ভোলাবাসী তোমাকে কোন দিন ভুলবো না

 

মোঃ আরিয়ান আরিফ।।

মোশারেফ হোসেন শাজাহান একটি নাম একটি ইতিহাস। তিনি ১৯৩৯ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর ভোলার ঐতিহ্যবাহী মিয়াঁ পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন।২০১২ সালের ৫ মে তিনি ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন।৫০ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। সেই ১৯৬৫ সালে আকস্মিকভাবে সম্পৃক্ত হন রাজনীতির সঙ্গেঁ। একধাপে এমপিএ নির্বাচিত হওয়ার মধ্যদিয়ে। তাও আবার সম্মিলিত বিরোধী দলীয় এমপিএ। আইউব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের সিঁড়ি বেয়ে আইউব মুসলিম লীগের ডাক সাইটে প্রার্থীকে হারিয়ে কিশোর শাজাহান মাত্র সাড়ে ২৫ বছর বয়সে এমপিএ নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই থেকে শুরু।

দ্বীপজেলা ভোলার প্রায় সকল উন্নয়ন অগ্রগতির সঙ্গেঁ মোশারেফ হোসেন শাজাহানের নামটি স্মৃতিময় হয়ে রয়েছে। জীবনের সূচনা লগ্নে তরুন বয়সে তিনি নাটক, সাংবাদিকতা, আবৃতি, ফটোগ্রাফিকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। ছাত্রাবস্থায়ই রচনা করেন নাটক ‘নীর ভাঙ্গাঁ ঝড়’ সেই নাটকে তিনি নিজেও অভিনয় করেছেন। ভোলা থেকে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের পৃষ্ঠপোষকতায় সেই পাকিস্তান আমলে ‘পাক্ষিক মেঘনা পত্রিকা’ প্রকাশ করেছিলেন। এ পত্রিকাটির কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর উদ্যোগে পাকিস্তান আমলে ১৯৬৮ সালে সর্ব প্রথম ভোলা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ছিলেন, সেই প্রেসক্লাবের সভাপতি, প্রবীন সাংবাদিক এম এ তাহের সাহেব ছিলেন সম্পাদক। ১৯৮০ সালের তিনিই সর্বপ্রথম সাপ্তাহিক ভোলাবাণী প্রকাশের উদ্যোগ নেন। আমার মতো অনেকেই তার সাক্ষী ও সহকর্মী হিসেবে রয়েছেন। ভোলা থেকে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের জন্য ৯১ সালে তিনিই আমাকে সর্বপ্রথম উৎসাহিত করেন। এক কথায় বলা যায়, ভোলার সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং সংবাদপত্রের বিকাশের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসামান্য ও অনবদ্য।

বাংলাদেশের অন্যতম পিছিয়ে পরা চলাঞ্চল ছিল ভোলা দ্বীপ। ১৯৬৫ সালে এমপিএ হয়ে তিনিই সর্বপ্রথম এ দ্বীপে উন্নয়নের দ্বীপ জ্বালান। ভোলা শহরের রাস্তাঘাট, ব্রীজ তাঁর সময়ই প্রথম পাকা হওয়া শুরু করে। তিনিই সর্বপ্রথম ভোলায় বিদ্যুৎ চালু করেন। তাই এক হিসেবে তাকেই বলা যায় ভোলার উন্নয়নের মূল স্থপতি। ১৯৭৯ সালে তিনি বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট জিয়া তাকে উপমন্ত্রীর মর্যাদায় বৃহত্তর বরিশালের জেলা উন্নয়ন সমন্বয়কারী মনোনীত করেন। এসময় তিনি ভোলা তথা দেশের উন্নয়নের জন্য সদা উদগ্রীব ছিলেন। সরকারী দায়িত্বের পাশপাশি তিনি ‘বন্ধুজন’ প্রতিষ্ঠা করে মানব কল্যাণে পদযাত্রা আয়োজন করেন। যে পদযাত্রা উদ্বোধন করেছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সহ ৪জন মন্ত্রী। পদযাত্রা শেষে ভোলায় সংবর্ধনায় এসেছিল তৎকালীন মন্ত্রী পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস। পরবর্তীতে বন্ধুজন পরিষদের মাধ্যমে তিনি অনেক মানব কল্যান ও জনসেবা মূলক কাজ করেছেন। ভোলার সকল জনগনই তার সাক্ষী।

সর্বশেষ ধর্মমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। এসময় তিনি ভোলার প্রায় ১০ হাজার কুঁড়ে ঘরকে টিনের ঘরে পরিনত করার কাজটি করেছেন। এ কাজটি করতে অনেক টাকা সংগ্রহ করতে হয়েছে। যার রেশ তাকে টানতে হয়েছে খুবই করুন ভাবে। তবে সকল ঝুঁকি নিয়ে কষ্ট করে তিনি যাদেরকে কুঁড়ে ঘর থেকে টিনের ঘরে উত্তরন ঘটিয়েছেন তারা কিন্তু ভোলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের স্মারক স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। আজকে ভোলার গ্রামে গঞ্জে হাজারো খুজলেও কুঁড়ের ঘরের অস্থিত্ব পাওয়া যায় না। মূলত এ অবদানের মূল কৃতিত্ব তারই। একজন দেশপ্রেমিক সৎ রাজনীতিবিদের প্রতিচ্ছবি ছিলেন মোশারেফ হোসেন শাজাহান। একজন ভদ্রলোক বলতে যা বোঝায় তিনি ছিলেন তা-ই। একজন মানব কল্যাণে নিবেদিত মানুষ ছিলেন মোশারেফ হোসেন শাজাহান । অসম্প্রাদায়িক আধুনিক মনস্ক, ধার্মিক, স্বজন ব্যাক্তির প্রতিচ্ছবি মোশারেফ হোসেন শাজাহান। আমরা ভোলাবাসী তোমাকে কোন দিন ভুলবো না।

SHARE