প্রধানমন্ত্রীর তিন ‘দুঃখ’

অনলাইন ডেস্ক: ভোলানিউজ.কম,

বিদ্যুৎ ও পানির অপচয় আর নাগরিকদের যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার প্রবণতার কথা তুলে ধরে দুঃখবোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাগিদ দিয়েছেন এসব বদভ্যাস ছাড়ার।

শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পানি পরিশোধনে যে খরচ হয়, সে টাকাও নেয়া হয় না। কিন্তু এই ভর্তুকি ধীরে ধীরে তুলে দেয়া হবে। তাই ব্যবহারে মিতব্যয়ী হলে বিলও কম আসবে। অন্যদিকে নাগরিকদের পরিচ্ছন্ন থাকার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, এতে পরিবেশের পাশাপাশি মনও প্রফুল্ল থাকবে।

রাজধানীর মতিঝিল এবং আজিমপুর কলোনিতে সরকারি চাকুরেদের জন্য ১০টি বহুতল ভবনে প্রায় এক হাজার ফ্ল্যাটের উদ্বোধন করতে গিয়ে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

দুটি এলাকাতেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন সরকার প্রধান। এর মধ্যে মতিঝিলে চারটি ভবনে ৫৩২টি এবং আজিমপুর কলোনিতে ছয়টি ভবনে ৪৫৬ ফ্ল্যাট উদ্বোধন করেন তিনি।

শুরুতে প্রধানমন্ত্রী যান মতিঝিলে এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত উদ্বোধন পর্ব শেষে যান আজিমপুরে। সেখানে তিনি অন্যান্য নানা বিষয়ের পাশাপাশি সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর জোর দেন। আর দুটি এলাকাতেই পরিবেশ রক্ষা আর পানি বিদ্যুতের অপচয় নিয়ে কথা বলেন।

ঘরের বাইরে যাওয়ার আগে বিদ্যুতের সুইচ বন্ধ করুন

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের তীব্র সংকটের বিষয়টি তুলে ধরেন। জানান, সেখান থেকে উত্তরণে সরকারকে অনেক খরচ করতে হয়েছে। কিন্তু পুরো টাকা জনগণের কাছ থেকে নেয়া হয় না।

বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতে ভর্তুকি দিতে অর্থমন্ত্রী নানা সময় আপত্তি করেন। কিন্তু তিনি তাকে বলেন, কিছুদিন এটা সহ্য করতে হবে। ধীরে ধীরে কিছু সময় পর আর ভর্তুকি থাকবে না।

আর বিদ্যুতের বিল বাড়লে যেন কষ্ট না হয় সেজন্য মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘অন্তত ঘর থেকে বের হওয়ার সময় নিজের হাতে সুইচটা বন্ধ করে দিতে হবে। সেটা নিজের অফিসে হোক আর বাড়িতে হোক। সকলকে কিন্তু এই বিষয়টা বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।’

‘একেক ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতেও বহু টাকা খরচ হয়, আমরা কিন্তু সে টানা নিচ্ছি না।…হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে মানুষকে বিদ্যুৎ দিচ্ছি।

‘আপনি যদি সুইচটা বন্ধ করে রাখেন তাহলে বিদ্যুৎ বিলটাও কম হবে। আমরা এখন সবই ডিজিটালাইডজ করে দিচ্ছি। এখন আর বিদ্যুৎ বিল নিয়ে কেউ এদিক ওদিক করতে পারবেন না।’

পানির কল ছেড়ে কাজ করলে চলবে না

‘পানির জন্য হাহাকার ছিল। আমরা প্রথমবার এসে সায়দাবাদ ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট-১ করলাম, দ্বিতীয়বার এসে ২,৩ এবং আরও পানি ট্রিটম্যান্ট প্লান্ট করে দিচ্ছি।

‘একেক লিটার পানি পিউরিফাই করতে বহু টাকা খরচ হয়। …পানির সরবরাহটা বৃদ্ধি পাচ্ছে, পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।’

‘কল ছেড়ে রেখে পানি পড়তেই থাককে, পড়তেই থাকবে, পড়তেই থাকবে আর আপনি গায়ে সাবান মাখতেই থাকবেন মাখতেই থাকবেন তা যেন না হয়। বা কেউ দাঁড়ি কাটবেন কল ছাড়া বা ব্রাশ করতে থাকবেন কল ছাড়া-এটা অন্তত যেন না হয়।’

‘এখানে মগ ব্যবহার করতে হবে, বালতি ব্যবহার করতে হবে, পানির কল বন্ধ রাখতে হবে।’

