শান্তির ভোলার শান্ত ওসি

নিউজ ডেস্কঃ

ভোলা নিউজ-০১.১১.১৮

শান্তির দ্বীপের শান্ত ওসি মীর খাইরুল কবীর। ভোলা জেলায় একটি সু পরিচিত নাম। তিনি একাধারে ভোলা সদর, মনপুরা, দৌলতখান থানায় ওসি হিসেবে দায়ীত্ব পালন করে বর্তমানে লালমোহন থানায় কর্মরত আছেন। ওসি হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময় তিনি ভোলায়ই কাঁটিয়েছেন। আইনের প্রতি কঠোর শ্রদ্ধাশীল, সৎ ও একজন নীতিবান আদর্শ পুলিশ অফিসার হিসেবে সবার কাছে পরিচিত মীর খাইরুল কবীর। মানুষকে বিপদ আপদে সাহায্য করে ও মানুষের সেবা করে যে মানুষটি সবচেয়ে বেশি আনন্দ পান। যেখানেই তিনি দায়ীত্ব পালন করেছেন সেখান থেকে মূল উৎপাটন করেছেন সামাজিক অপরাধের। ভোলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতিসহ মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, জুয়া বন্ধ করে তিনি সবার প্রশংসার কুড়িয়েছেন একক ভাবে। অর্থ বা কারো প্রভাবে মিথ্যা মামলা নিয়ে নিরপরাধীদের হয়রানী করার কোন নজীর মেলেনি ওসি হিসেবে ভোলায় দীর্ঘ বছরের কর্মজীবনে।

ওসি মীর খাইরুলের জন্ম ১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৭ বাউফল থানার ধুলিয়া গ্রামে। বাবা মৃত মীর মোফাজ্জল হোসেন ও মা রিজিয়া বেগমের বড় সন্তান মীর খাইরুল কবীর। ৩ ভাই ৩ বোন তারা। বাবা ছিলেন একজন স্কুল মাষ্টার। ধুলিয়ার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০০৭ সালে বাবা মারা যায়। মেঝ ভাই মীর সাজিদুর রহমান ১৮ বিসিএস ফ্যামিলি প্লানিংয়ের ডিজি। তিনি হবিগঞ্জ কর্মস্থলে আছেন। মেঝ ভাইয়ের স্ত্রী ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার একটি উপজেলার মৎস্য অফিসার। ছোট ভাই মীর সাইদুর রহমান বেক্সিমকো সিকিউরিটিজ কোম্পানীতে চাকরি করেন। ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ফাস্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করেন। বড় বোন জাকিয়া বেগম সিলেটে অগ্রণী ব্যাংকের জিএম হিসেবে কর্মরত। মেঝ বোন মাকসুদা বেগম বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম। ছোট বোন নাহিদ সুলতানা বাউফল আঃ রশিদ চুন্নু মিয়া কলেজের লেকচারার।

শিক্ষা জীবন : 
১৯৮২ সালে এসএসসি পাস করেন ধুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে। ১৯৮৪ সালে এইচএসসি পাস করেন বরিশাল হাতেম আলী কলেজ থেকে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে মাষ্টার্স করেন মীর খাইরুল কবীর।

চাকরী জীবন :
পরিবারের অনেকে চাকরী করে। তা দেখে মীর খাইরুল কবীরের মনেও চাকরী করার ইচ্ছা জাগে। সে ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে ১৯৯৪ সালে। সাবঃ ইন্সপেক্টর পদে যোগ দিয়ে চাকরী জীবন শুরু করেন মীর খাইরুল কবীর। প্রথম পোস্টিং বরিশালের গৌরনদী থানায়। এরপর শুধু সামনের দিকে এগিয়ে চলা। ২০০৮ সালের ২৩ জানুয়ারি অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে পদোন্নতি পান মীর খাইরুল কবীর। ওসি হিসেবে ঢাকায় স্পেশাল ব্রাঞ্চে প্রথম পদায়ন।

ভালো লাগা দিক :
পুলিশে চাকরী করলে প্রতিদিন এক একটি সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলে নিজের কাছে ভালো লাগে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধ রাখতে পারলে সাধারণ মানুষ স্বস্থিতে থাকে। ঈদ ও পূজা সুষ্ঠভাবে পালন করতে পারলে নিজের কাছেও আত্মতৃপ্তি লাগে, ভালো লাগে।
পুলিশে চাকরী করে অনেক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন মীর খাইরুল কবীর। ভালো অভিজ্ঞতাগুলো নিজেকে আরো উৎসাহিত করে তোলে কর্মক্ষেত্রে। প্রতিটি দিনই যেন নতুন নতুন অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়। গৌরনদী থানায় এসআই থাকাকালে অভিযান চালিয়ে এসএমজি, রাইফেল উদ্ধার করে সাফল্য দেখান। তবে সবচেয়ে আনন্দ লাগে যখন মানুষকে বিপদ আপদে সাহায্য করা যায়, মানুষের সেবা করা যায়। মানুষকে সেবা করার সবচেয়ে বেশি সুযোগ আছে পুলিশে। এ সুযোগটা কাজে লাগাতে নিজের সম্পূর্ণ দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন মীর খাইরুল কবীর।

