শিক্ষক আপনিই এখন সমাজের বড় আপরাধী!

ডেস্ক: ভোলানিউজ.কম

—-লেখক আল-আমিন এম তাওহীদ……….

কবি বলেছিলেন ‘‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’’ আর আমিও বলেছি ‘‘সু-শিক্ষায় শিক্ষিত জাতিরাই’’ জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা, জ্ঞান অর্জন করলেই প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। এই সমাজে নানা শ্রেণীর মানুষ রয়েছে, প্রত্যেক মানুষের মতে নানা মতামত আছে। কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক এটা নিয়েই নানা জল্পনা আর কল্পনা এবং নানা মন্তব্য প্রতিদিন ঘটে যাচ্ছে অহরহ। আর ফাকেঁ পরিনত হয় ভাল কিছুর আশা এবং খারাপ কিছুরও  আশা।

যাই হোক যে কথা বলতেছিলাম, ছোটবেলা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিল বাবা প্রাইমারিতে । পড়তে পড়লে প্রাইমারিতে চলে গেল ৫টি বছর। ৫ম শ্রেনী পাশ করে নিজেই নিজের যোগ্যতায় ভর্তি হলাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সেখান থেকে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হয়েছি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এমন করে পড়া-লেখা করে শিক্ষা জীবন কাটিয়ে দিলাম।

যখন কোন সন্তান জম্ম নেয় তখন প্রত্যেক অভিবাবকের অনেক দায়িত্ব থাকে আমাদের ওপর। সেই দায়িত্ব টুকু সঠিকভাবে পালন করলে আমাদের জীবন ধ্বংশ হওয়ার সম্ভবনা থাকেনা। যখন প্রাইমারিতে ভর্তি হই তখন বাবা আমাকে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। তারপর ৫টি বছর শেষ হলো এরমধ্যে আর বাবা একবারো আসেনি বিদ্যালয়। সন্তান পরিক্ষায় ফেল করলো না করলো, সন্তান মেধাবী হয়েছে কিনা জানতে চায়নি একটি বারও আমার সকল দায়িত্ব দিল শিক্ষকদের উপর। হঠাৎ একদিন ক্লাশে বসে মূখ দিয়ে বাশিঁ বাজিয়ে ফেললাম মনের ভুলে, তখন ১ম শ্রেণীতে পড়ি। বাশিঁ বাজানো বিষয়টি নজরে পড়লো স্যারের, লাইব্রেরি থেকে একটি বেত নিয়ে এসে স্যারে বললো বাশিঁ বাজালো কে? সবাই ভয়ে অাতংক ছিলাম। হঠাৎ আমি দাড়িঁয়ে বললাম আমি বাজিঁয়েছি মনের ভুলে। স্যারে ভুলের কথা শুনেনি ড্যানার উপরে বেত দিয়ে দুটি আঘাত করলো। বেতের আঘাতের স্থানটি অনেক যন্ত্রনা করছে, লাল হয়ে কালো হলো। শরীরে জ্বর উঠে গেল ৫দিন বিছানায় ছিলাম। বাড়িতে গিয়ে বাবা মা কে জানালাম না। মা-বাবা খুব সেবা করতেছে সন্তানের জন্য, আর শুধু বলতেছে রৌদে হাটতে না বলছি, তারপরও রৌদে হেটেঁ এখন জ্বর আসছে, মরলেও ভাল হতো। তখন আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে আমি কি বললো, স্যারে পিঠাইছে বললেতো গালি দিবে দুষ্টামি করছে। তারপর সুস্থ হয়ে আবার স্কুলে গেলাম, স্যারে জিজ্ঞেস করলো তুমি স্কুলে আসোনি কেন?। স্যার অনেক জ্বর ছিল আসতে পারিনি, তারপরও আবারো ৫দিন বন্ধে ৫টি বেতের আঘাত দিল। এভাবে শিক্ষা, আর জ্ঞান অর্জন করেছি, মেধাও কম ছিলনা ক্লাশে প্রথম ছিলাম। যদি স্যারে এই শাসনটি তখন না করতেন হয়তো অনেক খারাপ হয়ে যেতাম। আমাদের অভিবাবক যেমন শিক্ষা দিয়েছেন ছোটবেলায় তেমনি হয়ে উঠেছি, দোষ শিক্ষকদের নয় আমাদের দোষে আমরাই দায়ী।

