মির্জাগঞ্জে প্রথম ভাসমান বেডে সবজি চাষ,সফল কৃষক শাহাজাদা 

 

 

মোঃ সোহাগ হোসেন ঃ

সমতল ভুমিতে সবজি চাষ করে হয়তো অনেকই সফলতা পেয়েছে। হয়েছে লাভবান ও।কিন্তু এই প্রথম নজরে পরলো মির্জাগঞ্জে ভাসমান বেডে সবজি চাষ। এর পূর্বে কখনো এমন পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হয়নি মির্জাগঞ্জে।পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের চত্রা এলাকায় এমন নজির দেখালেন কৃষক শাহাজাদা।
বাড়ির পাশের জমিতে থৈ থৈ পানি। কচুরিপানা ভরে থাকায় বছরের প্রায় ছয় মাস এ জমিতে কোনো ফসল চাষ করতে পারতেন না শাহাজাদা। অথচ এ বছর তিনি জলমগ্ন এ জমির কচুরিপানা স্তূপ করে ভেলার মতো ধাপ তৈরি করে তার ওপর উন্নত পদ্ধতিতে লাউ, ঝিঙে, বরবটি, লালশাক, ডাটাশাক সহ বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। তাকে দেখে আশপাশের মানুষও ভাসমান বেডে সবজি চাষে উৎসাহিত হয়েছেন। কৃষক শাহাজাদা জানান , তিনি মির্জাগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শ ও সহযোগিতায় এ বছর জলাবদ্ধ জমিতে কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করে সবজি চাষে উৎসাহিত হন। তিনি পাশাপাশি পাঁচটি ভাসমান বেডে সবজি চাষ করেছেন। পানির ওপর কচুরিপানা স্তরে স্তরে সাজিয়ে ৩০ হাত লম্বা, চার হাত চওড়া ও তিন হাত উঁচু করে প্রতিটি বেড তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি জানান। মির্জাগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে ভাসমান বেড তৈরির জন্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বীজ, ফেরোমন ফাঁদ ও অন্যান্য উপকরণ দেয়া হয়। এ বেড থেকে এ পর্যন্ত তিনি ব্যাপক পরিমান লালশাক,ডাটাশাক ও বরবটি বিক্রি করেছেন। বর্তমানে লাউ, ঝিঙ্গে,চিচিঙ্গাসহ কয়েকটি সবজি আছে। অল্পতেই এসব সবজি বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি জানান।এ প্রদর্শনী করতে প্রায় ১ লক্ষ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। এ পদ্ধতি তিনি সবজি চাষ করায় সমতল জমি থেকে কয়েক গুন লাভ হবে বলে জানান।পরবর্তী সে এই পদ্ধতিই বর্ষা মৌসুমী সবজি চাষ করবে এবং অন্য কৃষকদের এই পদ্ধতিতে চাষে উৎসাহিত করবে।তিনি আরও বলেন, এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সময় সবজি দেখাশুনা করেছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আরাফাত হোসেন জানান, ভাসমান বেডে সবজি চাষ একটি লাভজনক প্রযুক্তি। এ পদ্ধতিতে জলমগ্ন পতিত জমি চাষের আওতায় আনা যায়। এটি পরিবেশবান্ধব ও জৈব পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে খুব কম সার ও বালাইনাশক ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করা যায়। চাষের খরচ তুলনামূলকভাবে কম। এতে জলাবদ্ধ এলাকার কচুরিপানা ও জলজ আগাছার সদ্ব্যবহার হয়।
তিনি আরো জানান, উপজেলার নিচু এলাকায় খাল ও বিলে বর্ষা মৌসুমে জুন থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় ছয় মাস সাধারণত জলমগ্ন ও পতিত থাকে। এ সময় এসব এলাকার জমি কচুরিপানা ও জলজ আগাছায় পূর্ণ থাকে। জলমগ্ন জমিতে কোনো ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না।
নিচু এলাকার এসব জলমগ্ন পতিত জমি চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যে মির্জাগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যোগে এই প্রথম ভাসমান বেডে সবজি প্রদর্শনী স্থাপনের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।শাহাজাদা একজন শিক্ষিত কৃষক। তাই তাকে এই পদ্ধতিতে সবজি চাষে উৎসাহিত করা হয়।পদর্শনীটি পরিদর্শন করে দেখা যায় সবুজ সবজিতে ভরপুর প্রদর্শনীটি। আশা করছি আগামীতে আরো ব্যাপক এলাকায় ভাসমান বেডে সবজি চাষ করবে কৃষকরা।

SHARE