জাতীসংঘ শান্তিমিশনে :
২০০৪-২০০৫ সালে জাতীসংঘের শান্তি মিশনে কসভো যাওয়ার সুযোগ পান তিনি। ১ বছর অবস্থান করার পর ২০০৬-২০০৭ সালে আবারো শান্তি মিশনে পূর্ব তিমুর যাওয়ার সুযোগ হয়। শান্তি মিশনে থাকাকালে ইউরোপ, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্যাংকক, পাকিস্তান, ডুবাই, ইতালি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ইত্যাদি দেশে যান মীর খাইরুল কবীর।

সংসার জীবন :
স্ত্রী হোসনে আরা হ্যাপী একজন দক্ষ গৃহিণী। স্বামীর আদর্শগুলোও তার মধ্যে রয়েছে। সেই আদর্শে গড়া নিজেদের ৩ সন্তান। ১ ছেলে সৈয়দ তাহসিন আকিব ব্র্যাক ইউনভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছে। মেয়ে তাসনিয়া কবীর নিধি ভিকারুন্নেছা স্কুল এন্ড কলেজে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে এবং তাসকিয়া কবীর নির্ঝর ৫ম শ্রেণীতে পড়ে।

খারাপ লাগে :
প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই খারাপ ও ভালো দুইটা দিক আছে। ভালোটা ছাপিয়ে যখন খারাপটা বেড়ে যায় তখন মানুষ মানুষ থাকে না। তার মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কাজ করে। সব মানুষের মতো পুলিশও মানুষ। পুলিশের মধ্যেও কেউ কেউ অপরাধে জড়িয়ে পরে। তখন পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। সাধারণ মানুষ পুলিশকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করে। তখন খারাপ লাগে।

ওসি হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময় ভোলায় : 
ওসি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময়টা ভোলায় অবস্থান করেন ওসি মীর খাইরুল কবীর। ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে ভোলার মনপুরা থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেন মীর খাইরুল কবীর। ২০০৯ সালে দৌলতখান থানায় যোগদেন। ২০১১ সাল পর্যন্ত দৌলতখান থানায় থাকার পর খুলনার কয়ড়া এবং সাতক্ষিরা বদলী হন। পরে ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আবারো দৌলতখান থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত সেখানে থাকার পর ২০১৫ সালের ২৬ আগষ্ট ভোলা সদর মডেল থানায় যোগ দেন মীর খাইরুল কবীর। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ভোলা সদর থানায় থেকে নতুন রেকর্ড করেন তিনি। ভোলা সদর থানায় এ পর্যন্ত কোন ওসি ২ বছর পার করতে পারেনি। থানার বোর্ডে লেখা ওসিদের তালিকা থেকে জানা যায়, ১৯৮৪ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে যাদের নাম রয়েছে সেখানে এ পর্যন্ত কেউই ২ বছর কাটাতে পারেনি। কিন্তু মীর খাইরুল কবীর প্রায় আড়াই বছর ওসি হিসেবে ভোলা সদর থানায় থেকে রেকর্ড করেছেন। সেখান থেকে লালমোহন থানায় যোগ দেন। বর্তমানে লালমোহন থানায় রয়েছেন।

ভোলার মানুষ কেমন ? 
যারা ভোলা সম্পর্কে না জানেন, তারা ভোলার নাম শুনলে আসতে চায়না। কিন্তু একবার আসার পর আর যেতে চায়না। ভোলার মানুষ অতিথি পরায়ন। এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। এরা খুব সহজে মানুষের আপন করে নিতে পারে। খাদ্য, রবিশষ্য, ইলিশে এবং বিদ্যুৎ-গ্যাসে স্বয়ং সম্পূর্ণ ভোলা।
ভোলায় অপরাধ প্রবণতা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কম। চুরি, ডাকাতি, দাঙ্গা এখানে নেই বললেই চলে। এরা খুব শান্তিপ্রিয়। আগে ইলিশ মৌসুমে কিছুটা জলদস্যুদের উৎপাত ছিল। বর্তমানে তা আর নেই। জলদস্যু নিয়ন্ত্রণে আছে।

ভোলার রাজনীতি :
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ভোলার উন্নয়নের জন্য বদ্ধ পরিকর। তারা উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। নদী ভাঙ্গন রোধ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্কুল-কলেজ নির্মাণ ইত্যাদি দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন করেছেন রাজনৈতিক নেতারা। রাজনৈতিক সহবস্থানও ভালো ভোলায়। কোন অস্থিরতা নেই। ৫ জানুয়ারী নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী অবরোধ ভোলায় কোন প্রভাব পড়েনি। রাজনৈতিক সহিংসতা নেই বললেই চলে। এক কথায় শান্তির জনপদ দ্বীপের এ জেলাটি।

মিথ্যা মামলা :
মামলা তো মামলাই। যে কেউ আসলে আইন অনুযায়ী আমরা মামলা নিতে বাধ্য। পরে তদন্তে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে অর্থ বা প্রভাবে মিথ্যা মামলা না নিতেই সচেষ্ট থাকি।সূত্রঃ লালমোহন নিউজ

SHARE