ডেস্ক: ভোলানিউজ.কম,
অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়ে দেশের ৬৪টি জেলায় মাদকবিরোধী বিশেষ আদালত গঠনের সুপারিশ করেছেন র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। মাদক মামলায় বন্দীদের জন্য বিশেষ জেল করারও দাবি তার। সেই সঙ্গে মাদক পাচারকারীদের মতো যারা মাদক সেবন করেন, তাদেরও একমাত্র সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান চাইছেন তিনি।
রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তব্য রাখছিলেন মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালানো বাহিনীটির প্রধান।
বেনজীর বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়ে দেশের ৬৪টি জেলায় মাদকবিরোধী বিশেষ আদালত গঠন করা যেতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে প্রতি জেলায় একটা করে তিন সদস্যবিশিষ্ট বিশেষ আদালত করা যেতে পারে।’
‘কারণ আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা মাত্র এক হাজার ৮০০। বিশেষ আদালতের জন্য নতুন করে নিয়োগ দিতে হলে অনেক দীর্ঘসূত্রতা দেখা যাবে। আমি বলব, বিশেষ আদালত করে তাদের বিচার করা হোক। বিচারে আসামি খালাস পাক, তারপরও বিচারটা হোক।’
মাদকের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত মে থেকে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে র্যাব ও পুলিশ। দুই শতাধিক সন্দেহভাজন মাদক কারবারি নিহত হওয়ার পাশাপাশি এই অভিযানে আটক হয়েছেন ৪০ হাজারের বেশি।
অভিযান শুরুর পর মাদকের মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টিও আলোচনায় আসে। ১০ হাজারেরও বেশি মামলায় বিচার করা যাচ্ছে না সাক্ষীর অভাবে। আর মামলায় ভারাক্রান্ত আদালতগুলো আলাদা করে মাদকের মামলায় বেশি সময় দেবে সেই সুযোগও নেই।
মাদক আইনে পরিবর্তনও জরুরি বলে মনে করেন র্যাব মহাপরিচালক। বলেন, ‘মাদকের একমাত্র শাস্তি হতে হবে মৃত্যুদণ্ড। মাদক বিক্রি, সেবন, সবক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ সাজার এই বিধান থাকতে হবে।’
বাংলাদেশে মাদকসেবীদের কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয় এই সংখ্যাটা ৭০ লাখের মতো। এর মধ্যে ৫০ লাখ আবার ইয়াবায় আক্রান্ত। র্যাব প্রধান বেনজীর সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, মাদকের পেছনে বছরে আসক্তরা খরচ করে এক লাখ কোটি টাকার মতো যা বাংলাদেশের সবশেষ উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ৫৬ শতাংশ।
মাদক নির্মূলে অভিযানের পাশাপাশি আসক্তদের পুনর্বাসনের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে না। একজন বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছেন, আসক্তি কাটানোর ব্যবস্থা না করলে কোনো না কোনোভাবে মাদক যোগাড় করে নেবে আসক্তরা। গড়ে উঠবে বিকল্প যোগানের চেইন।
বেনজীরও মনে করেন আসক্তদের পুনর্বাসন জরুরি। তিনি বলেন, ‘সময় এসেছে মাদক মামলায় বন্দীদের জন্য বিশেষ জেল করার। বঙ্গোপসাগরের কোনো দ্বীপ বা বিচ্ছিন্ন কোনো জায়গায় সে জেল হতে পারে। এতে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাটাও সহজ হবে।’
অভিযানের সমালোচকদের সমালোচনা
মাদকবিরোধী অভিযানে ব্যাপক প্রাণহানি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে গত মে মাস থেকেই। আর যারা সমালোচনা করেছেন, তাদেরকে এক হাত নেন র্যাব প্রধান।
সমালোচকদের উদ্দেশ্যে বেনজীর বলেন, ‘কোনোকিছু শুরু করলে এক শ্রেণির মানুষ চিৎকার শুরু করেন। তারা আসলে কী পেতে চায়?’
‘জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময়ও দেখেছি তারা রাতের পর রাত টেলিভিশনে বসে চিৎকার করছেন। তাদের মধ্য থেকে কলোনিজমের (উপনিবেশের) ক্ষতটা শুকায়নি। তারা অন্যের সুরে সুর মেলান, পুতুলনাচের মতো অন্যের ইশারায় নাচতে থাকেন।’
তাদেরকে বলব, ‘এই কলোনিজম মনোনিবেশ থেকে বেরিয়ে আসুন। বাংলাদেশে যে কয়বার জঙ্গিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে সেই কয়বার ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি।’
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন বললেন মাদক নিয়ে কাজ করতে তখন আমরা মাদকের বিরুদ্ধে নেমেছি। আমরা রাষ্ট্রের কর্মচারীরা দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে এই অভিযান শুরু করেছি। তারা কি মনে করেন, আমরা কিছু বুঝি না? চিৎকার করে লাভ নেই। এ যুদ্ধে আমরা বিজয়ী না হয়ে ঘরে ফিরব না।’
বেনজীবের দাবি এই অভিযান দেশের ১৬ কোটি মানুষ, সরকার ও রাষ্ট্রের চাহিদা। বলেন, ‘এ দেশে ইয়াবা ব্যবসার জন্য তো স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হননি।’
রিপোর্ট করুন, গডফাদারের হাত ভেঙে দেব
মাদক পাচারের রুট হিসেবে আলোচিত কক্সবাজারে গত ১০ বছরে মাদকের বিরুদ্ধে কোনো রিপোর্ট দেখেননি জানিয়ে আফসোসের কথা বলেন বেনজীর। গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেন, গডফাদার ও গডমাদারদের ভয়ে তারা রিপোর্ট করতে পারে না। আমি বলব, এখন রিপোর্ট করতে লোক পাঠান, রিপোর্ট করুন, আমরা গডফাদার ও গডমাদারদের হাত ভেঙে দেব।’
‘কক্সবাজারে র্যাবের সাতটি ক্যাম্প রয়েছে এতে করে সেখান থেকে ঢাকামুখী ইয়াবার চালান কমেছে। কিন্তু বেলুনের মতো আরেকদিকে ফুলে উঠেছে, এখন শুরু হয়েছে সিলেট রুটে। র্যাব-পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড সবাই মিলে আমরা ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করব। দেখতে চাই মাদক ব্যবসায়ীরা কোথায় যায়।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক এ এম এম এম আওরঙ্গজেব চৌধুরী, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সদস্য অরূপ রতন চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ২৯জুলাই-২০১৮ই)