স্কুল জীবনে সব সময় একটি বিষয় চিন্তা করতাম এবং ভয় পেতাম বেত, ক্লাসে স্যার/ম্যাডামের পড়া না হলে পিঠাইবো এই চিন্তা মাথায় নিয়ে সন্ধ্যা হলে পড়ার টেবিলে বসে পড়তাম। প্রতিদিন রাত ১২টার আগে পড়ার টেবিল থেকে উঠতাম না। স্কুলের পড়া মুখস্ত বা লিখে দিতে না পাড়লে স্যারে কাল মারবে-এমন করে পড়া লেখা করে অল্প কিছু হলেও মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেছি।কখনো শিক্ষকদের অসম্মান করিনি, সব সময় সম্মান শ্রদ্ধা করেছি। শিক্ষকদের সাথে বিয়াদপি করিনি, ভাল ব্যবহার করেছি। মাথা নিচু করে রাস্তা দিয়ে হেটেঁ যেতাম। মনে মনে ভাবতাম শিক্ষক কখনো আমাদের খারাপ চায় না, আমাকে ভাল মানুষ আদর্শ  তৈরি করতে যা যা দরকার একজন শিক্ষক তা করবে। সব সময় মাথায় এই থিমটি চিন্তা করতাম স্যারের সাথে বিয়াদবী করা যাবেনা স্যারে কষ্ট পেলে আমি মানুষ হতে পারবো না। স্যারের সাথে চলার পথে দেখা হলে সালাম দিয়ে মাথা নত করে চলে যেতাম এই ছিল শিক্ষা, আর এখন শিক্ষার কি অবস্থা????।

গতকাল ৩ডিসেম্বর ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। একদিকে আদর্শ শিক্ষা ও মানুষ তৈরিতে শাসন, অপরদিকে আবেগের কঠিন যন্ত্রনা। ধ্বংশ করলো অনর্থক মোবাইল।

সময় যেতে না যেতেই সন্তানের হাতে মোবাইল, মটর সাইকেল। একবারো চিন্তা করেনি অভিবাবক মোবাইল ও মটর সাইকেল কিনে দেয়ার উপযুক্ত বয়স এবং সময় হয়েছি কি না?। জানতে চায় না ব্যবসা চাকরী আছে কিনা? মোবাইলের খরচ মটরসাইকেলের খরচ কিভা েচালাবে??।

মোবাইল ফোন মটর সাইকেলে চাইলেও কিনে দিচ্ছে অভিবাবক, কোথায় জীজবন ফেলে দিল সচেতন অভিবাবক’রা???। এই মোবাইল আর মটরসাইকেলে কি পড়া লেখা সঠিক হবে জানতে চায়নি বাবা-মা???।

বর্তমান সমাজের হাল-হকিকত, প্রশ্ন ফাসঁ রোধে ব্যাপক অন্দোলন। রাস্তাঘাট, গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, অবরোধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তালা, সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুক তোলপাড়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজর খোলা কে কোথায় কি করছে, অপরাধ দমনে সক্রিয়। কিন্তু প্রশ্ন একটা যখন অপরাধ দমন কিংবা প্রশাসনিক ব্যবস্থাগ্রহণ করতে যায় তখনি বিশাল একটি বাধাঁর সম্মুখীন। এই সেই বাধাঁ হলো ভিকারুনন্নেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের গতকালের ঘটনাটি।

প্রশ্ন ফাসঁ বন্ধও চান?, মোবাইলে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে পরিক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ করে নকল করছেন, মোবাইল প্রশ্ন‘র উত্তরসহ আটক করেছে। জিজ্ঞেস কিংবা অপরাধের দায়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থার জন্য টিসি দিবেন, অভিবাবকদের সচেতন করার জন্য দুটি কথা বলছে এই ভাল কথা সহ্য করতে না পেরে অভিমানি করে আত্মহত্যা করেছেন অপরাধ হয়ে গেছে শিক্ষকদের???। আর আপনি আপনার সন্তানকে মোবাইল,মটর সাইকেল কিনে দিয়েছেন, মোবাইলে নকল নিয়ে আসবে পরিক্ষার কেন্দ্রে, শিক্ষা সমাজকে ধ্বংশ করবে এটা কি কোন অপরাধ নয়???। শেষে অপমানিত হবে শিক্ষক, যার যোগ্য নয় সেও বলতে ধর সালারে???। এটা আমাদের সমাজের কোন শিক্ষা?? আর আমরা মানুষ জাতি কত রং এর।