নিজে পানি বাঁচাতে এটা করেন নিজে এটা করেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমি বালতিতে পানি নিয়ে গোসল করি। এতটুকু পানি যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য এটা আমি করি। কারণ আমি যখন মানুষকে উপদেশ দেব, সেটা নিজেকে সেটা ব্যবহার করতে হবে, নিজে আচরণ করতে হবে। নিজে অনুসরণ করে তারপর করতে হবে।’

অপচয় করলে ক্ষতিটা যে নিজেরই হয়, সেটিও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘পানির বিল কিন্তু আপনাকে দিতে হবে। যদি অপচয় করেন, তাহলেও আপনাকেই দিতে হবে।’

পরিচ্ছিন্নতা নিয়ে অসচেতনতায় দুঃখ

‘আমি খুব দুঃখ করে বলি আমাদের দেশের মানুষের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ধারণা একটু কম, এবং রাখেও কম’- আক্ষেপ করে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বলেন, ‘আপনার ফ্ল্যাট যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাক, সেটা আপনাকে নিজেকেই করতে হবে। নিজের কাজ নিজেই করতে হবে। নিজের কাজ নিজে করতে লজ্জার কিছু নেই।’

‘যেখানে সেখানে ছুড়ে ফেলে দেয়া আমাদের খুবই বদভ্যাস’- এ কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রান্নাবান্নার ময়লা জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেবেন, এটা যেন না হয়। একটা প্যাকেটে করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে আসবেন।’

‘আমি এই কথাগুলো বলছি কারণ আমার অভিজ্ঞতা আছে। গুলশানের মতো জায়গায় দুইটা ফ্ল্যাটের মাঝখানের জায়গা যদি আপনি দেখেন, দেখবেন সেখানে ময়লার ডিপো হয়ে গেছে।’

আর এই কাজ কেবল গৃহকর্ত্রী নয়, সবার দায়িত্ব সেটিও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘শুধু গিন্নির ওপর দায়িত্ব দিলে চলবে না, কর্তা, গিন্নি দুই জনকেই দেখতে হবে, সেটা কিন্তু বলে দিলাম।’

ঘরের পাশাপাশি বাইরেও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ‘অনেক ভদ্রলোক আছেন, খেলেন এক বোতল পানি, ওমনি নিচে ফেলে দিলেন, বা একটা প্যাকেট বাসে যেতে যেতে রাস্তায় ছুড়লেন। কলা খেয়ে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিলেন বাস থেকে, গাড়ি থেকে। এই অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে হবে।’

‘বাসে চলার সময় ময়লা ফেলে দেন, সেখানে আপনার গায়েই লাগতে পারে। আরেকজন যখন করবে, তখন আপনার নিজের ওপরই পড়বে।’

‘পরিচ্ছন্ন থাকতে খুব বেশি পয়সা লাগে না, কিছু আন্তরিকতা লাগে। পরিচ্ছন্ন থাকলে সকলের মন উৎফুল্ল থাকবে, ভালো থাকবে।’

বাচ্চারা ফার্মের মুরগির মতো হবে না

সরকারি চাকুরেরা জরাজীর্ণ ভবনে থাকতেন, সেটা জেনেই তাদের জন্য মানসম্মত আবাসন গড়ার উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান শেখ হাসিনা। আর নতুন ভবন করার সময় কিছু বিষয় নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি।

‘খেলার মাঠ থাকতে হবে, বাচ্চাদের জন্য খেলার মাঠ থাকবে, পার্ক থাকবে। অর্থাৎ ফ্ল্যাটের মধ্যে সারাক্ষণ ঘুরতে থাকবে না তারা। অর্থাৎ ফার্মের মুরগির মতো বাচ্চারা তৈরি হবে না। তারা পার্কের মধ্যে খেলবে, খেলাধুলা করবে।’

‘আপনারা পুরনো ভবনগুলো যখন ভাঙবেন, এটা দেখবেন। খেলার মাঠ থাকবে, জলাধার থাকবে। জলাধার থাকলে বাতাসটাও ঠান্ডা থাকবে। বয়স্কদের জন্য হাঁটার জায়গা থাকতে হবে।’

নির্মিত প্রতিটি ফ্ল্যাটে বারান্দা আছে জানিয়ে সেগুলোতে গাছ লাগানোরও তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।

‘একটা ফুলে গাছ লাগান, দরকার পড়লে একটা কাঁচামরিচের গাছ লাগান। খাওয়ার সময় একটা কাঁচামরিচ ছিড়ে খেতে মজাই লাগবে।…ফুল গাছ লাগলে দেখতেও সুন্দর লাগবে।’

(আল-আমিন এম তাওহীদ, ৭জুলাই-২০১৮ই)

SHARE