ভোলায় শ্রমিক ইউনিয়নের নামে চাঁদাবাজি,প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা

মেসকাত আহাম্মেদ#

ভোলায় বাংলাদেশ কার্গো ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়ন নামের একটি ভুয়া সংগঠনের নাম দিয়ে মেঘনা নদীতে মালবাহী কার্গো জাহাজ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে চাঁদাবাজি করে আসছে শাহজল ব্যাপারির ভাই ফারুক ব্যাপারিদের নেতৃত্বে একটি চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে।

সিলেট থেকে আসা চট্টগ্রামগামী মালবাহী কার্গো জাহাজ ভোলার মেঘনা নদীতে পৌঁছলে চক্রটি তাদের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ট্রলার দিয়ে জাহাজে উঠে জোরপূর্বক লাইনম্যান (পথপ্রদর্শক) দেয়ার নামে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা।

জাহাজের লোকজন লাইনম্যান নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাদেরকে মারধর সহ হুমকি ধামকি দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে এই শক্তিশালী চক্রটির বিরুদ্ধে। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভোলার একটি পত্রিকা অফিসে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের ভোলা জেলার নেতৃবৃন্দ।

সংগঠনের সভাপতি মো. রোমান পাটওয়ারী লিখিত বক্তব্যে আরো জানান,
এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা চাঁদাবাজ চক্রের এক সদস্যকে আটক করে ভোলা সদর থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে মুচলেকা দিয়ে সে ছাড়া পায়। এতদিন এ চাঁদাবাজ চক্রটি পরিচালনা করতেন সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের শাহজল ব্যাপারির সহ তার ভাই ফারুক মাঝি। তবে বর্তমানে চক্রটি পরিচালনা করছেন তুলাতুলি ঘাটের আসলাম।

তিনি আরো জানান, জাহাজে চাঁদাবাজির খবরে গত জুন মাসের ১২ তারিখে চাঁদাবাজি বন্ধে বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন ভোলায় তিন সদস্যের একটি কমিটি দিয়ে ১০ দক্ষ লাইনম্যান (লোকাল/ভিট পাইলট) নিয়োগ করেন। কিন্তু এরই মধ্যে বাংলাদেশ কার্গো ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়নের নামে সদর উপজেলার তুলাতুলি মাছঘাট এলাকার আসলাম, প্রিন্স বাবু, ভুট্টু, মফিজ মাঝিসহ একটি চক্র নৌ-যান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের নিয়োগকৃত লাইনম্যানদের জাহাজে উঠতে বাঁধা প্রদান করে। সিলেট থেকে বালু পাথরসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে ভোলার মেঘনা নদী দিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাতায়াত করে থাকে। এ জাহাজগুলোকে সঠিক পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একজন স্থানীয় লাইনম্যান (পথপ্রদর্শক) প্রয়োজন হয়। এ জন্য বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন ১০ জন দক্ষ পাইলট নিয়োগ করে। কিন্তু স্থানীয় একটি চাঁদাবাজ চক্র নিয়োগকৃত পাইলটদের জাহাজে উঠতে দেয় না। উল্টো জাহাজে অদক্ষ লোক দিয়ে জাহাজ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।

বিষয়টি নিয়ে আমরা ভোলার পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পরে পুলিশ সুপার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনায়েত হোসেনকে দায়িত্ব দেন। এ অবস্থায় ওসি উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসতে বললেও চাঁদাবাজ চক্রটি কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসেনি। উল্টো তাদের চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে।
তুলাতুলি ঘাটের আসলামসহ স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ কার্গো-ট্রলার ভাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়ন নামের একটি ভুয়া শাখা খুলে নতুনভাবে চাঁদাবাজির ধান্দা শুরু করেছে। এ কাজে তারা এখন জাহাজের মাষ্টার-সুকানীদের ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ সিকদার জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া একটি শ্রমিক ইউনিয়নের নাম ভাঙ্গিয়ে ভোলার মেঘনা নদীতে মালবাহী জাহাজে চাঁদাবাজি করে আসছে। মূলত ওই সংগঠনটির কোনো অনুমোদন নেই। বিষয়টি আমার কাছে জানালে আমি নৌ-পুলিশের ডিআইজিসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষে জানায়। এবং আমাদের সংগঠন থেকে একটি জেলা কমিটি ও ১০ অভিজ্ঞ লাইনম্যান নিযুক্ত করা হয়।

এব্যাপারে অভিযুক্ত আসলাম গোলদার বলেন, জাহাজের মাষ্টার-সুকানী ও জাহাজ মালিককে বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে তারা দক্ষ লাইম্যানদের একত্রিত করে কমিটি গঠন করেছেন।
ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনায়েত হোসেন বলেন, এর আগে একজন এস আইয়ের মাধ্যমে উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসতে বললে তাদের এক পক্ষ না আসায় তা সমাধান করা যায়নি। পরে আমি নিজে উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে (মঙ্গলবার) পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আসতে বলা হয়েছে। উভয় পক্ষ আসলে যাদের কাগজ সঠিক তাদেরকেই পরিচালনা করতে দেয়া হবে।

SHARE