সমাধান কি আছে এসকল থেকে, প্রত্যেক অভিবাবকের কঠোর হতে হবে। বেকার কিংবা পড়া-লেখা অবস্থায় সন্তানের হাতে কোনভাবেই মোবাইল কিংবা মটরসাইকেল দেয়া যাবেনা। উপযুক্ত বয়স এবং আয় করার ক্ষমতা আছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রােখতে হবে। সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই নৈতিক আদর্শ শিক্ষায় উজ্জীবিত করতে হবে। সন্তানকে খারাপ কিছু শিক্ষা এবং সন্তানের সাথে খারাপ ভাষায় কথা বলা যাবেনা। শিক্ষা,জ্ঞান অর্জনকালে কঠোর থাকতে হবে। আপনার সন্তান কোথায় বা কার সাথে আড্ডা দিয়েছে লক্ষ্য। সন্তান সঠিক সময়ে বিদ্যালয় গেছি কিনা। সন্তানের চলাফেরা কেমন, কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে কিনা, কোন উগ্র মেজাজী কথা বার্তা বলছে কিনা? মাদকের সাথে জড়িত কিনা? কার সাথে চলাফেরা? মাদক সেবনে গভীরে প্রবেশ করছে কিনা?। মাদকের ছোবলে যাওয়ার আগে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা দ্রুত গভীরে প্রবেশ করতে না দেয়া। সন্তানে প্রতিদিন খরচ কয় টাকা? বেশি টাকা খরচ করছে কিনা?। স্কুল/ কলেজের ফরম পূরনের সময় অভিবাবক সাথে যাওয়া। মিথ্যা বলে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছি কিনা?। প্রতিদিন ক্লাসে উপস্থিত থাকে কিনা?। মাসে কতদিন স্কুলের খাতায় হাজিরা আছে এবং কত দিন অনুপস্থিত ছিল, অনুপস্থিত কতদিন বাসায় ছিল আর কতদিন বহিরাগতদের সাথে আড্ডা দিয়েছে লক্ষ্য রাখুন। এসকল বিষয় লক্ষ্য রাখলে মনে হয় কোন সন্তান খারাপ অবস্থানে যাবেনা এবং অরিত্রির মতো আত্মহত্যা্ও করবে না।

কোন শিক্ষকের দোষ নয়, শিক্ষক কখনো একটি সন্তান কিংবা ছাত্র/ছাত্রীকে খারাপ তৈরি করবেনা। হয়তো মানুষের নানা তালে মিঠা পেয়ে বলতে পারি শিক্ষকই অপরাধী। ভুল আমাদের অনেক কিছুতে নিয়ে যায়। যে শিক্ষক১০টি বছর অনেক পরিশ্রম করে মানুষ তৈরি করেছে আজ সে আমাদের চোখে সবচেয়ে বড় অপরাধী হয়েছে আমরা কোন সমাজের চাবিকাঠিতে????।

তবে শিক্ষকদেরও সেই বড় শিক্ষারমানটি ধরে রেখে শিক্ষার্থীদের সাথে ভাল আচারণ এবং নৈতিক আদর্শ শিক্ষাদানের মধ্য দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। প্রতিদিন ভাল কিছু শিক্ষার মাধ্যমে একদিন মানুষ হয়ে উঠবে।

সময়ে অসময়ে রাস্তার পথিক সেও শিক্ষককে সালা বলে বলে ধর ধর আওয়াজ তুলে অকথ্য ভাষায় আচারণ করেছে। এই শিক্ষককের হাতে অসংখ্য মেধাবীরা মানুষ হয়ে আজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চাকরী-বাকরী করছে। আর আমরা সেই শ্রদ্ধাভাজন মানুষগুলোর সামনে বসে সিগারেট টানছি, মারপিঠ করছি,অকথ্য ভাষায় আচারণ করছি। আমরা কি যোগ্য পিতা-মাতার সন্তান????। আমাদের আজ মানুষত্ব্য কোথায় লুকিয়ে আছে?? কি কারনে দিন দিন এমন উগ্র পথে হেটেছি??। মুলত দোষ কি পরিবারের??— লেখায় ভুল হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন (আল-আমিন এম তাওহীদ, ভোলা)

(এমআই, ৪ডিসেম্বর-২০১৮ইং)

 

SHARE