ঈদে ব্যস্ততা নেই ভোলার কামারপাড়ায়

 

 

 

মোঃ আরিয়ান আরিফ।।

আর মাত্র ২ দিন পরই পবিত্র ঈদুল আযহা। এই ঈদে মুসলমানরা হাজার হাজার গবাদিপশু কোরবানি দেন। কিন্তু প্রতিবারের মতো ভোলার কামারপাড়া সরব হয়ে ওঠেনি। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও এই ঈদে কিছু বাড়তি আয়ের আশায় থাকেন কামারেরা।

কিন্তু মহামারি করোনার প্রভাব ও টানা একমাসের অধিক সময় ধরে চলমান বন্যার কারণে ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কামার পল্লীতে নেই চিরচেনা সেই কর্মব্যস্ততার রূপ। ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে অলস সময় পার করছেন ভোলার কামারপল্লীর কারিগররা।

করোনা আর বন্যার প্রভাবে কামারদের টুং টাং শব্দ স্থবির হয়ে পড়েছে। কোরবানির পশু জবাইয়ের সরঞ্জামাদি দা,বটি,ছুরি,চাপাতি ও চাকুসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যস্ততার পরিবর্তে অলস সময় কাটাচ্ছেন কামাররা ।

প্রতি বছরই কয়লা ও হাওয়ায় চুলায় দগদগে আগুনে লোহা গরম করে শৈল্পিক ও নিখুঁত হাতের পরশে তৈরিকৃত যন্ত্রপাতি মেরামত এবং নতুন সরঞ্জামাদি বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়।

একই সাথে করোনা ও বন্যা এই দুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোরবানির পশুর বেচাকেনা কমে যাওয়ায় কামারদের কাজের গতি স্থবির হয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কামাররা। সারা বছর যেমন তেমন ঈদুল আযহা উপলক্ষে কামাররা বাড়তি আয় করে থাকেন।

এ বছরে বাড়তি আয় তো দুরের কথা সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ঈদুল আজহার ১ মাস আগ থেকে কামাররা কর্ম ব্যস্ততায় মেতে উঠতো। ঈদুল আজহার আর মাত্র দুইদিন বাকি থাকলেও আশানুরূপ কাজ হচ্ছে না বলে জানা যায়।

ভোলার কামার সম্প্রদায়ের প্রায় শতাধিক ব্যক্তি জানান,গত বছরের তুলনায় এ বছর অগ্রিম অর্ডার পাওয়া যায়নি। প্রতিদিন দা, ছুরি ও চাপাতি ক্রেতাদের আনাগোনা চোখে পড়ার মত নয়।

নিতাই কর্মকার জানান,দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে বাবা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। বাবা মারা যাবার পর গত ১৭-১৮ বছর যাবত বাবার পেশা আকরে ধরে সংসার চালাচ্ছি। করোনা শুরু হবার পর থেকে আমাদের কাজ মন্দা যাচ্ছে। আশা করেছিলাম এবারের ঈদে ক্ষতি পুষিয়ে নেব। কিন্তু গত বছরের তুলনায় অর্ধেক কাজ করতে পারছি না।

গত বছরে ঈদুল আযহায় ১৫ দিনে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কোরবানির পশু জবাইয়ের সরঞ্জামাদি বিক্রি ও মেরামত বাবদ জমা হয়েছিল। তাতে প্রায় ৮০ হাজার টাকা আয় করেছিলাম। গত বছরে অর্ডারের কাজ পেয়েছিলাম ৩৫ সেট এবারে অর্ডার পেয়েছি ১ সেটের। এ পর্যন্ত আনুমানিক ৮/১০ হাজার টাকার কাজ করেছি।

একই এলাকার ভেশ ও পানেশ কর্মকার জানান, এবারে বেচাকেনার যে অবস্থা তাতে ঈদের পর ঋণ করে সংসার চালাতে হবে।পুর্ব পুরুষেরা এ কাজ করে আসছেন লেখাপড়া করতে পারি নাই তাই এ পেশা ছাড়তে পারছি না। করোনায় আমাদের কাজ কর্ম কমে গেছে। আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ডাল ভাতের জন্য সরকারের সাহায্য সহযোগীতায় এগিয়ে আসার জন্য প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

ভোলা সদর উপজেলার কালিনাথ রায়ের বাজার,তালুকদার ঘাট,আগারপোলা,মাদ্রাসা বাজার,তুলাতুলি,গাজীপুর রোড,গোডাউন, ইলিশা বাজারে ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়।

SHARE