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সত্তার হাওলাদারের ছত্রচ্ছায়ায় এলাকায় দীর্ঘদিন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে আসছিল। ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে সত্তার হাং বিজয়ী হতে না পারায় কিছু সন্ত্রাসী এলাকা ছাড়ে। এরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পরে এবং বড়ো ধরনের অপরাধের সাথে এরা জড়িয়ে পারে এমন প্রমাণও পাওয়া যায় ।  ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় এস এম শাহাজাদা সাজু। কিছুদিনের মধ্যেই সাবেক চেয়ারম্যান সত্তার হাং এর ছেলে হারুন হাং ও ঠিকাদার আব্দুল মন্নান হাজীর সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে। হারুন পরিচয় দিয়ে বেড়ায় সংসদ সদস্য এস এম শাহাজাদা সাজু তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আব্দুল মন্নান হাজীর পৃষ্ঠপোষকতায় ও হারুন হাং এর ছত্রছায়ায় পুনুরায় এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। এই দুইজনের ছত্রছায়ায় অল্প দিনের মধ্যেই দুর্ধষ সন্ত্রাসী দলে পরিনত হয় তাদের বাহিনী। এদের মধ্যে যারা ‘মার্ডার মামলা, ডাকাতি মামলা, অস্ত্র মামলা ও অপহর মামলায় জড়িত তারা সবসময় বের হয়না এমনটা জানায় এলাকার সাধারণ মানুষ। বাউরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আইয়ুব বলেন, ২ এপ্রিল আমাদের বাড়ির কাছে এক সাংবাদিকে ব্যাপক মারধর করে ক্যামেরা ও মোবাইল রাইখা দেয় সন্ত্রাসীরা। ওই সাংবাদিকের বড় ভাই থানায় মামলা করতে গেলে মন্নান হাজী মামলা করতে দেয়ানি। সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে ওই সাংবাদিককে সাক্ষী বানিয়ে আমার বাবাকে দিয়ে মামলা করায়। পরে ওই সাংবাদিক মামলা করতে গেলে ওসি বলে একই ঘটনায় দুইটা মামলা হয়না। মন্নান হাজী বলছে আমি ক্যামেরা মোবাইল দিয়ে দিবো এখন পর্যন্ত দেয়নি। হারুনের ফুপাত ভাই ফারুক আমাদের বলেছে এমপি এস এম শাহাজাদা হারুনের পকেটে। থানায় একটা ফোন দিবে থানা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। কেউ মামলা করে আগাতে পারবেনা। এতে সন্ত্রাসীরা পার পেয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সন্ত্রাসীদের একজন বলেন, কাউকে মিথ্যা মামলা দেয়া, আমাদের নামে মামলা ঠেকানো, মামলায় হাজির ও জামীন কারান এসব দায়িত্ব হারুন ও মন্নান হাজীর। কয়েকদিন আগে আমাদের দুইজন জেলে গেছিল তাদের খরচে জামিন করিয়ে আনছে। আমারা তাদের কথা মতোই কাজ করছি।  আব্দুল মন্নান হাজীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন , আমি এবিষয় কিছুই জানিনা। আমি ঢাকাতে আছি পরে আপনাকে ফোন দিবো।
এবিষয় সংসদ সদস্য এস এম শাহাজাদা সাজু বলেন, আপনারা এটা মনে করিয়েন না, আমার বন্ধু বা আমার পরিবারের কেউ হইলেই এইধরনের কাজ করতে পারবে। এখন পর্যন্ত সেটা আমি করতে দেইনা যদি আমার নজরে আসে। কিন্তু সবকিছু আমার নজরে আসে এটাও না। আর আাসলেও ভুলভাবে আসে।

SHARE