চালকের ফাঁসির বিধান না করার সমালোচনায় মওদুদ

অনলাইন ডেস্ক: ভোলানিউজ.কম,

প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে বেপরোয়া চালকের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড না করার সমালোচনা করেছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ। বলেছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেও সরকার যেটা করেছে, সেটা হলো ‘রাজনৈতিক প্রতারণা’।

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক মতবিনিময় সভা শেষে এক প্রশ্নে এ কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের আইনমন্ত্রী।

‘শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক নির্যাতন এবং বিএনপি নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা কেন?’-শীর্ষক এ মতবিনিময়ের আয়োজন করে ‘নাগরিক অধিকার আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন।

মওদুদ বলেন, ‘এর চেয়ে আর বড় প্রতারণা আর হতে পারে না। শিক্ষার্থীরা সড়কে হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে। কিন্তু আইন যা ছিল, তাই রাখা হয়েছে। আইনে শুধু পরিবর্তন হয়েছে- তিন বছরের জায়গায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং হত্যা যদি প্রমাণিত হয় তাহলে ফাঁসি হবে। এটা অসম্ভব।’

‘এটা কে, কীভাবে এবং কখন প্রমাণিত করবে? সুতরাং এটা একটা ফাঁকিবাজি। এই একই প্রতারণা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীর সাথেও করেছে সরকার।’

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যে নয়টি দাবি তোলা হয়েছিল, তার প্রথমেই ছিল বেপরোয়া চালকের মৃত্যুদণ্ডের বিধান। সোমবার মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের চূড়ান্ত খড়সায় ইচ্ছাকৃত হত্যা হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধানের কথা বলা আছে। তবে এটি বর্তমানের আইনেও আছে।

তবে বেপরোয়া চালনা বা অবহেলাজনিত মৃত্যুর জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং অনির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানার কথা বলা আছে।

সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকের মৃত্যুদণ্ডের বিধান পৃথিবীর কোথাও নেই। উপমহাদেশে কোনো দেশে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধানও নেই। তবে বাংলাদেশে ২০১১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিক মিশুক মুনীর ও চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের মৃত্যুর পর ফাঁসির দাবিটি সামনে আনে নাগরিক সমাজের একটি অংশ।

চালকরা অবশ্য এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান হলে তারা ঝুঁকি নিয়ে স্টিয়ারিংয়ে বসবেন না। ফলে সে ক্ষেত্রে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার আশঙ্কা রয়েছে।

সরকারের শেষ দেখছেন মওদুদ

বর্তমান সরকারের সরকার পরিবর্তনের শেষ সময় চলে এসেছে বলে মনে করেন মওদুদ। বলেন, ‘সময় আসছে, সেখানে সত্যিকার অর্থে একটা ঈমানি ভূমিকা পালন করতে হবে।’

‘তবে আমরা মাঝে মাঝে বুঝতে পারি, পুলিশ ও র‌্যাব আছে। কিন্তু সরকার আছে বলে মনে হয় না, সরকার নাই। যেটুকু আছে তার পরিবর্তনের সময় এখন এসে গেছে, শেষ সময় এসে গেছে।’

‘আমি অনেকদিন আগে একটি কথা বলেছিলাম, অতি দ্রুত রাজনীতিতে পরিবর্তন ঘটবে। কখন, কোথায়, কী ঘটবে আমরা কেউ তা জানি না। এইটুকু জানি এই সরকারের শেষ সময় এসে গেছে। দ্রুত বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন ঘটবে।’

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘এগুলো কী আমরা কখনও কল্পনা করতে পেরেছিলাম? আজকে এই ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসবে এটা কি আমরা কখনও ভেবেছিলাম? এটাকেই বলে প্রকৃতির আইন।’

সাংবাদিকদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অনেক সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু এরপরে শহিদুল আলমের ওপর যেই অত্যাচার হয়েছে এটা অকল্পনীয়। সরকার একদম বেপরোয়া হয়ে গেছে। সরকার বুঝতে পেরেছে জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আর নেই। জনগণের থেকে তারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’

‘এই উপলব্ধি আজকে তাদের মধ্যে এসেছে বলেই তারা হিংস্র ও নিষ্ঠুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে ২২ জন ছাত্রকে রিমান্ডে পাঠানোর পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিতে হবে।’

রাজধানীতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিটাকের গাড়িতে হামলা, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরি, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি, মধ্যপাড়ার কঠিন শিলা প্রকল্পের পাথরের হিসাব না মেলার ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার না করারও সমালোচনা করেন সাবেক আইনমন্ত্রী। বলেন, ‘দেশে সরকার থাকলে এগুলো হওয়ার কথা নয়।’

সিইসির আর পদে থাকা উচিত নয়

নির্বাচনে অনিয়ম হবে না, এমন নিশ্চয়তা দেয়া যায় না বলে বক্তব্য দেয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার আর পদে থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন মওদুদ।

সিইসির এই বক্তব্য বিবেকের তাড়নায় বলে মনে করেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘আজকে পত্রিকায় দেখলাম আরও চার জন নির্বাচন কমিশনার সিইসির বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন। এরপরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের তার নিজের পদে থাকার অধিকার থাকতে পারে না।’

আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ আলোচনায় বক্তব্য রাখেন।

(আল-আমিন এম তাওহীদ, ১০আগস্ট-২০১৮ইং)

SHARE