রাশেদ হোসেন রুবেলঃ
ভোলা নিউজ-২৭.০৬.১৮
স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাদক কারবারিদের তালিকায় ভোলার ১৫৪ জনের নাম রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ফলে তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও ১৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে একটি তালিকা প্রকাশ করে। এ তালিকায় ভোলায় হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা ও পেথিডিনসহ মাদক কারবারির সংখ্যা ১৫৪। তাদের মধ্যে প্রায় ৩০ জন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং ডজনখানেক বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাদের মধ্যে ২৬ জন ফেনসিডিল, সাতজন হেরোইন এবং বাকিরা ইয়াবা ও গাঁজা কারবারে যুক্ত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় এসব কারবারিকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।
এতে দেখা গেছে, বেশির ভাগ কোনো না কোনো রাজনীতির মতাদর্শে বিশ্বাসী। তাদের মধ্যে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের ছেলে, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, যুবদল ও তরুণ লীগের নেতারা রয়েছেন।
জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদদের দিক দিয়ে চরফ্যাশন উপজেলায় মাদক কারবারির সংখ্যা বেশি। তবে মাদক কারবারির সংখ্যায় ভোলা সদর উপজেলা এগিয়ে।
তালিকায় সদরে ৫৬, চরফ্যাশনে ২৮, মনপুরায় ২০, তজুমদ্দিনে ১০, লালমোহনে ১৮, দৌলতখানে পাঁচ ও বোরহানউদ্দীনে ১৭ জনের নাম রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভোলা দ্বীপ জেলা হওয়ায় একে দক্ষিণাঞ্চলের মাদকের রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ঢাকার মাদক কারবারিরা পটুয়াখালী, বরিশাল, বাউফল, হিজলা, মুলাদী ও মেহেন্দীগঞ্জের জন্য ভোলাকে ব্যবহার করে। এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে স্থানীয় সহস্রাধিক মাদক কারবারি।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনে কারবারিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের দেখেও না দেখার ভান করছে ভোলা জেলা পুলিশ। অথচ পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিদিন গ্রেপ্তার হচ্ছে মাদক কারবারিরা। কিন্তু তালিকাভুক্তদের মধ্য থেকে ৫ শতাংশও আটক করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাদকবিরোধী চলমান অভিযানে গত মে মাসে মামলা হয়েছে ১৪৩টি। এ মামলায় এজাহারভুক্ত ১৮৭ আসামির মধ্যে ১৭৫ জনই গ্রেপ্তার হয়েছে। এ সময় দুই হাজার ৭৯৮টি ইয়াবা ও ১৩ কেজি গাঁজা, ২৪ ক্যান বিদেশি বিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে।
২০১৬ সালের জুন থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ভোলায় মাদক মামলা হয়েছে এক হাজার ১৮৪টি। এজাহারভুক্ত এক হাজার ৫৭২ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে এক হাজার ৪৭২ জন। এ অভিযানে ৩২ হাজার ৭৯৬টি ইয়াবা ও ১০৮ বোতল ফেনসিডিল, প্রায় ১৭০ কেজি গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাফিন মাহমুদ বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদক কারবারিদের জন্য এখন পুলিশ আতঙ্কের নাম। কেউই আমাদের কাছ থেকে রেহাই পাবে না। এরই মধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবার অনেকে নজরদারিতে আছে। কিছু নিয়ম-কানুন মেনে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। হাতেনাতে মাদক না পাওয়া গেলে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না।