ভোলায় ভাইরাল সেই বৃদ্ধা মাকে দিয়ে ভিক্ষা করাবেন না

 

ইয়ামিন হোসেন।
ভোলা শহরের সদর রোডের বাংলাস্কুল মোড়, সোনালী ব্যাংকের সামনেসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বাপ্তা জামিরালতা ৭নং ওয়ার্ডের জলেখা খাতুন (৯৫) নামের এক বয়স্ক মহিলার মুখে দাঁত নাই, নিজে উঠে দাঁড়াতে পারে না, যে বয়সে নাতিনাতনিদের সাথে সময় কাটানোর কথা সেই বয়সে লোভী একমাত্র মেয়ে আচিয়া নিজের মাকে দিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছেন।
বৃদ্ধ জলেখা খাতুন কে প্রতিদিন সকালে মেয়ের জামাই ভোলা শহরে ভিক্ষার জন্য রেখে যায় আবার সন্ধ্যায় এসে নিয়ে যায়।
আর ভিক্ষুক জলেখা রাস্তার পথচারীদের পা ধরে ভিক্ষা চায়, অনেক সময় ছেলে/নাতির বয়সী লোকের পা জড়িয়ে ধরলে বিব্রতবোধ করতে দেখা গেছে অনেক পথচারীকে।
মায়ের বয়সী কারো নানী/দাদীর বয়সী বৃদ্ধ জলেখার এমন আকুতি করে ভিক্ষা করছেন কেনো? এর অনুসন্ধানে নামেন ভোলার বাণীর স্টাফ রিপোর্টার ইয়ামিন হোসেন।
ফেসবুকে বৃদ্ধ জলেখার বিস্তারিত পরিচয় জানতে পোষ্ট করলে, বেড়িয়ে আসে আসল ঘটনা, জলেখা কি অভাবে ভিক্ষা করছেন নাকি কেউ করাচ্ছেন? এমন খোঁজে বেড়িয়ে আসে আসল তথ্য।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে লেখাটি নজরে পড়ে, ভোলা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান, এর। তিনি বৃদ্ধ জলেখার পাশে দাঁড়িয়েছেন।
কিন্তু আসল তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বৃদ্ধ জলেখার একমাত্র মেয়ে আচিয়া বেগম এবং আচিয়ার স্বামী ও তার ছেলে যুবদল কর্মী রুবেল টাকার লোভে দীর্ঘবছর ভিক্ষা করাচ্ছেন জলেখা বেগম কে দিয়ে।
ফেসবুকে ভাইরাল অবশেষে বিস্তারিত জেনে জলেখার মেয়ে আচিয়ার কে শুক্রবার দুপুরে ডাকেন ভোলা সদর থানার ওসি এনায়েত হোসেন,পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আরমান হোসেন।
ভোলার পুলিশের মানবিক এবং সৎ নিষ্ঠাবান এই দুই অফিসার কথা বলেন ভিক্ষুক জলেখার একমাত্র মেয়ে আচিয়ার সাথে, এক পর্যায়ে আচিয়া বেগম নিজের ভুলের কথা স্বীকার করেন এবং অভাবে নয় স্বভাবে আর লোভেই বৃদ্ধ মাকে দিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছেন বলে স্বীকার করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আচিয়া তার মাকে দিয়ে ভিক্ষা করাবেন না।
এই সময় পুলিশের দুই কর্মকতাই ভিক্ষুক জলেখার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহান জলেখার ভিক্ষা বন্ধ করার জন্য স্থায়ী ভাবে একটি অনুদান দিয়েছেন, সেই অনুদানের টাকার জমি এখনো আছে যদিও বৃদ্ধ জলেখার নামে দলিল করেনি তারা স্বজনরা।
ভোলার সমাজ সেবা অফিসের কর্মকতা শেখর কুমার বলেন, বাপ্তা জামিরালতার সেই জলেখা অনেক আগ থেকেই নিয়মিত বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন।
ভোলা সদর থানার ওসি এনায়েত হোসেন বলেন,ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ সুপার মহোদয় এর নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক আরমান হোসেন এর মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জলেখার মেয়ের সাথে কথা বলেছি, জলেখার মেয়ে আচিয়া তার ভুল স্বীকার করেছেন এবং অঙ্গিকার নামা দিয়েছে, আর কখনো তার মাকে দিয়ে ভিক্ষা করাবেন না।
তবে ভোলা জেলা পুলিশ সব সময় জলেখার পাশে আছে বলে জানান পুলিশ পরিদর্শক আরমান হোসেন।
পুলিশের এই মহতি উদ্যােগ দেখে স্বাগত জানিয়েছে ভোলার সচেতন মহল।

SHARE