এমাজউদ্দীনের বিদায়ে শোকের মাতম

 

টিপু সুলতানঃ
এমাজউদ্দীন সকল পরিচয় ছাপিয়ে জিনি ছিলেন বাংলার মানুষের আস্তার যায়গা, সর্বপরি একজন ভালো মানুষ। আজ শুক্রবার এই আদর্শ মানুষটি বিদায় নিলেন প্রতারণার বিশ্ব থেকে। তার মৃত্যুতে দেশে শোকের মাতম শুরু হয়েছে। এই মানুষটির মৃত্যুর খবরে ঢাবিতে পড়া ছাত্র শিক্ষকসহ পুরো দেশ শোকে স্তব্ধ হয়ে পরে।
ভোলার বিএনপি নেতা আসিফ আলতাফ তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সববেদনা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ক্ষতি অপুরনীয় বাঙ্গালী জাতি হরালো তাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। রাজনিতি শিক্ষানিতি উভয়েই ছিলেন তিনি একজন আদর্শ মানুষ। তিনি ধার্মীয় একজন আধ্যাতিক মহাপুরুষ ও ছিলেন। মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের প্রসংশিত স্থান দান করুণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ আর নেই। আজ শুক্রবার সকালে বেসরকারি হাসপাতাল ল্যাবএইডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।বিএনপির নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মোহম্মদ রহমতউল্লাহ ও চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আবু নাসের মোহম্মদ রহমতউল্লাহ জানান, রাত আড়াইটার দিকে এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় স্ট্রোক করেন অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। অবস্থার অবনতি হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। পরে ভোর পৌনে ৬টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ ১৯৩২ সালের ১৫শে ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে বেড়ে ওঠেন। শিবগঞ্জের আদিনা সরকারি ফজলুল হক কলেজ ও রাজশাহী কলেজে পড়ালেখা করেছেন।

সরকারি কলেজে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু ড. এমাজউদ্দিনের।
সত্তরের দশকে বৃত্তি নিয়ে কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটি অব অন্টারিও থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পরে দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন। পরে বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। উপাচার্য হওয়ার আগে দুই মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ১৯৯২ সালের ১ নভেম্বর থেকে ১৯৯৬ সালের ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত তিনি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি অবসরে যান। পরে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভে (ইউডা) উপাচার্য হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ তুলনামূলক রাজনীতি, প্রশাসন-ব্যবস্থা, বাংলাদেশের রাজনীতি, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক বাহিনী সম্পর্কে গবেষণা করেন। তার লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক।

লিখিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: রাষ্ট্র বিজ্ঞানের কথা (১৯৬৬), মধ্যযুগের রাষ্ট্র চিন্তা (১৯৪৫)
তুলানামূলক রাজনীতি: রাজনৈতিক বিশ্লেষণ (১৯৮২), বাংলাদেশে গণতন্ত্র সংকট (১৯৯২), সমাজ ও রাজনীতি (১৯৯৩), গণতন্ত্রের ভবিষৎ (১৯৯৪), শান্তি চুক্তি ও অন্যান্য প্রবন্ধ (১৯৯৮), আঞ্চলিক সহযোগিতা, জাতীয় নিরাপত্তা (১৯৯৯), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০০০)।

শিক্ষাক্ষেত্রে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৯৯২ সালে একুশে পদক পান অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ।

SHARE