আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস

 

 

আরিয়ান আরিফ।। আজ ১০ ডিসেম্বর, বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ১৯৫০ সালে এই দিনটিকে জাতিসংঘ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। সেই থেকে বিশ্বজুড়ে এ দিনটি পালিত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন আজ নানাভাবে এ দিনটি পালন করবে। বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে যৌথভাবে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন সহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের মার্চে বাংলাদেশে করোনার প্রার্দুর্ভাব শুরুর পর বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। এমনকি কোভিড -১৯ সম্পর্কে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করায় গত কয়েক মাসে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও মামলা করেছে কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ সরকার গত ৭ই মে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে যেখানে সকল সরকারি কর্মকর্তাদের যেকোনো পোস্ট করা, “লাইক করা,” শেয়ার করা, অথবা মন্তব্য করাকে নিষিদ্ধ করে যা “রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে” অথবা সরকারের “গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের” সুনাম ক্ষুন্ন করতে পারে, এই আদেশের লঙ্ঘন হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ার জারি করে। কর্তৃপক্ষ “গুজব” ছড়িয়ে দিতে পারে এমন যেকোনো ব্যক্তির ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে এবং গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করে তুলেছে। গুম ও ক্রসফায়ারে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ র‍্যাব বাংলাদেশের কোভিড -১৯ সংক্রান্ত “গুজব” চিহ্নিত করতে একটি “সাইবার ভেরিফিকেশন সেল” গঠন করেছে। এছাড়া, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- এর ধারা ২১, ২৫, ৩১ এবং ৩৫ এর অধীনে অনেককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ধারা ২১ স্বাধীনতা যুদ্ধ, “জাতির পিতা, জাতীয় সঙ্গীত, অথবা জাতীয় পতাকা এর বিরুদ্ধে” “যেকোনো ধরণের প্রপাগান্ডা অথবা প্রচারণা” কে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। ধারা ২৫ অনুযায়ী “আপত্তিকর বা ভীতি প্ররোচনা” মূলক কোনো প্রকাশিত তথ্য বা যেকোনো বিষয়বস্তু যা “জাতির ভাবমূর্তি নষ্ট করে” তা অপরাধ বলে গণ্য হবে যার শাস্তি সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড। ধারা ৩১ অনুযায়ী, প্রকাশিত তথ্য যা “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ব্যাহত করে” বা “আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার জন্য হুমকি” বলে বিবেচিত হবে তার জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। জাতিসংঘ মানবাধিকারের হাই কমিশনার, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং আরো অনেকেই আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের কারণে বারবারই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সমালোচনা করেছে। হত্যা, নির্যাতন ও জোরপূর্বক গুমসহ গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগেও দীর্ঘদিন ধরে অভিযুক্ত রয়েছে র‍্যাব। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে, সকল ধরণের তথ্য অনুসন্ধান, প্রাপ্তি এবং প্রদানের অধিকার সহ বাকস্বাধীনতার অধিকার রক্ষায় সরকারগুলির একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসবের মধ্যে সরকার, সুপরিচিত ব্যাক্তিবর্গ এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করার স্বাধীনতাও অন্তর্ভুক্ত। জনস্বাস্থ্যের কারণে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর অনুমতিযোগ্য বিধিনিষেধগুলি এই অধিকারগুলোকে বিপন্নতায় ফেলতে পারে না।

SHARE