করোনার মরণ থাবার ঝুঁকিতে, দুমরে মরছে নিত্য আয়ের মানুষগুলো”

মোঃ আশরাফুল আলমঃ
করোনার মরণ থাবার ভয়ে চরম বিপাকে ভোলার কর্মহীন ঘরবন্দী খেটে খাওয়া নিত্য আয়ের মানুষগুলো। এদের জমানো যে পুঁজি ছিল তাও এখন শেষ।
এসব লোকজন না পারছে ঘর থেকে বের হয়ে কর্মে ফিরতে, না পারছে অন্যদের মতো ত্রাণের জন্য এদিক ওদিক ছুটতে। আয়-রোজগার বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে কাটছে এদের দিন। ঘরবন্দি পরিস্থিতি যত দীর্ঘ হচ্ছে এদের অবস্থা ততই খারাপ হচ্ছে।
হতদরিদ্রদের নিয়ে ভাবলেও কর্মহীন এসব নিত্য আয়ের মানুষগুলোকে নিয়ে কেউ ভাবছেন না বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
ভোলা সদরের আশ-পাশের এলাকায় রয়েছে এসব নিত্য আয়ের মানুষের বসবাস। এদের কেউ স-মিলের শ্রমিক, রিক্সা-ভ্যান চালক, সিএনজি চালক, সেলুন ব্যবসায়ী,কেউ কেউ ঘাটে বোঝা ধরার কাজ করেন, কেউ আবার গণপরিবহণের শ্রমিক এবং হোটেল-রেস্তোরায় কাজ করেন।
এদের অনেকেই এখন পর্যন্ত পায়নি কোনো ত্রান সহযোগিতা । করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় অনেক কষ্টে দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন বলে জানান তারা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ও জনসমাগম এড়াতে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারী ছুটি চলছে।
করোনা বিস্তার রোধে প্রায় ২৫ দিন ঘরে থাকার কারণে ভোলার খেটে খাওয়া বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষগুলো কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
করোনা মোকাবেলায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারী যে খাদ্য সহায়তা কর্মসুচী তা এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
সোমবার সকালে কথা হয় খলিফা পট্টি মসজিদ সংলগ্ন চায়ের দোকানদার মুছা ভাইর সাথে। চায়ের দোকান করে সংসার চালান তিনি।
কাজ না থাকায় আয়-রোজগার বন্ধ। হাতে যা ছিল তা শেষ, ঘরে খাবার নাই এখন কিভাবে সংসার চালাবো তা নিয়ে চিন্তিত। সরকার থেকে কত জায়গায় চাল-ডাল দিচ্ছে আমি পায়নি। আমার এ কষ্টের কথা বলবো কার কাছে ?
কথা হয় রিক্সা চালক কামালের সাথে। সে বলে,
করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার আমাদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্ত রিক্সা না চালালে আমরা খামু কি ? তাই মাঝে মধ্যে রিক্সা নিয়ে বের হই। কিন্ত যাত্রী কম আবার পুলিশের তাড়া তো আছেই!
আমার সংসারে ৫ জন খানেওয়ালা। আমার একার আয়ে চলে সংসার। ঘর থেকে বের না হয়ে কি করমু। পেটতো চালাতে হবে। শুনেছি এর আগে ভোলার বিভিন্ন জায়গায় চাল-ডাল দিয়েছে। কিন্ত আমি তা পায়নি।
ভ্যান চালক লোকমান বলেন, তার একার আয়ে চলে ৫/৬ জনের সংসার। সরকার তো আমাদের ভালোর জন্যই ঘরে থাকতে বলেছে। কিন্ত ঘরে থাকলে পেট চলবে কি করে ? আমাদেরকে যদি খাবার দিত তাহলে ঘরে থাকতাম।পেটের দায়ে ভ্যান নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছি। তাও আবার পুলিশে দাবড়ায়। ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি।
মুছা,কামাল,লোকমানের মতো খেটে খাওয়া সকল মানুষগুলোর একই কথা।
পুলিশের হয়রানির মধ্যেও পেটের দায়ে অনেক ঝুঁকির মধ্যে রিক্সা নিয়ে কেউ কেউ ঘর থেকে বের হন । এ পরিস্থিতিতে কীভাবে সংসার চালাবে তা নিয়ে চিন্তিত বলে জানান তারা।

SHARE