তজুমদ্দিন হাসপাতালে অনিয়ম আর অবহেলায় রোগীরা,

তজুমদ্দিন প্রতিনিধি,

তজুমদ্দিন উপজেলার একমাত্র সরকারী হাসপাতালটিতে চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় ভেঙে পড়েছে চিকিৎসাসেবা। উপজেলার ৩১ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালটিতে পনেরো জন প্রথম শ্রেনীর চিকিৎসকের জায়গায় মাত্র চার জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে নামেমাত্র চিকিৎসাসেবা। এদের মধ্যে আবার একজন ডেন্টাল সার্জন আরেকজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। অপর দু’জনের মধ্যে যেকোনো একজন ছুটিতে বা প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ায় সচরাচর একজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে পুরো উপজেলার চিকিৎসা কার্যক্রম। গাইনী কনসালটেন্ট না থাকায় নারী রোগীরা চিকিৎসা গ্রহন করতে এলে পড়তে হয় বিপাকে। শুধু তাই নয়, সরকারী এ হাসপাতালটিতে যেখানে দশ জন নার্স থাকার কথা সেখানে আছে পাঁচ জন, নেই কোনও মিডওয়াইফ।

হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অন্তঃবিভাগের রোগীদের হাসপাতাল থেকে ঔষধ সরবরাহের কথা ব্যবস্থাপত্রে থাকা সত্ত্বেও কর্তব্যরত নার্স ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের যোগসাজসে রোগীদেরকে দিয়ে কৌশলে ঔষধ ক্রয় করানো হয়। অন্তঃবিভাগের বরাদ্দকৃত ঔষধ রোগীদের নামে খাতায় উঠিয়ে আতœসাৎ করার অভিযোগও করেছেন অনেকে।জরুরী বিভাগ সার্বক্ষণিক খোলা থাকলেও সেখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকেননা বলে অভিযোগ রোগীদের। হাসপাতাল চলাকালীন জরুরী বিভাগের চিকিৎসকদের বাইরের চেম্বারে রোগী দেখার বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতাল কর্মচারীদের কেউ কেউ বেনামে ফার্মেসী ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকায় অফিস আওয়ারে প্রায়শই তাদের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া নি¤œমানের খাবার পরিবেশনের কারনে বেশিরভাগ ভর্তি রোগী অন্যত্র থেকেই খাবারের ব্যবস্থা করে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।এখনেই শেষ নয়, হাসপাতালটির রোগ নির্ণয় যন্ত্রপাতির প্রায় সবকটিই অকেজো অথবা তা অপারেট করার টেকনোলজিস্ট নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান। ফলশ্রুতিতে, রোগ নির্ণয়ের জন্য বাধ্য হয়েই বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভিড় জমান রোগীরা।

একদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা অন্যদিকে পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে জরুরী রোগীদের নিরুপায় হয়ে উন্নত চিকিৎসা গ্রহন করতে যেতে হয় জেলার সদর হাসপাতালে। কিন্তু জেলা সদরে রোগী পরিবহনে ব্যবহ্রত একমাত্র এ্যম্বুলেন্সের সেবা নিয়েও নৈরাজ্যের অভিযোগ তজুমদ্দিনের সচেতন মহলের। তজুমদ্দিন থেকে ভোলা সদর হাসপাতালে রোগী পরিবহনের ক্ষেত্রে কিঃমিঃ প্রতি ১০ টাকার জায়গায় দ্বিগুন বা তিনগুন অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ড্রাইভারের বিরুদ্ধে।

এবিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ভোলা জেলার সিভিল সার্জন রথিন্দ্রনাথ মজুমদার এ প্রতিবেদককে জানান,“মামলা জটিলতার কারনে নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় নতুন জনবল পেতে সমস্যা হচ্ছে, অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া এ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহনে কোনও অতিরিক্ত অর্থ না দেয়ারও আহবান জানান তিনি।
সমগ্র বাংলাদেশে যখন উন্নয়নের জোয়ার বইছে তখন তজুমদ্দিনের দুঃস্থ রোগীদের শেষ আশ্রয় এ হাসপাতালটির অব্যবস্থাপনা ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ মানুষ। তবুও নৈরাজ্য, অনিয়ম ও চিকিৎসক সংকটকে পাশ কাটিয়ে সেবার মানসিকতা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অবহেলিত এ জনপদের মানুষের পাশে দাঁড়াবে এমনই প্রত্যাশা লাখো তজুমদ্দিনবাসীর।

(আল-আমিন এম তাওহীদ, ৪ নভেম্ববর-২০১৮ইং)

SHARE