সমালোচনা করুক, অভিযান চলবে: কাদের

ডেস্ক: অনলাইন-ভোলানিউজ.কম,

চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে প্রাণহানির পর বন্দুকের ব্যবহার নিয়ে যে সমালোচনা উঠেছে, তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, সমালোচনাকারীরা সমালোচনা করুক, সরকার অভিযান চালিয়ে যাবে।

বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানে জাতিসংঘ নজর রাখছে বলে যে খবর এসেছে, সে বিষয়েও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর জবাব একই: ‘পর্যবেক্ষণের করছে, করুক।’

রবিবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের প্যাকেজ-৭ এর চুক্তি সই অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন কাদের।

গত ৪ মে থেকে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানে ১২৫ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় তুমুল সমালোচনা চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদিও দাবি করছে, এদের মৃত্যু হয়েছে বন্দুকযুদ্ধে আত্মরক্ষায় পাল্টা গুলিতে, তারপরও এই বর্ণনা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য হয়নি জনমনে। বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হক নিহতের সময়কার ঘটনার সময়কার অডিও রেকর্ড হিসেবে যেটি প্রকাশ হয়েছে, সেটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। এটি ওই ঘটনার অডিও রেকর্ড হলে এটা স্পষ্ট, একরামুল নিহত হয়েছেন একতরফা গুলিতে।

একরামুল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। তার মৃত্যুর পর দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি ইয়াবা চক্রের হোতা ছিলেন-এমন অভিযোগও বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে তা তার আর্থিক অসঙ্গতির কারণে।

আগের দিন সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, বড় অভিযানে একটা-দুইটা ভুল হতেই পারে।

বন্দুকযুদ্ধকে বিচারবহির্ভূত হত্যা বলে বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে আজ কাদের বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা তাদের বিবৃতি দিতেই পারেন। সমালোচনা করার অধিকার সবারই রয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করছি মাদকবিরোধী অভিযান সর্বাত্মক রূপ নিয়েছে, দেশের জনগণ খুশি।’

‘কারণ দেশের তরুণ সমাজকে ধ্বংস করছে যে মাদক, তা থেকে তাদের (তরুণ) রক্ষা করার জন্য এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। কাজে সমালোচকরা সমালোচনা করুক। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি দেশের জনগণ ও ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে।’

‘কারণ তরুণরাই হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ, তারা ধ্বংস হলে দেশের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা অভিযান দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে চালিয়ে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশের মাদকবিরোধী অভিযানে নজর রাখার কথা জানিয়ে জাতিসংঘের মাদক অপরাধবিরোধী সংস্থা ইউএনওডিসিও। তারা মাদক নিয়ন্ত্রণে ভারসাম্য ও মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।

‘জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণের অধিকার রয়েছে’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণের অধিকার রয়েছে, তা তারা করুক। আমাদের বিদেশি কোনো বন্ধুদের পর্যবেক্ষণের করতে চাইলে করুক। কারও চাপের কাছে আমরা নতি স্বীকার করব না, নতি স্বীকার করব বাংলাদেশের জনগণের চাপে।’

এই অভিযান কতদিন চলবে-এমন প্রশ্নে সড়ক মন্ত্রী বলেন, ‘যতদিন প্রয়োজন হয় অভিযান চলবে, যতক্ষণ না সর্বনাশা মাদকের ছোবলকে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়।’

‘সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়ায় বিএনপির গাত্রদাহ’

মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও কাদের দাবি করেন, এই অভিযানের কারণে সরকারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

‘যখন এ অভিযান জনগণের প্রশংসা কুড়াচ্ছে, জনগণ খুশি এবং এ অভিযানে সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে তাই স্বাভাবিক কারণেই বিএনপির গাত্রদাহ শুরু হয়ে গেছে।’

‘সরকারের ভালো কাজে জনপ্রিয়তা বাড়ছে তা তারা সইতে পারছে না, হজম করতে পারছে না। তাই বিএনপি এ অভিযানের বিরুদ্ধে যা খুশি তা বলে বেড়াচ্ছে।’

একরাম নির্দোষ হলে বিচার হবে

কক্সবাজারে নিহত একরামুল হক নির্দোষ হলে তার নিহতের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে জানিয়ে দেন কাদের।

‘একরাম আমাদের দলের কর্মী। একরামের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমি বলেছি। যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় একরাম নির্দোষ, ওখানে যারা তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন তারাই দোষী হিসাবে সাব্যস্ত হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া হবে।’

এ ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনে জড়িত র‌্যাব-পুলিশ সদস্যদের ফাঁসিসহ নানা মেয়াদের রায়ের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন সড়ক মন্ত্রী।

‘নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় কি র‌্যাবের বড় অফিসাররা বাদ গেছে নেটের (জাল) বাহিরে? তাদের ফাঁসির অর্ডারও হয়েছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’

অপর এক প্রশ্নে কক্সবাজারের টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি যে ইয়াবার গডফাদার, তার কী প্রমাণ, তা জানতে চান ওবায়দুল কাদের।

‘দুর্নীতিবিরোধী অভিযান তো চলছে’

ঈদের পরে দেশব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হবে বলে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান তো চলছেই।’

‘দুদককে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। দুর্নীতিবাজ রাঘববোয়াল হোক, চুনোপুটি হোক তাকে ধরার জন্য জাল বিছানো হয়েছে।’

‘দুদককে স্বাধীনতা দেয়ার কারণেই আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যদের তলব করা হচ্ছে। কাজেই দুদকের স্বীধনতা আছে এবং তা কাজে লাগাবে বলে আমরা আশা করছি।’

(আল-আমিন এম তাওহীদ, ৩জুন-২০১৮ইং)

SHARE