বাংলাদেশের রোজিনা শুধু নন, ভারতে বহু সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়েছেন বস্তাপচা সিক্রেটস অ্যাক্টে

অনলাইন ডেস্ক% ১৯০৪ সালে লর্ড কার্জন ভারতে ভাইসরয় হয়ে আসার পর ইন্ডিয়ান সিক্রেট আইনের প্রবর্তন করেন সরকারি নথিপত্রের গোপনীয়তা রক্ষা করতে। ১৯২৩ সালে এই কানুনটিই ইন্ডিয়ান পিনাল কোড এর অন্তর্ভুক্ত হয় এবং আইনটি চালু আছে ইন্ডিয়ান সিক্রেট অ্যাক্ট- ১৯২৩ নামে। বাংলাদেশের নারী সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সম্প্রতি বাংলাদেশের গোপনীয়তা রক্ষা আইনে পুলিশের হাতে ধরা পড়ায় বিশ্বজুড়ে হইচই শুরু হয়েছে। রোজিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, স্বাস্থ্য সম্পর্কে সরকারি গোপন নথি চুরি করার ও ফটো তোলার। রোজিনা সান্ত্বনা পেতে পারেন যে তাঁর প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও ১৯২৩ সালের এই বস্তাপচা আইন জারি আছে এবং প্রতিবছরই সাংবাদিকরা এই ধারায় সোপর্দ হচ্ছেন। তবে, ভারতে আইনটি পরিমার্জিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে ল কমিশন প্রথম আইনটির পরিমার্জনের কথা বলে। ১৯৮৯ ও ২০০৬ সালে আইনটির কিছু পরিমার্জন হয়েছে, ১৯২৩ সালের স্পিরিটটি অক্ষুণ্ন আছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক উচ্চপদস্থ আমলা, যিনি নিজেও একসময় সাংবাদিক ছিলেন, মানবজমিনকে বলেন, সাংবাদিকদের রক্ষাকবচ থাকা দরকার। জনস্বার্থে কোনও সরকারি নথি যদি কোনও সাংবাদিক দেখতে চান অথবা প্রকাশ করেন তাহলে তাঁর ওপর সরকারি কোপ পড়া উচিত নয়। ভারতে ২০১৪ সালে ১১টি, ২০১৬ সালে ৩০টি কনভিকশনের ঘটনা ঘটেছে। এরপরের বছরগুলিতে একটু কমলেও সংখ্যাগুলি কম নয়। তবে, সব ক্ষেত্রে যে সাংবাদিকরা যুক্ত ছিলেন এমন মনে করার কোনও কারণ নেই। ইন্ডিয়ান অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে দুটি বিষয় পরিষ্কার করে বলা আছে। এসপিওনেজ অথবা বিদেশী রাষ্ট্রের কাছে সরকারি তথ্য বিক্রি করলে তা সিরিয়াস অফেন্স বলে ধরা হবে। ইন্ডিয়ান অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টে রাজেশ শর্মা নামের এক দিল্লির সাংবাদিক, এক চীনা নারী ও তাঁর নেপালি সহযোগীকে ধরা হয় চীন সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুভমেন্ট সংক্রান্ত ফাইল লোপাট করার অভিযোগে। কিন্তু দ্বিতীয় ধারাটাই মারাত্মক। এতে বলা আছে- সরকারি নথিপত্র, পাসওয়ার্ড, ম্যাপ, লিখিত নথি কিংবা যে কোনও ধরনের ডকুমেন্ট প্রকাশ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এইখানেই প্রশ্ন ওঠে জনস্বার্থে কোনও নথির সাহায্য কোনও সাংবাদিক নিলে তাঁর সোর্স প্রকাশও এই অ্যাক্টের অঙ্গ। তাহলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রধান সচিবালয় নবান্ন কিংবা দিল্লির সংসদ ভবনে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আছে। মোবাইল ক্যামেরার যুগে আইনের এই ধারা কি হাস্যকর নয়? পশ্চিমবঙ্গের উচ্চপদস্থ আমলার ভাষ্য অনুযায়ী- কোনটা জনস্বার্থে আর কোনটা জনবিরোধিতার, সেটা বাছবে কে? কে পরাবে বেড়ালের গলায় ঘণ্টা?

SHARE