ভোলার এই পুলিশের কোন মানবতা নেই!

আল-আমিন এম তাওহীদ- ভোলানিউজ.কম,

ডিউটি ট্রাফিক বিভাগ, বর্তমানে ভোলায়। প্রতিদিন ডিউটির সময় সকাল ৮টায় থেকে শুরূ হয় রোদ্র আর বৃষ্টিতে ভিঝেই সরকারের দায়িত্ব পালন করে। আজ ৪নভেম্ববর ডিউটির স্থান ভোলা শহরের বাংলাস্কুল ট্রাফিক পয়েন্টে। ডিউটি চলছে হঠাৎ করেই চোখে পড়লো কে যেন মা মা মা করে চিৎকার দিচ্ছে। চলে গেল দৌড়ে চিৎকারের পাশে, চোখে দেখা গেল ছোট অসহায় শিশুটি পা নড়াচড়া করতে পারছেনা। মনে মনে ভাবলো নিশ্চয়ই পা টি ভেঙ্গে গেছে।

ছোট শিশুটি রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে আজ সকাল ১০টার দিকে। পিছন দিকে থেকে একটি ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ছোট পশশিশুটির হাটুর ওপর দিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর পথশিশুটি মাটিতে লুটিয়ে পরে মা মা মা বলে চিৎকার দিচ্ছে। কোন নড়াচড়াও করতে পারেনা ব্যাথার যন্ত্রনায়। এই মুহুর্তে বিষয়টি চোখে পড়ে শহরের ট্রাফিকে দায়িত্বে থাকা এএসআই শাহে আলমের। শিশুটির পাশে গিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গেল ভোলা সরকারি হাসপাতালের জরুরী বিভাগে। পরিক্ষা-নিরীক্ষার পর ইমারজেন্সী ডাক্তার বলেন ওর ট্যাংগ ভেঙ্গে গেছে এক্স-রে করা হলো। প্রয়োজন অনেক টাকা, পুলিশ ডাক্তারকে বললো যত টাকা লাগে আমি দিবো ওর চিকিৎসা করেন। সুন্দর করে ডাক্তার সাহেব ব্যান্ডিজ ও চিকিৎসা করালো। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওষুধ লেখলো প্রিসক্রিপশনে প্রায় ১৫০০টাকার। পুলিশ তাৎক্ষনিক ১৫০০ টাকার ওষুধ এবং কিছু খাবার কিনে দিয়ে পথশিশুটিকে সাথে নিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে অসহায় মায়ের কাছে পৌছে দেন।

সন্তান আঘাত পেলে মায়ের কলিজা ছিড়ে যায়। সংসারের বড় ছেলে পথশিশু রাসেল (৭)। পরিবারে কোন আয়ের উৎস নেই। বাড়িটি ভোলা শহরের আলগী গ্রামে। বাবা মা কে রেখে অন্য কোথাও গিয়ে একটি বিবাহ করেছেন। পরিবারটি খুব অসহায়। ছোট পথশিশু রাসেল ভোলা শহরে চলার পথে মানুষের কাছ থেকে দুই টাকা এক টাকা চেয়ে নেন। রাসেলকে সবাই ভালবাসতো। কিন্তু এই ভালবাসার মধ্য দিয়ে ঠ্যাং ভেঙ্গে দিবে জানতে পারেনি রাসেল। একবারও কি ওই অসভ্য রিক্সাচালকের নজরে পড়েনি?। হ্যা নজরে পড়েছে সরকারের অসভ্য পুলিশের। আমরা সমাজের একশ্রেণীর মানুষ প্রায় সময়ই গালিগ্যালাজ করি পুলিশ ভাল না, পুলিশ খারাপ। হয়তো জানিনা যে পুলিশের মধ্যেও ভাল পুলিশ আছে।

এদিকে, এই পুলিশ সদস্য কিছুদিন আগে ভোলা শহরে ব্যাটারী চালিত বোরাকে পেয়েছিল অনেক স্বর্ণ, সেই স্বর্ণর মালিককে পৌছে দেয়। পারতেন স্বর্ণ আত্মাসাৎ করতে কেউ কিছু বলতো না। তবুও সততার জীবন কাকে বলে প্রমাণ দেখায় এই পুলিশ সদস্য। ভাল কাজের বিনিময় কখনো পুরুস্কৃত হয় না, তবে এই পুরুস্কার একদিন সৃষ্টিকর্তাই দিবেন।

জানতে চেয়েছিলাম পুলিশ শাহে আলমের কাছে তিনি বলেন, আমি সকালে ডিউটিতে ছিলাম। হঠাৎ করেই দেখি রাস্তার পাশে চিৎকার দিচ্ছে। দৌড়ে গিয়ে দেখি অসহায় ছেলেটিকে রিক্সা চাপা দিয়ে ঠ্যাং ভেঙ্গে দিয়েছে। সাথে সাথে আমার গাড়িতে উঠিয়ে ভোলা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করে বাড়িতে মায়ের কাছে পৌছে দিয়ে আসি।

জানতে চাওয়া হলো আপনি ডিউটি রেখে কেন গেলেন? প্রশ্নের জবাবে বললেন, জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশ আছে অসহায় কিংবা স্কুল ছাত্র রাস্তা পারাপারে নজর দেয়া  সাহায্য করা। এটা মানবতার সেবা, আমার নিজের সন্তান যদি এমন হতো তাহলে আমার মতো বাবার হৃদয় কেদেঁ উঠতো। ওতো একটি সন্তান, হয়তো বাবা নেই অসহায় পরিবার এজন্য রাস্তায় রাস্তায় চলাফেরা করে। ওর যতকিছু চিকিৎসার জন্য লেগেছে তা দিয়েছি। ও সুখে থাকুক শান্তিতে থাকুক।

পুলিশ সদস্য শাহে আলমের বিষয় এখন সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুক ভাইরাল। আলোচনার ঝড় তুলে ভোলার মানুষ। কথা একটি পুলিশের মধ্যেও অনেক ভাল পুলিশ আছে। আজকে চোখে দেখলাম একটি অসহায় শিশুকে নিজের সন্তানের চেয়েও আদর করেছে, এমন যদি সকল পুলিশ সদস্য হতে তাহলে বাংলাদেশ আরো সুন্দর হতো।

(আল-আমিন এম তাওহীদ, ৪নভেম্ববর-২০১৮ইং)

SHARE