বিএনপির দিকে তাকিয়ে জোটসঙ্গীরা

অনলাইন ডেস্ক:

নিজ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শেষ হলেও জোট শরিকদের আসন বণ্টন নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। ২০ দলের শরিকরা তাদের প্রত্যাশিত আসনের তালিকা জমা দিলেও ঐক্যফ্রন্টের তালিকা এখনো জমা পড়েনি। আর ঐক্যফ্রন্ট জানিয়েছে, ইশতেহার ঘোষণার পর হবে আসন নিয়ে আলোচনা।

বিএনপির চার হাজারের বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শেষ হওয়ার পর বুধবার ২০ দলের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল বিএনপির। তবে সেই বৈঠক এখনো হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের দলে অনেক প্রার্থী। তাদের মধ্যে আসন বণ্টন করা কঠিন হয়ে গেছে। এর মধ্যে ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্টের শরিকরাও আছে। তবে এটা যে সমাধান যোগ্য নয়, এমনটা নয়। আশা করি, দুই-চার দিনের মধ্যেই শরিকদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানে পৌঁছা যাবে।’

বিএনপির কাছে তালিকা দিলেও পুরোপুরি তা মানতে হবে শরিকদের মনোভাব এমন নয়। আবার যত আসন চাওয়া হয়েছে এগুলোতে নিজেদের লড়াই করার সক্ষমতাও নেই বেশির ভাগ শরিক দলের। যে কারণে ‘দেনদরবার’ করার সুবিধার্থে বেশি আসন চাওয়া হয়েছে।

তবে তাই বলে, পুরোপুরি ছাড় দিতে নারাজ শরিকদের কেউ কেউ। ইতোমধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে যাতে বানরের রুটি ভাগাভাগির মতো অবস্থা না হয় সেই হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে জোটের অন্যতম শরিক এলডিপির সভাপতি অলি আহমেদ বলেছেন, ‘মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির নামে বানরের পিঠা ভাগ হবে না। যোগ্য ও জনগণের মনের মানুষেরই মনোনয়ন দেয়া হবে।’

বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এলাকায় জনপ্রিয়তা, বিগত সময়ে দলে বা জোটে অবদান এবং মনোনয়ন দিলে জয়ী হওয়ার সক্ষমতা কতটুকু এটাই হবে মনোনয়ন পাওয়ার মূল নির্ণায়ক। কারণ আমরা সংখ্যার থেকে জয়ী হওয়াটাকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই।’

২০ দলে কাকে কোন আসন দেয়া হবে

এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০ দলের শরিক বিজেপিকে একটি আসন দেয়ার সিদ্ধান্ত আছে। সেটি হলো ভোলা-১, লড়বেন চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ।

তবে এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে লড়বেন তোফায়েল আহমেদ। আর পার্থ আসনটি ছেড়ে ঢাকা-১৭ থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী।

দলটির প্রয়াত সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে তাসমিয়া প্রধানকে পঞ্চগড়-২ আসনটি দেয়া হতে পারে। তবে কোনো কারণে সেটি দেয়া না গেলে তাকে সংরক্ষিত নারী আসন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

আরেক শরিক কল্যাণ পার্টিকে দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমের জন্য একটি আসন ছাড়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আছে।

এলডিপির অলি আহমেদকে-চট্টগ্রাম ১৫ এবং রেদওয়ান আহমেদকে-কুমিল্লা-৭ থেকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত। তবে এলডিপি কম হলেও পাঁচটি আসনের প্রত্যাশা করছে। বিশেষ করে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে দলের যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিমের জন্য জোর লড়াই করছে দলটি।

২০ দলে নিবন্ধিত লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও মুসলিম লীগকে কোনো আসন দেয়া হবে কি না, এই বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে  জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং খেলাফত মজলিসের দুই অংশেরই দাবি আছে।

মুসলিম লীগের কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসন চাইলেও তাদের সেটি দেয়া সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে।

জমিয়াতে উলামায়ে ইসলামের দুই পক্ষ থেকে শাহিনুর পাশা চৌধুরীকে সুনামগঞ্জ-৩ এবং মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসকে যশোর-৫ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ২০০১ এবং ২০০৮ সালে এই দুইজন ওই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন।

