নিরপেক্ষতা-মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আ.লীগ প্রতারণা করছে: ফখরুল

অনলাইন ডেস্ক:

ধর্মনিরপেক্ষতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার রাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের শুভ বিজয়ার অনুষ্ঠানে এ অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এই দশ বছরের একটা দুইটা না অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে যেখানে দেখা গেছে যে, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জমি দখল হয়েছে। এসব করেছে আওয়ামী লীগের সদস্যরা। আওয়ামী লীগ দুইটা ব্যবসা খুব ভালো পারে, একটা হচ্ছে- ধর্মনিরপেক্ষতা ব্যবসা, আরেকটা মুক্তিযুদ্ধের ব্যবসা।’

‘এই দুইটিকে বিক্রি করে করে তারা তাদের রাজনীতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। আমরা সবাই জানি এটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না। তারা সবসময় একটা প্রচারণা চালিয়ে আপনাদের বিভ্রান্ত করে- এটা আপনাদের সচেতনভাবে বুঝতে হবে।’

ফখরুল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে আর কেউ নাই, তারা ছাড়া আর কেউ নাই। বাংলাদেশে আর কেউ মুক্তিযুদ্ধ করে নাই। আর যারা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে তারা হবে স্বাধীনতার শত্রু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা গণতন্ত্র সেটাকেই গিলে বসে আছে তারা। তারা আবার বলে যে, ওরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের।”

‘ওরা তো মুক্তিযুদ্ধের শত্রুর চেতনা, ওরা গণতন্ত্রকে ধবংস করেছে। ওরা আমাদের সমস্ত অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়ে সেবা দাসে পরিণত করেছে।”

তিনি বলেন, ‘আমরা ভয়াবহ একটা অবস্থা অতিক্রান্ত করছি। আমাদের জাতি সত্ত্বা আজকে বিপন্ন।আমরা জনগনের অধিকারকে প্রতিষ্ঠান করতে চাই, আমরা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’

‘আজকে সমস্যাটা বিএনপির নয়, হিন্দুর নয়, মুসলমানের নয়। আজকের সমস্যাটা হচ্ছে বাংলাদেশের জাতির। আমরা একটা স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে টিকে থাকতে পারবো কিনা। কেউ ভোট দিতে যেতে পারে না। ওদের লোককেরা সরকারি কর্মচারিরা, ওই পুলিশ ভোট দিয়ে যায়। ভালো মানুষ ভোট দিতে পারে না। এভাবে সরকার নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে ধবংস করে ফেলেছে।’

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে ‘ঐক্যবদ্ধ’ হওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা যে সংগ্রাম শুরু করেছি সেই সংগ্রাম কিন্তু কোনো দলের জন্য নয়, এই সংগ্রাম কোনো ব্যক্তির নয়। এই সংগ্রাম হচ্ছে গণতন্ত্রকে মুক্ত করবার সংগ্রাম, বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করবার সংগ্রাম। তাই আমাদের সকলকে এক হতে হবে। জনগনের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। এই যে দানবকে সরানোর জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে আঘাত করতে হবে।’

‘আগামী নির্বাচনে প্রমাণ করে দিতে হবে এই দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়, আমরা ৭টা দাবি দিয়েছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে,নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠন করতে হবে … । এই দাবিগুলো তফসিল ঘোষণার আগে পুরণ করতে হবে। দাবি পুরণ না হলে জনগণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সেই দাবি আদায় করে নিয়ে দেশে একটা সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে এটাই হচ্ছে আমাদের প্রত্যয়।’

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠান করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহবায়ক গৌতম চক্রবর্তী, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুন্ড, অপলেন্দু দাশ অপু, রমেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, তপন দে, মিল্টন বৈদ্য প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী শান্তিকারানন্দ মহারাজ, স্বামী কল্পেশানন্দ মহারাজ, বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টির সাধারণ সম্পাদক সুকৃতি মন্ডল, বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র স্বাধীন কুন্ড, হিন্দু মহাজোটের সদস্য সমীর সরকারও বক্তব্য রাখেন।

পরে অনুষ্ঠানে আগত হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

(আল-আমিন এম তাওহীদ, ২৬অক্টোবর-২০১৮ইং)

SHARE