করোনায় শিশুর মানসিক বিকাশ

 

 

তাইফুর সরোয়ারঃ-

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা। চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি থাকতে থাকতে শিশুরাও হাঁপিয়ে উঠছে। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে তাদের মানসিক বিকাশ। এমতাবস্থায় শিশুদের মানসিক চাপ মুক্ত রাখতে করণীয় প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশে সেটি প্রচার করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। পাঠকদের জন্য মানসিক চাপ মুক্ত রাখার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘র নির্দেশিকা তুলে ধরা হল-

যে কোন মানসিক চাপে শিশুরা বড়দের চাইতে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়; তারা ববা-মাকে আকড়ে ধরে রাখতে চায়, উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে, নিজেকে গুটিয়ে রাখে, রাগ করে, অস্থির হয়ে উঠে কিংবা বিছানায় প্রসাব করে। শিশুর মানসিক চাপজনিত এই প্রতিক্রিয়াগুলোর প্রতি আপনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন , তাদের কথাগুলো মন দিয়ে আন্তরিকতার সাথে শুনুন, তাদেরকে একটু বেশি ভালোবাসা দিন এবং তাদের প্রতি মনোযোগী হোন।

বিরুপ পরিস্থিতিতে শিশুরা বড়দের ভালোবাসা আর মনোযোগ একটু বেশি চায়। এই সময় আরেকটু বেশি সময় দিয়ে তাদের প্রতি মনোযোগী হোন। শিশুদের কথাগুলো মন দিয়ে শুনুন, তাদেরকে আশ্বস্ত করুন এবং তাদের প্রতি সদয় হয়ে কথা বলুন। যদি সুযোগ থাকে তবে শিশুটিকে খেলতে দিন এবং তাকে চাপমুক্ত রাখুন।

যতদূর সম্ভব, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সকল পর্যায়ে শিশুকে তার মা-বাবা এবং পরিবারের সাথেই রাখুন এবং তাদেরকে পরিবার বা যত্ন প্রদানকারীদের কাছ থেকে আলাদা করা থেকে বিরত রাখুন। হাসপাতালে ভর্তি, কোয়ারেন্টাইন বা যে কোন কারণে যদি আলাদা করতেই হয় তবে টেলিফোন বা অন্য মাধ্যমের সাহায্যে যোগাযোগ রক্ষা করুন এবং শিশুদের নিয়মিত আশ্বস্ত করুন।

প্রতিদিনকার নিয়মিত রুটিন আর পরিকল্পনামাফিক কাজগুলো যতদূর সম্ভব আগের মতই বজায় রাখার চেষ্টা করুন অথবা প্রয়োজন হলে নতুন পরিবেশে নতুন রুটিনমত কাজ করে যেতে শিশুদের সাহায্য করুন; যেমন পড়ালেখা করা, নিরাপদে খেলা এবং বাড়তি চাপমুক্ত থাকা।

যা হচ্ছে সে বিষয়েয শিশুকে তার বয়স উপযোগী করে প্রকৃত সত্য তথ্য প্রদান করুন , তাদেরকে প্রতিকূল পরিস্থিতির ব্যাখা দিন  কিভাবে সে নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে পারবে এবং সংক্রমণ থেকে দূরে থাকবে সেগুলো সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলুন।

সংক্রমণের পরিণতি সম্পর্কে তাকে আগাম তথ্য জানিয়ে রাখুন এবং শিশুর নিরাপত্তা বিষয়ে তাকে আশ্বস্ত করুন। যেমন- শিশু বা তার পরিবারের কেউ যদি অসুস্থ বোধ করে এবং হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় তবে সেটি শিশুকে আগে থেকে জানিয়ে দিন, সেই সাথে জানান যে এতে আতংকিত হবার কিছু নেই, তাদের সুস্থতার জন্য চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ঘরবন্দি অবস্থায় থাকতে গিয়ে শিশুদের মধ্যে মানসিক অবসাদ তৈরি হতে পারে, যা তাদের মনোজগতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ভয় যেন শিশুদের মনকে ঘিরে ধরতে না পারে সেদিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে। শিশুরা যাতে একটি মানসিক চাপমুক্ত পরিবেশ পায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। অন্যান্য সময় শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য অভিভাবকরা তেমন একটা সুযোগ পান না। এখন শিশুদের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত যাতে আনন্দময় হয়। এছাড়া তাদের একঘেয়েমি কাটাতে ইনডোর খেলার ব্যবস্থা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার বলেন, দীর্ঘ সময় বাইরে না যাওয়ার ফলে শিশুরা ভয় পেতে পারে, বিরক্ত হতে পারে, রাগ করতে পারে, হতাশ হতে পারে, দুষ্টামি বেড়ে যেতে পারে। এটা স্বাভাবিক। তাই অযথা বাচ্চাকে বকাঝকা না করার জন্য অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অতিরিক্ত বকাঝকা শিশুকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দিতে পারে। এতে করে এই কঠিন সময় আরো দুর্বিষহ হতে পারে। অন্য সময় ব্যস্ততার কারণে শিশু মা-বাবাকে কাছে পায় না। এই সুযোগটা কাজে লাগাতে চেষ্টা করা উচিত। এতে করে দেখা যাবে শিশুর একঘেয়েমিও কাটবে, বাবা-মার সঙ্গে শিশুর বন্ধনও বাড়বে।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের উপপরিচালক সাবিরা সুলতানা নূপুর বলেন, শিশুদের আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার এটি একটি সুযোগ। এই সুযোগে নতুন ছবি আঁকা, নতুন গান বা নাচ তুলে নেয়া কিংবা যার যেটিতে আগ্রহ তাকে প্রাধান্য দেয়া যেতে পারে। আরেকটি দিকে বিশেষ নজর দেয়া দরকার। পরিবারের সবাই দীর্ঘ সময় একসঙ্গে অবস্থানের কারণে পারিবারিক সহিংসতা বাড়তে পারে। বাড়তে পারে শিশুর প্রতি শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের হারও। তাই সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদের।

এক সময় করোনার অভিশাপ থেকে মুক্তি মিলবে নিশ্চয়ই। বন্দি পৃথিবী থেকে মানুষ আবার ফিরে পাবে মুক্ত পৃথিবীর স্বাদ। করোনা পরিস্থিতিতে শিশুদের সাথে একটু ভালো ব্যবহার, একটু বাড়তি মনোযোগ, একটু অতিরিক্ত যত্নই পারে শিশুদের গৃহবন্দির এই কয়েকটা দিনকে আনন্দময় করতে।

SHARE