খেলাফত মজলিসের মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক নির্বাচন করবেন না। সেক্ষেত্রে মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদেরকে হবিগঞ্জ-৪ আসন দেওয়া হতে পারে।
পিরোজপুর- ১ থেকে জাপা (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারের কথা শোনা গেলেও জামায়াতের দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী নির্বাচনে আগ্রহী। তবে বিএনপি ধানের শীষের বাইরে প্রার্থী না দেয়ার বিষয়ে একাট্টা।

জোটে নিবন্ধনের বাইরে থাকা দলগুলোর মধ্যে জামায়াত ছাড়া বাকিদের চাহিদাকে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না বিএনপি।

এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নড়াইল-২, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান পিরোজপুর-২, পিপলস পার্টির রীতি রহমান নীলফামারী-১ এবং মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার ম-ল যশোর-২ থেকে নির্বাচন করতে চান। তবে এসব আসন তাদের দেয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

জামায়াতের আসন কমবে

২০ দলে বিএনপির সবচেয়ে বড় শরিক জামায়াত ৫০টি আসন চাইলেও তাদের কতগুলো দেয়া হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ২০০১ ও ২০০৮ সালে প্রধান শরিককে ৩৫টি করে আসন দিয়েছিল। আর কিছু আসন ছিল উন্মুক্ত। কিন্তু জামায়াত এবার বেশি চাইছে। কিন্তু বিএনপি চাইছে কমাতে।

জামায়াতকে এবার ২০ থেকে বড়জোর ২৫ আসনে ছাড় দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। তবে জামায়াত ৩০টির নিচে আসনকে অসম্মানজনক হিসেবে ভাবছে।

নিবন্ধন হারানো স্বাধীনতাবিরোধী দলটি অবশ্য দলীয় প্রতীকে ভোটে লড়তে পারবে না। স্বতন্ত্র হিসেবেই লড়তে হবে তাদের প্রার্থীদের। এই অবস্থাতেও বিএনপির প্রতীক নেবে না তারা। যদিও ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা লড়বে ধানের শীষ নিয়েই।

ঐক্যফ্রন্টের দাবি নিয়ে ধোঁয়াশা

ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মোস্তফা মহসিন মন্টু ঢাকা-২ ও ঢাকা-৩, মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২, আ স ম আবদুর রব লক্ষ্মীপুর-২ আসন চান, এটা নিশ্চিত। তবে এর বাইরে তারা ঠিক কোনগুলো দাবি করছেন, সেটি স্পষ্ট নয়।

সম্প্রতি ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়া সাবেক অর্থমন্ত্রী আ স ম কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়ার জন্য ড. কামাল হবিগঞ্জ-১ চাইবেন, এটা স্পষ্ট। আবার ১০ জন সেনা কর্মকর্তাকে দলে নেয়ার পর তাদের জন্যও আসন চাইবে গণফোরাম। তবে সেগুলো কোন আসন তা জানানো হয়নি।

ড. কামাল নির্বাচন করবেন কি না, এই বিষয়টিও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তার নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৪ থেকে নির্বাচন করতে চান। সেটি আবার এলডিপির অলি আহমেদের আসন। ফলে সুব্রতকে দেয়া হবে কি না, বা দিলে কোনটি, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।

ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়া জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আসন বণ্টনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয় নাই। এ বিষয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নাই। ভালো প্রার্থী যারা তাদেরই মনোনয়ন দেয়া হবে। মনোনয়ন যাদের দেয়া হবে সবাই ঐক্যফ্রন্টের, কোনো দলের নয়। যারা ভালো করবে তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে, আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। এখনো ফাইনাল হয় নাই।’

‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির বাইরে যে কয়টি দল আছে তাদের যে কয়জন ভালো প্রার্থী আছে তাদের সবাই মনোনয়ন পাবে।

যা বলছেন কেন্দ্রীয় নেতারা

জোটের সঙ্গে আসন বণ্টনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে দায়িত্বে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান ও মির্জা আব্বাস।

নজরুল ইসলাম খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে শরিকদের সঙ্গে বসা হয়নি। আগামী সপ্তাহের যে কোনো দিন বসে সমাধানে আসা যাবে।’

এলডিপি নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘বিএনপির সাক্ষাৎকার শেষ হলো এখন এর আলোকে জোট শরিকদের সঙ্গে দুই এক দিনে মধ্যে বসার কথা শুনেছি। আশা করি, দ্রুত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে।

(আল-আমিন এম তাওহীদ, ২৪নভেম্ববর-২০১৮ইং)

SHARE