তজুমদ্দিনে বিধবার জমি দখল করে নিলো শ্রমিকলীগ নেতা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥
ভোলার তজুমদ্দিনে বিবি হাছিনা নামের এক বিধবার জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি টুটুল তালুকদারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সোমবার সকালে তজুমদ্দিন উপজেলা চেয়ারম্যান, নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং তজুমদ্দিন প্রেসক্লাবসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই নারী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শশীগঞ্জ এলাকার মৃত মোঃ ইদ্রিসের ৪ কন্যা ও এক ছেলেকে নিয়ে খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন স্ত্রী বিবি হাছিনা। এরই মধ্যে গত তিন বছর পূর্বে বিবি হাছিনার বাড়ির পাশের মিরাজের স্ত্রী ছালমা বেগম উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি টুটুল তালুকদারের কাছ থেকে সুদে শতকরা ১০টাকা হারে দেড় লক্ষ টাকা নেয়। ওই টাকা লেনদেনের সময় পরিচিতি হিসেবে বিবি হাছিনার স্বাক্ষর নেয় টুটুল।
নির্ধারিত সময়ে ছালমা ওই টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে বিবি হাছিনাকে টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করে টুটুল। পরে বাধ্য হয়ে ছালমা বেগমের স্বামী মিরাজের হোন্ডা টুটুলের হাতে তুলে দেন তিনি এবং নিজের সন্তানদের অসুস্থতাজনিত কারণে দীর্ঘদিন ঢাকায় অবস্থান করেন বিবি হাছিনা। এ সুযোগে টুটুলের বাড়ির কাছে থাকা বিবি হাছিনার স্বামীর শশীগঞ্জ মৌজার জেএল নং-৪৭ এর এসএ-৪০৭, ৪৫০ ও ৯৫৬নং খতিয়ানের ৩৯৪২, ৩৯৪৩, ৩৯৪৪ ও ৩৯৪৫ নং দাগের ১১২শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে নেয় টুটুল। এ বিষয়ে স্থানীয় গনমান্যদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন বিচার পাননি এ অসহায় বিধবা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই জমি থেকে অবৈধ বোমা মেশিন দিয়ে মাটি বিক্রি করাসহ স্টাম্পের মাধ্যমে ওই জমির কিছু অংশ অন্যত্র বিক্রি করেছনে টুটুল তালুকদার। বর্তমানে সেখানে ঘর তুলে বসবাস করছে ৬টি পরিবার। অবৈধ বোমা মেশিনে অন্যত্র মাটি নেয়ার ফলে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন পার্শ্ববর্তী জমির মালিকরা। তবে এ বিষয়ে ভয়ে কেউ মুখ খুলেননি।
এদিকে ওই জমিতে বসতঘর তুলে বসবাসরত ৬টি পরিবারের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, টুটুলের কাছ থেকে জমি কিনেছেন তারা। তবে কোন দলিলাদি না থাকলেও স্টাম্প আছে বলে জানান তারা।
ওই জমির সাবেক চাষা ছালাউদ্দিন বলেন, ইদ্রিস মিয়ার এ জমি দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ চাষ করেছেন তিনি। তবে হঠাৎই টুটুল এসে তাকে উৎখাত করে দেয়। ঝামেলার ভয়ে জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
বেদখলকৃত জমির পার্শ্বের বাড়ির বাসিন্দা ও টুটুল তালুকদারের মামা সেলিম তালুকদার বলেন, দীর্ঘ ৩০বছর যাবৎ এই জমি ইদ্রিস কে ভোগদখলে দেখেছি। ইদ্রিসের মৃত্যুর পর তার পরিবারকেও ভোগদখলে দেখেছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টুটুল তালুকদার বলেন, আমি বিবি হাছিনা বেগমের স্বামী ইদ্রিস মিয়ার জীবদ্দশায় তার কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছি এবং সেই দলিলও আছে। স্বামীর মৃত্যুর পর বিবি হাছিনাও স্টাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা নিয়েছেন। তবে ছালমা ও তার স্বামী মিরাজকে চিনেন না বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে তজুমদ্দিন উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন দুলাল বলেন, বিধবা হাছিনা বেগমের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উভয় পক্ষকে ডেকে ফয়সালা দেয়ার চেষ্টা করবো।
তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও আল মামুন বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। আগামী ১ জুলাই উভয় পক্ষকে ডেকে এবং বক্তব্য শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

SHARE