শিক্ষার মান উন্নয়নের পূর্বশর্ত শিক্ষকদের উন্নয়ন

 

।। তাইফুর সরোয়ার ।।

 

শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা। শিক্ষক হলেন জাতি গড়ার মহান স্থপতি। একজন মানুষের সফলতার পিছনে শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একজন আদর্শ শিক্ষক কেবলমাত্র পড়াশোনার ক্ষেত্রে নয়, তিনি ছাত্রকে জীবনে চলার পথে পরামর্শ দেন, উৎসাহ যোগান, সাফল্যের দিনে নতুন নতুন লক্ষ্য স্থির করে দেন। তিনি তাকে শুধুমাত্র জীবনে সফল হওয়া নয়, কিভাবে একজন ভাল মানুষ হতে হয় তাও শেখাবেন। তাইতো শিক্ষক সম্পর্কে এ পি জে আবদুল কালাম বলেছিলেন, “যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয়, তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ ক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য পার্থক্য এনে দিতে পারে। তারা হলেন বাবা, মা এবং শিক্ষক।” শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাঁদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর তারিখ বিশ্ব ব্যাপী পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস।

উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষকতা পেশায় আর্থিক নিরাপত্তা ও সর্বোচ্চ সম্মান থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে সেরা শিক্ষার্থীদের পেশা পছন্দের তালিকায় থাকে শিক্ষকতা পেশা। কিন্তু বাংলাদেশে ঠিক এর উল্টো। দেশে শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদার কথা শুধু মুখে থাকলেও বাস্তবে তা চোখে পরে না। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা পেশা পছন্দের তালিকায় সবার শেষে রাখেন শিক্ষকতা পেশাকে।

বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা দুটি ধারায় পরিচালিত হয়ে আসছে। একটি সরকারি অন্যটি বেসরকারি। আবার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি অংশ এমপিওভুক্ত (মাসিক সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত) আর একটি অংশ এমপিও বিহীন। বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-বৈষম্য আকাশ পাতাল। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারের নির্ধারিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন পেয়ে থাকলেও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিও এর মাধ্যমে মাসিক অনুদান পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে তাদের বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার নামে যে অর্থ দেয়া হয় তা তাদের সাথে উপহাস করা ছাড়া আর কিছুই না। ঈদ, পূজায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা শত ভাগ উৎসব বোনাস পেয়ে থাকলেও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বোনাস পান মাত্র ২৫ ভাগ। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন বিএ, এমএ ডিগ্রিধারী সহকারী শিক্ষক মাসিক যে অনুদান তথা বেতন পেয়ে থাকে তা সরকারী প্রতিষ্ঠানের অষ্টম পাশ পিওন, দারোয়ানের চেয়েও কম। যুগ যুগ ধরে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যকার এই পাহাড়সম বৈষম্য নিয়ে চলছে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। বাংলাদেশই সম্ভবত একমাত্র দেশ যেখানে জাতি গঠনের মহান কারিগর “শিক্ষক”দের ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য রাজপথে নামতে হয়।

দেশে শিক্ষার মান উন্নয়নে সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষকদের মান উন্নয়ন। দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকতা পেশায় আগ্রহী করতে শিক্ষাকতা পেশায় সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বৈষম্য নিরসনে সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে নিয়ে সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি করলে শিক্ষার মান সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসূ হবে।

জাতি গড়ার মহান স্থপতি হলেন শিক্ষক। তাদের মনে অসন্তোষ রেখে শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন আদৌ সম্ভব নয়। দেশের সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়করন করা হলে উপকৃত হবে শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সমগ্র দেশ ও জাতি।

SHARE