ডেটলাইন অক্টোবর।।

অনলাইন ডেস্ক।।

অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর। আগামী এই তিন মাসকে কঠিন চোখে দেখছে সরকার। নির্বাচনের আগের এ সময়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিরোধী দলগুলোর নানা পরিকল্পনা ভাবিয়ে তুলছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের। সম্প্রতি একাধিক সংস্থার গোপনীয় প্রতিবেদনে তাদের পরিকল্পনার বিষয়টি উঠে এসেছে।

বিশেষ করে অক্টোবর মাস টার্গেট করে বিরোধী দলগুলোর নানা আয়োজনের বিপরীতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা। তারা বলছেন, এ সংক্রান্ত একটি বিশেষ নির্দেশনা এরই মধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে সব ইউনিট, মহানগর, রেঞ্জ এবং জেলা পর্যায়ে পৌঁছানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সব বাহিনীকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অক্টোবর এবং নভেম্বরকে কেন্দ্র করে তাদের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন প্রশ্নে একটা সমঝোতায় আসতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। জানা গেছে, আগামী নভেম্বরের মধ্য বা শেষ সপ্তাহ নাগাদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ওই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসি সূত্রের দাবি। বিএনপি চাইছে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে মাঠে থাকতে। বিএনপি এরই মধ্যে ১৬ তারিখ থেকে রোডমার্চের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু করেছে। অক্টোবরের ৩ তারিখ কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের অভিমুখে রোডমার্চের মধ্য দিয়ে তারা চলমান কর্মসূচি শেষ করবে। হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দীন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক তো এরই মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। তবে এর বাইরের মহাসড়কগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অতীতের মতোই জেলা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

শিল্পপুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মাহবুবুর রহমান বলেন, গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। অশুভ শক্তি যাতে কোনোভাবেই শিল্প খাতে ধ্বংসাত্মক কিছু করতে না পারে সে জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমাদের সাইবার ইউনিটের সদস্যরা সার্বক্ষণিকভাবে গুজব-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো মনিটরিং করছেন। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের মধ্যে চিন্তা রয়েছে, অক্টোবরে মধ্য থেকে যে কর্মসূচি থাকবে তাতে প্রাধান্য পাবে ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি। এসব কর্মসূচি নিয়ে এরই মধ্যে বিএনপির অভ্যন্তরে আলোচনা হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে সরকার পক্ষ বাধা দিলে একপর্যায়ে অসহযোগ বা অবরোধের মতো আন্দোলনের দিকেও যেতে বাধ্য হতে পারে দলটি। তাদের নীতিনির্ধারকদের মতে, আক্রমণাত্মক পথে না গিয়ে একের পর এক কর্মসূচির মাধ্যমে তারাও দাবি আদায়ের পরিস্থিতি তৈরি করবেন। তবে তাদের মধ্যে এ আলোচনাও রয়েছে, সরকারি দল আওয়ামী লীগ বরাবরই আগামী নির্বাচন দেশের সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। সেটি যাতে করতে না পারে এ জন্য বিএনপি চেষ্টা করবে, যত বেশি সম্ভব রাজনৈতিক দলকে নিজেদের দিকে নিয়ে আসা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখা এবং সরকারবিরোধী কর্মসূচি দিয়ে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে রাখা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমাদের কর্মসূচি এখনো নিয়মতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ রয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমেই সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। সরকার যদি আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়, তাহলে জনগণ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। সরকারের মনোভাবের ওপর নির্ভর করে আন্দোলন কতটুকু সহিংস বা অহিংস হবে।  তবে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, শুধু আগামী তিন মাস কেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সদস্যরা সবসময়ই প্রস্তুত থাকে। সে অনুযায়ীই তো ডিএমপির প্রতিটি সদস্য কাজ করে। কেউ যদি নাশকতার প্রস্তুতি নেয় কিংবা ফৌজদারি অপরাধ করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আমরা পিছপা হব না। সূত্র আরও বলছে, রাজধানী ঢাকাকে নিরাপদ রাখতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি), মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, ফরিদপুর জেলায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের অতীত ইতিহাস এবং তাদের মতাদর্শ বিশেষ গুরুত্বসহকারে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থায় কর্মরত কেউ যাতে সরকারের সিদ্ধান্তের বিপরীতে কোনো কর্মকান্ডে অংশ নিতে না পারে। এর বাইরে ঢাকা এবং আশপাশের জেলাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় থাকা সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল আছে কি না তা পরখ করতে দেখার নির্দেশনা রয়েছে উচ্চ পর্যায় থেকে। প্রয়োজনে আরও ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অস্ত্র-গোলাবারুদ, জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেটসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পরখ করতে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স পাঠানোর কথা ভাবছেন পুলিশের শীর্ষ ব্যক্তিরা। এর বাইরে উ™ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পুলিশ এবং র‌্যাবের বাইরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি), আনসার ও গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স, কারা অধিদফতরকে সব সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে র‌্যাব। সাইবার জগৎ ২৪/৭ মনিটরিং করা হচ্ছে। যাতে কেউ প্রোপাগান্ডা এবং গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না করতে পারে। অপরাধীকে আমরা অপরাধী হিসেবেই দেখব। সে যে-ই হোক না কেন। এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা সদর দফতর থেকে র‌্যাবের সব ব্যাটালিয়নে দেওয়া হয়েছে। এদিকে বিএনপির একটি সূত্র বলছে, সরকারি যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারকে চাকরির শর্ত লঙ্ঘন করে সহায়তা করবে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি তালিকা করার কাজ শুরু হয়েছে। এসব তালিকায় প্রশাসন, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নাম থাকছে।

SHARE