আলামত ভালো নয়

শামীমুল হকঃ

চারদিকে শুধু মন খারাপের খবর। ঘরে বাইরে আতঙ্ক। বাড়ির একপাশে নারায়ণগঞ্জ। সেখানে চলছে লকডাউন। অন্যপাশে বাসাবো এলাকাও ডেঞ্জার জোন। এইমাত্র খবর এলো লাগোয়া মহল্লা পাটেরবাগের এক বাড়িও নজরদারিতে। মাঝখানে রায়েরবাগ। কোয়ারেন্টিনে আছি আতঙ্ক নিয়ে।কিছু সময় আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রী গত চব্বিশ ঘন্টায় করোনার আপডেট জানিয়েছেন। এ সময়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গতকাল থেকে ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়াতে কড়াকড়ি করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। আসলেই আলামত  ভাল নয়। কাল কি হবে কেউ জানেনা। ভাল যে নয় তা নিশ্চিত। তারপরও মানুষের হুঁশ হচ্ছে না। ফেসবুকে দেখলাম এক র‍্যাব কর্মকর্তার মুখোমুখি এক যুবক। এক মটরসাইকেলে তিনজন চড়ে মহাসড়কে ঘুরছিল। র‍্যাব কর্মকর্তার সিগন্যাল অমান্য করে মটরসাইকেল ছুটছিল। র‍্যাব কর্মকর্তার গাড়িও ছুটে পেছন পেছন। পাঁচ কিলোমিটার ছুটার পর মটরসাইকেলকে ধরতে সক্ষম হন র‍্যাব কর্মকর্তা। যুবককে প্রশ্ন করা হয় সিগন্যাল অমান্য করলেন কেন? কোন জবাব নেই। বাইরে বেরুলেন কেন? সোজা উত্তর- ঘরে থাকতে ভাল লাগেনা। আর কি অপরাধ করেছেন? এক মটরসাইকেলে তিনজন উঠেছি। জেরা দেখছি আর ভাবছি এই র‍্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনীতে দেশের জন্য কাজ করছে। মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ। শুধু কাজই করছেনা, ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। আর আমরা সড়কে মহাসড়কে তামাশা করছি। রায়েরবাগ মোড়ের চৌধুরী ফার্মেসির মালিক বশির আহমেদ বললেন- ভয়ে দোকান খুলিনা। কারণ পাশই চা- সিগারেটের দোকান। সবসময় ভিড় লেগে থাকে। আর কিছুক্ষণ পরপর পুলিশের হুইসেল শুনলেই দৌঁড়ে আমার ফার্মেসিতে ঢুকে পড়ে লোকজন। পুলিশকে দেখায় ওষুধ কিনতে এসেছে। কোনভাবেই তাদের বুঝাতে পারিনি। বাধ্য হয়ে নিজেই ফার্মেসি বন্ধ করে দিয়েছি। আরেক দোকানি বলেন- কোন কাজ নেই, তারপরও মানুষ এসে খালি খালি উঁকি দেয়। জিজ্ঞেস করলে বলে, সড়কে মানুষ চলে কিনা দেখছি। কোন ভয়, ডর নেই তাদের। জাপানের বিজ্ঞানীরা আরো ভয়াবহ তথ্য দিয়েছে। শুধু সংস্পর্শে এলেই করোনা আক্রান্ত হবে তা নয়। কাছাকাছি কথা বলার মাধ্যমেও করোনা ছড়াতে পারে। অথচ আমরা গোল হয়ে একসঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি। গল্প করছি। লুডু খেলছি। ক্যারাম খেলছি। তাস খেলছি। চায়ের দোকানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে গল্প করার পাশিপাশি চা খাচ্ছি। কোন সতর্কবানী আমাদের রুখতে পারছেনা। দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এটা আলোচনাও করছি। কিন্তু মানছিনা কোন নিয়ম কানুন। আজকের খবর নতুন করে আরো ২৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। এই যে আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তির দিকে ছুটছে কোথায় গিয়ে তা থামবে? একবারও কি ভাবছি। ইতিমধ্যে ৯ জেলা আক্রান্ত হয়েছে। আরো কয়ক জেলা রয়েছে ঝুঁকিতে। মাদারীপুরের অবস্থা ভয়াবহ। এক বৃদ্ধের মৃত্যুর পর আলোচনায় এখন তিনি। একা কয় জায়গায় ছড়িয়ে গেছেন করোনা? চোখের সামনে দেখছে করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফন কিভাবে হচ্ছে? স্বজনরা কেউ পাশে নেই। কোনরকমে মাটিচাপা দেয়ার মত অবস্থা। এ দ্শ্য দেখেও বুক কাঁপেনা যাদের তাদের কিভাবে আটকানো যায় ঘরে? বিশ্ব মহামারী করোনার আসল রুপ দেখা দিচ্ছে বাংলাদশে। ইতালি, আমেরিকা, ফ্রান্স, স্পেনের করুণ পরিনতি দেখেও একবার ভাবছিনা, বাংলাদেশে এমনটা হলে কি ভয়াবহ অবস্থা হবে। আর এমনটা যেন না হয় সে ব্যবস্থা অবলম্বন করার চেয়ে কেউ কেউ যেন করোনাকে আমন্ত্রন জানিয়ে আনতে যাচ্ছে রাস্তায়। এ মুহুর্তে তাদের সুবুদ্ধির উদয় হউক। বাংলাদেশ নিরাপদে থাকুক। এখানেই ক্ষান্ত হউক করোনায় মৃত্যু।

SHARE