ভোলায় বোন বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় ভাইকে হত্যা

আকতারুল ইসলাম আকাশ, ভোলাঃ
দুলাভাইয়ের বাড়িতে রাতে একই খাটে ঘুমিয়েছিলেন মাছ ব্যবসায়ি জাহাঙ্গীর (২৩)। খাটে পড়ে আছে জাহাঙ্গীরের জামা জুতা শুধু নেই জাহাঙ্গীর। সকাল হলেই দুলাভাইয়ের ঘরের পাশের বাগানে দেখা মেলে শ্যালক জাহাঙ্গীরের ঝুলন্ত লাশ। হত্যা নাকি আত্নহত্যা.? এমন নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয় সহ সকলের মাথায়।

নানান মন্তব্যে আসছে নানান জায়গা থেকে। তবে বেশির ভাগ মন্তব্যে ই বলছে হত্যা করা হয়েছে জাহাঙ্গীরকে। পরিবারের দাবি আদরের ছোট্ট বোনকে বিয়ে না করতে পেরেই এমন হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে দুলাভাই-ভাগ্নে। নইলে পলাতক কেনো অভিযুক্ত’রা.??

ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ০৮নং ওয়ার্ডের হাওলাদার বাড়ির মো. মুনাফ হাওলাদারের ছেলে মাছ ব্যবসায়ি জাহাঙ্গীর হাওলাদারের (২৩) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয়েছে একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা দুলাভাই সিরাজের বাড়ির পাশের বাগান থেকে। ভোলার ইলিশা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মোক্তার হোসেন ফোর্স সহ বুধবার সকাল ১০টার দিকে এই লাশ উদ্ধার করেন।

নানান প্রশ্ন যখন নানান মন্তব্যে করে, ঠিক তখনই এই বিষয়ে মুখ খুলেন নিহতের ছোট্ট বোন সদ্য বিবাহিত তাছলিমা আক্তার। ছোট্ট বোনকে বিয়ে করতে না পেরে এমনটা হয়েছে বলে দাবি ছোট্ট বোন তাছলিমার। এখনো শুকায়নি ছোট্ট বোনের হাতের মেহেদীর দাগ। তাঁর মধ্যে ই দেখতে হলো আদরের বড় ভাই পরিবারের বটবৃক্ষ জাহাঙ্গীরের লাশ।

জাহাঙ্গীরের ছোট্ট বোন তাছলিমা আক্তার বলেন, আমাকে বউ করে নিতে চেয়েছিলেন মালের হাট বাজারের সেলুন ব্যবসায়ি নছির মালের ছেলের জন্য। শুনেছি তাঁর ছেলের মাথায় সমস্যা। তাই আমি ও আমার পরিবারের কেউ ই রাজি ছিলাম না সেই বিয়েতে।

নিহতের বোন তাছলিমা আরো বলেন, আমার বোনকে বিয়ে করেন দুলাভাই সিরাজ। আমি যখন ছোট তখন ই মারা যান আমার বোন। সেই ঘরে ৯ জন ছেলে সন্তান রয়েছে। বোন মারা যাওয়ার পর আমার দিকে নজর পড়ে দুলাভাই সিরাজের। দুলাভাই সিরাজ আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছেন। কিন্তু আমিও আমার পরিবারের কেউই রাজি ছিলাম না। আমার বাবা মা বৃদ্ধ অসুস্থ। আমার পরিবারের বটবৃক্ষ একমাত্র আমার ভাই জাহাঙ্গীর। আমার ভাইও রাজি ছিলেন না দুলাভাই সিরাজের সাথে আমাকে বিয়ে দিতে। গত সোমবার আমার বিয়ে হয় স্থানীয় একটি ছেলের সাথে। আমার স্বামীর আগের বউ মারা গেছে। তাই পরিবারের সম্মতিতে আমিও বিয়েতে রাজি হই। আমার বিয়েতে দাওয়াত দিয়েছিলাম আমার দুলাভাই সিরাজকে। কিন্তু তাঁরা কেউই আসেনি আমার বিয়ের দাওয়াতে। আমার বিয়ে হয়ে গেছে বাড়িতে বাবা মা ছাড়া কেউই নেই। আমার ভাইয়ের আদরের বোন ছিলাম আমি। তাই আমার বিয়ে হওয়াতে ভাই আমার দুলাভাই সিরাজের বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়েছেন গত পরশু দিন। গতকাল রাতে আমি আমার স্বামীর বাড়ি থেকে ( আড়াইয়্যা) এসেছি। আমার ভাইয়ের সাথে রাত ১০টা পর্যন্ত আমার অনেক কথাবার্তা হয়। পরে ভাই আমার ভাগ্নে জাকিরের সাথে তাঁদের বাড়িতে যায় ঘুমাতে। কিন্তু সকাল হলে খবর আসে আমার ভাইয়ের লাশ আমার দুলাভাই সিরাজের বাড়ির পাশের বাগানে ঝুলন্ত অবস্থায়। আমি আমার বৃদ্ধ দুলাভাইয়ের কাছে বিয়ে বসতে রাজি না। তাই আমার দুলাভাইয়ে ই আমার ভাইকে হত্যা করেছে বলে আমি মনে করি।

ঘটনার পর অভিযুক্ত জাকির ও সিরাজ পলাতক থাকার কারণে তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে স্থানীয় মেম্বার মো. মিলন বলেন, জাহাঙ্গীর অনেক ভালো ছেলে। আমি অনেক সাহায্য করে যাচ্ছে তাঁর পরিবারকে।তাঁর পরিবার দরিদ্র। আমি অনেক টাকা-পয়সা দিয়ে তাঁর বোন তাছলিমাকে বিয়ে দিয়েছি। তাঁর মৃত্যু দেখে ধারণা করা যাচ্ছে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। যদি তাঁকে হত্যা ই করা হয়, তাহলে আমি মিলন মেম্বার কাউকে ছাড় দিবো না। ময়না তদন্তের রিপোর্ট বের হলেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

ইলিশা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মোক্তার হোসেন বলেন, এটা হত্যা নাকি আত্নহত্যা তা সঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে কেউ আত্নহত্যা করলে যেমন রুপ ধারণ করে তাঁর কোনটাই দেখা যাচ্ছে না জাহাঙ্গীরের লাশ দেখে। লাশের ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

SHARE