ভোলায় মাকে এলোপাথারি কোপালেন নিজের সন্তান

 

 

মনছুর আলম ভোলাঃ

সৎ সংঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সংঙ্গে সর্বনাশ। এই কথাটার বাস্ততা ঘটেছে ভোলায়, ফলে ঘটেছে এক হৃদয় বিদায়ক ঘটনা। যার প্রেক্ষিতে ১৫ বছরের ছেলের মিশন মাকে হত্যার। প্লান অনুযায়ী গত ২৮ আগষ্ট ২০২০ দুপুরে ভোলার দৌলতখান উপজেলার চরপাতা কালু হাওলাদার বাড়িতে গর্ভবতী মাকে হত্যার উদ্দেশ্য হামলা। ঘটনার বিবরনে জানা যায়, প্রবাস ফেরৎ মুক্তা বেগম (২৭) ও মোঃ নজরুলের একমাত্র সন্তান হৃদয় (১৫) পূর্ব থেকেই বখাটে নেশাখোর। তাকে গৃহবন্দী করে রাখে তার পরিবার। ঘটনার দিন দুপুরের খাবার খেয়ে নিজ বাসার এক কক্ষে তার গর্ভবতী মা (৭ মাসের ) ঘুমাচ্ছে, অপর রুমে ছেলে হৃদয় ঘুমাচ্ছে। বাবা নজরুল গেটলক করে বাসার বাহিরে যায়। এই সুযোগে হৃদয় তার বাসার সকল জানালা বন্ধ করে রান্না ঘর থেকে ধারালো দা এনে ঘুমন্ত মাকে মাথার ডানে কান, চোখসহ কোপ দেয়। এতে মা মুক্তা বেগমের ঘুম ভেঙ্গে গেলে চোখ খুলে ছেলের হাতে দা ধরতে গেলে, ছেলে হৃদয় মা তার মায়ের পেটে কোপ দিতে নেয়, তখন মুক্তা বেগম হাত সামনে দেওয়ায় হাতের কনুই বরাবর কোপ দেয় হৃদয় । যাতে রগ কেটে যাওয়ায় বাম হাতের আংগুল ৩টি প্রায় অকেজো। এতেও হৃদয় ক্ষান্ত না হয়ে পূনরায় কোপ দিতে গেলে মা (মুক্তা) তার পেটের সন্তান রক্ষার্থে তার নিজ পিঠ পেতে দেয়,তাতে হৃদয় ৫/৬ টি কোপ দেয় দা দিয়ে। এক পর্যায়ে মায়ের চিৎকারে বাবা নজরুল সহ এলাকাবাসী ছুটে এলে মুক্তাকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত ডাক্তার বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে দ্রত হস্তান্তর করে।উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তাকে ওই রাতে (২৮/০৮/২০২০) শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজেও ভর্তি করে ( রেজিঃ নং- ১১২৮২/১৮৭) র্সাজারী ওয়ার্ডে। পর্যায়ক্রমে চক্ষু বিভাগে, গাইনী ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হয়। মুক্তার ডান চোখ নষ্টের পথে এবং ২২/০৮/২০২০ ইং তারিখে গাইনি ওয়ার্ডে মুক্তার সাত মাসের এক মৃত মেয়ের জন্ম হয়। ২৫/০৮/২০২০ মুক্তার চোখের আংশিক অপারেশন হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মুক্তার ডান হাতের তিনটি আঙ্গুল কাজ করছে না, ডান চক্ষু ফেলে দেয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে নজরূল তার স্ত্রীর চোখ রক্ষার্থে ঢাকা চক্ষু হাসপাতালে যাওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছেন। একান্ত আলাপচারিতায় নজরুল যা বললেনঃ ২০ বৎসর আগে চট্টগ্রামে মিনিবাস চালানোর সুবাদে গার্মেন্টসকর্মী মুক্তার সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্রে পারিবারিকভাবে ২০০০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মাসে কুমিল্লার নূর ইসলামের মেয়ে মুক্তা বেগমের সাথে বিবাহ হয়। বিবাহের পর মুক্তার পরিবারকে সুন্দরভাবে সাজানোর জন্য অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটাতে পাড়ি জমায় ভারতের মরিচা প্রদেশে। ৩ বৎসর কাজ করে দেশে আসে মুক্তা। এর মধ্যে হৃদয়ের জন্ম হয়। হৃদয়ের শিশুকাল শেষ করে মুক্তা ও নজরুল সংসার সুখি করতে ছেলের জীবন সুন্দরভাবে সাজাতে, তারা একসাথে লেবালন পাড়ি জমায়। হৃদয় থাকে তার দাদা, দাদির সাথে ভোলা দৌলতখান। নজরুল ও মুক্তা ২০১৮ সালে দেশে আসে। দেশে এসে দেখে তারা ঠিকই অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়েছে কিন্তু যে সন্তানকে মানুষ করতে এতটা জীবন কষ্ট করলো, সে সন্তান পড়ালেখা করছে না। সম্পর্ক জড়িয়ে পড়েছে নেশাখোরদের সাথে, গড়েছে বখাটে জীবন। ছেলে হৃদয়কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরাতে নজরুল ও মুক্তা চেষ্টা করা শুরু করে। ২০১৮ সালে নজরুল দেশে এসে ছেলেকে নতুন করে স্কুলে ভর্তি করান এবং বাহিরে বখাটেদের সাথে মেলামেশা না করার জন্য চাপ দিয়ে শাসন করলে একাধিকবার প্রতিবাদ করে হৃদয়ের দাদা দাদি। এক পর্যায়ে নাতিকে বাচাতে গিয়ে গর্ভবতী পুত্রবধূকে ধাক্কা দেয়ায় মুক্তার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয় তৎসময়ে। বাধ্য হয়ে নজরুল তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাড়ির বাহিরে আলাদা করে বসবাস করে। নজরুল তার ছেলেকে সু-পথে আনার জন্য বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসায় ধর্না ধরে ভর্তিও করান কিন্তু তাতেও হৃদয় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি। উল্টো চুরি করা শুরু করে। বাধ্য হয়ে হৃদয়কে দৌলতখান থানার সহযোগীতায় খুলনা শিশু-কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে ভর্তি করান। করোনার বন্ধে নিজ এলাকায় পূনরায় হৃদয় বখাটেদের সরাপন্ন হলে হৃদয়ের বাবা মা শাসন করলে আবারো দাদা দাদি শাসনে বাধা দেয়ায় প্রশ্রয় পেয়ে অবৈধ নেশা, চুরিসহ খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে হৃদয় । তখন হৃদয়ের বাবা তাকে বিভিন্ন ডাক্তার, কবিরাজ এমনকি গ্রামের ফকিরদের সরাপন্ন হয়ে হৃদয়কে বাসার ভিতরেই রেখে দেয় বের হতে দেয় না। তারপর হৃদয় ক্ষিপ্ত হয়ে তার ৭ মাসের গর্ভবতী মাকে হত্যার মিশনে এই হামলা করে বলে জানান হৃদয়ের বাবা নজরুল। তিনি কেঁদে কেঁদে জানান এমন ছেলে আল্লাহ যেন কাউকে আর না দেয়। ছেলেকে ভাল করার সকল চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আল্লাহর সহযোগীতার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন বলে জানা নজরুল। হৃদয়ের বাবা বরিশাল শেবাচিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে বসে কাদতে কাদতে এই তথ্য গুলো জানান। তিনি আরো অভিযোগ করেন হৃদয়ের জন্য তার স্ত্রী এখন মৃর্ত্যু সজ্জায়, বেচে গেলেও স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরে আসতে পারবে না। অপরদিকে এক ছেলের জন্য পৃথিবীর আলো দেখতে পায়নি অনাগত দুই সন্তান। কিন্তু তাতে আমার বাবা মায়ের মনে দাগ কাটে নি। উল্টো ঘটনার পর হৃদয়কে বাচাতে মরিয়া হয়ে নাতির সাথে এক সাথে মাদক সেবন করতে থাকে। পাশাপাশি বিভিন্ন আত্তীয় স্বজনের বাসায় স্থান দিয়ে লুকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে।

SHARE