ভোলায় মেঘনায় বিলীন মদনপুর ইউনিয়ন

 

 

 

মোঃ আরিয়ান আরিফ।।

ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন মধ্য মেঘনায় অবস্থিত। সেখানকার বসবাসকারী মানুষেরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। মেঘনার ভাঙ্গনের ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। মদনপুর ইউনিয়নের ৪,৫,৭,৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডগুলো ভেঙ্গে অনেকটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব ওয়ার্ডে প্রায় চার হাজার মানুষ বসবাস করতো। অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি ও নদী ভাঙ্গনের সঙ্গে লড়াই করে তাদের বসবাস।ভোলার দ্বীপ থেকে মদনপুর ইউনিয়নে যাতায়েতে নদীপথে প্রধান উৎস হলো ইঞ্জিনচালিত নৌকা। নৌকা দিয়ে যাতায়েত করতে প্রায় আধা ঘন্টা সময় লাগে। সরেজিমনে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তা-ঘাট ও ব্রীজ ভেঙ্গে পড়েছে। ভাঙ্গা ব্রীজের উপর সাঁকো বানিয়ে চলাচল করছে এলাকাবাসী। রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় চলাচল করতে পারছেন না তারা। চরবাসীরা জানান, প্রথমে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির রেশ কাটাতে না কাটাতেই আবারও জোয়ারের পানিতে নিঃস্ব হয়ে গেছে তারা। শুকনো মৌসুমে উত্তপ্ত বালুর সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। আর বর্ষা এলে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে জোয়ারের পানিতে কচুরিপানার মতো ভেসে বেড়াতে হয়। রহিমা বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে মদনপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে বসবাস করেছি। হঠাৎ মেঘনার ভাঙ্গনের ফলে পরিবারসহ অন্য ওয়ার্ডে বসবাস করছি। তাও রাত পোয়ালে জামেলার শেষ নেই। বর্তমানে যে ওয়ার্ডে বসবাস করছি সেখানের লোকজন আমাদের বলে আমরা নাকী বহিরাগত। গবাদী পশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে পোহাতে হয় নানান সমস্যা। এটার একটা স্থায়ীয় সমাধান হওয়া দরকার। ইয়াছমিন বেগম জানান, পূর্বে আমি ৫নং ওয়ার্ডে বসবাস করেছি। সেখানে আমরা অনেক সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পেরেছি। মেঘনায় ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে বর্তমানে ৬নং ওয়ার্ডে বসবাস করছি। এখানে আমি হাঁস-মুরগী লালন-পালন করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এর একটা স্থায়ীয় সমাধান হলে আমরা অনেক উপকৃত হবো।
পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফারুক দৌলত জানান, রাক্ষুসি মেঘনার করাল গ্রাসে তার ওয়ার্ডের ৯৫ভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আগে অনেক শান্তিতে বসবাস করেছিলো ওয়ার্ড বাসী। মেঘনায় ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে তার ওয়ার্ডের লোকজন বিভিন্ন ওয়ার্ডে চলে যায়। এতে করে ওই সমস্ত ওয়ার্ডের মানুষদের সাথে প্রায় ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। আমার ওয়ার্ড ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে আমি ৬নং ওয়ার্ডে এসে বসবাস করছি। ৬নং ওয়ার্ডের লোকজনের সঙ্গে প্রায় জামেলা পোহাতে হয়। আমার ক্ষেত্রে এরকম হলে অন্যদের সাথে কি রকম হবে? তিনি আরও বলেন, ভোলা-২ (দৌলতখান বোরহানউদ্দিন) আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক ও দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অঃ দাঃ) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের মাধ্যমে আমার ওয়ার্ডটি ভাগ করে পূর্বপশ্চিমে দিলে আমার বাড়িসহ অনেকের বাড়ি ৫নং ওয়ার্ডে নতুন করে গড়তে পারবে। এতে করে সকলে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য জিয়াবুন নেছার স্বামী জাহাঙ্গীর সরকার জানান, আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে নদী ভাঙ্গন। ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে লোকজন বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে বসবাস করছে। সেখানে প্রায়ই ঝগড়া বিবাধের সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় চলাচল করতে আমাদের বিঘœ ঘটে। কোন মানুষ অসুস্থ হলে তাদের আনা নেওয়া করতে বিরাট সমস্যা হচ্ছে। দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অঃ দাঃ) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ওয়ার্ড ভাঙ্গার বিষয়টি সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মোঃ মাইদুল ইসলাম খান জানান, মদনপুর ইউনিয়নের অস্বাভাবিক জোয়ের পানিতে ক্ষতিগ্রাস্ত ব্রীজ-কালভার্ট ও সড়কগুলোর তালিকা করে আমাদের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ডিপিপি অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলে পরবর্তীতে আমরা মেরামতের কাজ শুরু করবো।

SHARE