পাগল পাগল মানুষগুলো/ পাগল সারা দুনিয়া/ কেহ পাগল রুপ দেখিয়া/ কেহ পাগল শুনিয়া। যুগে যুগে সমাজে বহু পাগলের আবির্ভাব দেখা যায়? এ কারণেই হয়তো পাগলকে নিয়ে কবি এভাবে তার কাব্য রচনা করেছেন। আর এতে সুরকার সুর দিয়ে শ্রুতিমধুর করে তুলেছেন।
সমাজে নানা ধরনের পাগল দেখা যায়। কেউ হাসতে পাগল। কেউ হাসাতে পাগল। কেউ কাঁদতে পাগল। কেউ কাঁদাতে পাগল। আবার কেউ খেতে পাগল। কেউ খাওয়াতে পাগল। কেউ দিতে পাগল। কেউ নিতে পাগল। কেউ টাকার পাগল। কেউ টাকা বিলাতে পাগল। কেউ আবার অন্যকে ঘায়েল করতে পাগল।
কেউ দেখে পাগল। কেউ শুনে পাগল। কেউ নাচতে পাগল। কেউ নাচাতে পাগল। কেউ ধরতে পাগল। কেউ ছাড়তে পাগল। কেউ বলতে পাগল। কেউ বলাতে পাগল। কেউ নেশার পাগল। কেউ নেশা তাড়াতে পাগল। কেউ লোক দেখাতে পাগল। কেউ লোক হাসাতে পাগল।
কেউ ভালোবাসার পাগল। কেউ প্রেমের পাগল। কেউ বিরহে পাগল। কেউ আবেগে পাগল। কেউ সুখে পাগল। কেউ দুখে পাগল। কেউ প্রভাব আকড়ে রাখতে পাগল। কেউবা প্রভাব কেড়ে নিতে পাগল। কেউ অভাবে পাগল। কেউ স্বভাবে পাগল।
এই স্বভাবে পাগল নিয়েই হলো যত সমস্যা। এ ধরনের পাগল নিজেরটা ষোল আনা বুঝে। আর নিজে যা বুঝে তা-ই ফাইনাল। এখানে অন্য কোনো কথা চলবে না। এ ধরনের পাগলের কিছু সমর্থকও থাকে। যারা তাকে সমর্থন দিয়ে আরও পাগল বানিয়ে ফেলে। অবশ্য তারা নিজেকে পাগল বলতে রাজি নন। মানতেও রাজি নন।
এ জাতীয় পাগলরা সবকিছুতে নাক গলাতে ওস্তাদ। যেকোনো বিষয়ে বাম হাত ঢুকিয়ে দেয়। এতে মূল বিষয় হয়ে পড়ে দূষিত। নিজের পান্ডিত্য জাহির করতে নানা কসরত করে। তাদের এ কসরত দেখে হাসেন সবাই।
এ ধরনের পাগল সমাজটাকে একেবারে নষ্ট করে দিচ্ছে। তাদের কিছুতেই বোধদয় হয় না। বরং এমন পাগল হতে পেরে নিজেকে নিয়ে গর্ব করেন। কখনো কখনো উদাহরণ দেন, সম্রাট শাহজাহান যদি স্ত্রীর জন্য পাগল হয়ে তাঁজমহল বানাতে পারেন তাহলে আমরা পাগল হলে সমস্যা কি?
পরক্ষণেই কেউ যদি তাকে পাগল বলেন, এতেও ক্ষিপ্ত হন তিনি। বলেন, আমি পাগল কে বলেছে? এটা বলা অন্যায়। মহাপাপ। আসলে পৃথিবীতে বার রকমের পাগলের বসবাস। প্রত্যেকেই কোনো না কোনো ভাবে পাগল।
তবে প্রশ্ন হলো- পাগলের বিষয় নিয়ে। সমাজে দেখা যায়, কেউ নিজের খেয়ে অন্যের মঙ্গলের জন্য পাগল। নানাভাবে তারা সমাজের জন্য পাগল হয়ে কাজ করছেন। আবার কেউ পাগল হয়ে বৃদ্ধাশ্রম খুলেছেন। সন্তান কর্তৃক বিতাড়িত অনেক বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন।
তাদের নিয়েই এ ধরনের পাগলের সংসার। এমন পাগলকে মানুষ শ্রদ্ধা করেন মন থেকে। আবার কেউ অসুস্থ রোগীকে সুস্থ করতে পাগল। নিজের টাকা দিয়ে অসহায় রোগীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। কেউবা মানুষের সহায়তায় এ দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।
আবার কেউ ভালোবাসা বিলিয়ে দিতে পাগল। ভালোবাসা দিয়ে সমাজকে বদলে দেয়ার চেষ্টা করেন এ ধরনের পাগলরা। আবার কেউ আছেন স্বার্থ যেখানে তিনি সেখানে। স্বার্থের হেরফের হলেই ক্ষেপে যান। তখন যা ইচ্ছা তাই করেন। কেউ আবার ধান্ধার পাগল। দিনরাত তিনি ধান্ধার পেছনে ছুটেন।
আসলে আমরা সবাই পাগল। কিন্তু কে কোন ধরনের পাগল সেটাই হলো বিষয়। এ কারণেই হয়তো কবি লিখেছেন- পাগল পাগল মানুষগুলো/ পাগল সারা দুনিয়া।