করোনায় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজন সঠিক পুষ্টি

 

 

তাইফুর সরোয়ারঃ-

করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশেও ক্রমেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এক দিকে এর চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা যেমন দুরূহ তেমনি আমাদের মতো জনবহুল ও অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থার দেশে করোনার সংক্রমণ মোকাবিলা করা আরও জটিল। এই ভাইরাস মোকাবেলায় এখন পর্যন্ত কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি আবিস্কৃত না হওয়ায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।

করোনাসহ যে কোন ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর খাদ্য বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা এর প্রধান পুষ্টিবিদ ও পুষ্টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামসুন্নাহার নাহিদ।

একজন পুষ্টিবিদ হিসেবে আমার এই লেখার বিষয়— কীভাবে ইমিউনিটি বা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে যেকোনো ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা করা যায়। প্রথমেই প্রয়োজন ব্যক্তিগত সচেতনতা গড়ে তোলা। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী উপায়গুলো মেনে চলার পাশাপাশি প্রয়োজন প্রত্যেকের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অর্থাৎ ইমিউন সিস্টেম বাড়িয়ে তোলা, যাতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের যে মারাত্মক লক্ষ্মণ অর্থাৎ রেসপিরেটরি এবং গ্যাস্ট্রোইনটেসটিন্যাল সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করা যায়।

সহজভাবে বললে ভাইরাস হলো প্রোটিন কোটের একটা খারাপ বিষয়, যার কারণে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের মত এমনকি (নতুনভাবে) মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে, বিশেষ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে। এই ভাইরাসটি আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তাই শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন খেতে হবে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হলো কিছু ভিটামিন, খনিজ (মিনারেল) ও এনজাইম, যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালের (দেহের কোষ, প্রোটিন ও ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করে) বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে, শরীরে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

পাঁচ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: মূলত পাঁচ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এগুলো হলো: ভিটামিন-এ, সি, ই, বিটা-ক্যারোটিন, লাইকোপেন, লুটেইন সেলেনিয়াম ইত্যাদি।

পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার যেগুলো বেশি করে খেতে হবে—

সবজি: লেবু, করলা (কোয়ারসেটিন, কেয়েমপফেরল, বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ), বেগুনি বা লাল বাঁধাকপি, বিট, ব্রকোলি, গাজর, টমেটো, মিষ্টি আলু, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি।

শাক: পালংশাক এবং অন্যান্য সবুজ শাক।

ফল: কমলালেবু, পেঁপে, আঙুর, আম, কিউই, আনার, তরমুজ, বেরি, জলপাই, আনারস ইত্যাদি।

মসলা: আদা, রসুন, হলুদ, দারুচিনি, গোলমরিচ।

অন্যান্য: সিমের বিচি, মটরশুঁটি, বিচিজাতীয় খাবার, বার্লি, ওটস, লাল চাল ও আটা এবং বাদাম।

টক দই (প্রোবায়োটিক): এটি শ্বাসযন্ত্র ও গ্যাস্ট্রোইনটেসটিন্যাল সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করে। অন্য দিকে শাক-সবজি, ফল, বাদামজাতীয় খাবার শরীরে নিউটোভ্যাক্স ভ্যাকসিনের অ্যান্টিবডি প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, যা স্টেপটোকোক্কাস নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সক্রিয় ভুমিকা রাখে।

চা: সবুজ চা (গ্রিন টি) ও ব্ল্যাক টিতে এল–থিয়ানিন ও ইজিসিজি নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা আমাদের শরীরে জীবাণু প্রতিরোধের যৌগ তৈরি করে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

যেসব খাবার বাদ দিতে হবে:

● কার্বনেটেড ড্রিংকস, বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, তামাক, সাদাপাতা, খয়ের—এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় বাধা দিয়ে ফুসফুসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

● ঠান্ডা খাবার, যেমন আইসক্রিম, চিনি ও চিনির তৈরি খাবার ভাইরাসের সংক্রমণে সহায়তা করে।

এ ছাড়া…

● ভিটামিন বি-৬, জিংক জাতীয় খাবার (বিচিজাতীয়, বাদাম, সামুদ্রিক খাবার, দুধ ইত্যাদি) বেশি খেতে হবে।

● স্বল্প পরিমাণের ঘুম শরীরে কর্টিসল হরমোনের চাপ বাড়িয়ে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।

● অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের খুব ভালো কাজ পেতে হলে খাবার রান্নার সময় অতিরিক্ত তাপে বা দীর্ঘ সময় রান্না না করে পরিমিত তাপমাত্রায় রান্না করতে হবে।

● কিছু খাবার যেমন ফল, লেবু, সালাদ ইত্যাদি তাজা অবস্থায় সরাসরি খাওয়া ভালো।

● সামগ্রিকভাবে উদ্ভিজ্জ খাবারই হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সবচেয়ে ভালো উৎস। বিশেষ করে বেগুনি, নীল, কমলা, ও হলুদ রঙের শাক-সবজি।

এই লেখার উদ্দেশ্য সঠিক পুষ্টির চাহিদা পুরণ করে প্রত্যেকের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করা, যাতে শুধু করোনা (কোভিড–১৯) নয়, সব ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা করতে আমরা ব্যক্তিগতভাবে সক্ষম হতে পারি।

SHARE