করোনা ভাইরাস নিয়ে অপপ্রচার, জনমনে চরম আতংক।

মো:-আমজাদ:-
প্রায় সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস রোগ (কোভিড-১৯) ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও ইতালি ফেরত ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে।
করোনা ভাইরাস যেভাবে দ্রুত বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ঠিক তেমনিভাবে সংবাদপত্র, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইত্যাদিতে বিভিন্ন ধরনের পোস্টও ছড়িয়ে পড়ছে। দুর্ভাগ্যক্রমে তথ্যের অবিরাম প্রবাহের কারণে গুজব ও মিথ্যা তথ্যের মধ্যকার পার্থক্য করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
যাই হোক, করোনা ভাইরাস নিয়ে বর্তমানে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়া বেশকিছু গুজব ও মিথ্যা তথ্যকে সকলের সামনে প্রকাশ করছি।
মাস্ক করোনা ভাইরাস থেকে আপনাকে মুক্ত রাখবে
করোনা ভাইরাস ছড়ানোর পর থেকেই সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্কের সংকট ও মূল্য বেড়ে গেছে। বিশেষ করে আমাদের দেশে এই মাস্ক নিয়ে হাহাকার একটু বেশিই শুরু হয়েছে। যারা সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক কেনার জন্য অর্থ ব্যয় করছেন তাদের জন্য হতাশা রয়েই গেছে। কারণ সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে না।
পাতলা সার্জিক্যাল মাস্কে ভাইরাস ঠেকানোর মতো কোনো কিছু ব্যবহার করা হয় না। তবে এটি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় নির্গত জলীয় ফোঁটাকে আটকে দিতে পারে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা কমে যেতে পারে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এন৯৫ মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা এটাও ব্যবহারে ততটা ভরসা পান না। কারণ এই মাস্ক একটানা দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা কষ্টকর। এছাড়াও বেশকিছু কারণ ও সমস্যা থাকায় ‘সেন্টারস ফর ডিজিস প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল’ মাস্ক সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য নিরুৎসাহিত করছে।
ফ্লুয়ের চেয়ে কম ছড়াচ্ছে
অনেকেই প্রচার করছেন করোনা ভাইরাস ফ্লুয়ের চেয়ে ধীরগতিতে ছড়াচ্ছে। কিন্তু বিষয়টা মোটেও তেমন নয়। এটি ফ্লুয়ের চেয়ে একটু দ্রুতই ছড়াচ্ছে। সাধারণত একজন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি তার চারপাশের ২ দশমিক ২ জন সুস্থ ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে। অপরদিকে ফ্লু ১ দশমিক ৩ জন ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে। তাছাড়া এখনো করোনা ভাইরাসের কার্যকর কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি। তাই আপাতত এটিকে ফ্লুয়ের চেয়ে দুর্বল বলা যাচ্ছে না।
সাধারণ সর্দির ভাইরাস রূপান্তরিত হয়েছে
অনেকেই মনে করেন সাধারণ সর্দির ভাইরাস বা জীবাণুই রূপান্তরিত হয়ে বর্তমানে ছড়ানো করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) হয়েছে।
বাস্তবে নোভেল করোনা ভাইরাস হচ্ছে অনেক বড় গোত্রের অন্তর্গত ভাইরাস। এই ভাইরাস অন্যান্য করোনা ভাইরাসের সঙ্গে অনেক সাদৃশ্যপূর্ণ। যেখানে অন্য চারটি করোনা ভাইরাস ২২৯ই, এনএল৬৩, ওসি৪৩ ও এইচকেইউ১ সাধারণ সর্দির জন্য দায়ী। তবে এগুলো থেকে পরিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমানের করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে বলা যায় না।
গবেষণাগারে করোনা ভাইরাস তৈরি করা হয়েছে
এটি একটি বড় ধরনের গুজব বলা যায়। কারণ গবেষণাগারে করোনা ভাইরাস তৈরি করা হয়েছে এই কথার পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে অনেকটা জোর দিয়েই বলা যায়, এর আগে ছড়ানো সার্স, মার্স করোনা ভাইরাসের মতোই বর্তমানের করোনা ভাইরাস বাদুড় থেকে ছড়িয়েছে।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে নিশ্চিত মৃত্যু
করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত এমন কথা সত্য নয়। সাধারণত শতকরা ৮১ ভাগ রোগী মৃদু করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত থাকেন। শতকরা ১৩ দশমিক ৮ ভাগ রোগী মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হন। তাদের শ্বাসকষ্ট হয়, অক্সিজেন দিতে হয়। এছাড়াও ৪ দশমিক ৭ ভাগ রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যায় এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়। এ পর্যন্ত এ রোগে মৃত্যুহার শতকরা ২ দশমিক ৩ ভাগ। আশার কথা হচ্ছে এ পর্যন্ত ৬০ হাজারের অধিক রোগী সুস্থ হয়েছেন।

পোষাপ্রাণীর মাধ্যমে ছড়ায়
এ পর্যন্ত পোষাপ্রাণীর মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাছাড়াও গবাদিপশু, ব্রয়লার মুরগি, দেশি মুরগিসহ আমাদের দেশে খাদ্য হিসেবে পরিচিত কোনো প্রাণী থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ায় না।
চীনের সংবাদপত্র ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ থেকে জানা যায়, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মহিলার শরীর থেকে কুকুরে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করেছিল। কিন্তু কুকুরে কোনো রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। তাছাড়াও কুকুরটির কোনো ক্ষতিও হয়নি। এক কথায়, পোষাপ্রাণী থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে ভেটেরিনারিয়ান বা প্রাণী চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো পোষাপ্রাণীর যত্ন নেওয়া উচিত।
শিশুরা আক্রান্ত হয় না
যদিও শিশুরা কম আক্রান্ত হয় তথাপিও শিশুরা আক্রান্ত হবে না এ কথা বলা যায় না। এ পর্যন্ত শতকরা ২ দশমিক ২ ভাগ শিশুকে আক্রান্ত হিসেবে পাওয়া গেছে যাদের বয়স ১৯ বছরের কম।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত কি না নিজে থেকে শনাক্ত
করোনা ভাইরাসের যেসব লক্ষণ এ পর্যন্ত বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জানা যায় তা কিন্তু আরও অনেক রোগেই দেখা যেতে পারে। তাই কারও শরীরে করোনার মতো লক্ষণ প্রকাশ পেলেই তাকে নিয়ে

SHARE