ভোলায় আতংক স্বর্ণ ব্যবসায়ী দ্বীপক নাগ ৩ কোটি টাকা নিয়ে উদাও

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ভোলা নিউজ-২৩.০৪.১৮

ভোলা শহরের বিশিষ্ট স্বর্ণ ব্যবসায়ী, কণ্ঠ শিল্পী বৃষ্টি নাগ ও ওয়েষ্টার্ণ পাড়ার ইয়াবা সম্রাট অমিত নাগের বাবা দ্বীপক নাগ প্রায় ৩ কোটি টাকা নিয়ে স্ব-পরিবারে ভোলা থেকে উধাও হয়ে গেছে। দ্বীপক নাগ চলে যাওয়ায় যারা তার সাথে লেন দেন করেছেন এদের অনেকেই অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন বলে বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় ভোলার স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত শনিবার সকালে তারা স্ব-পরিবারে ভোলা ত্যাগ করেছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, ভোলা শহরের ওয়েষ্টার্ণ পাড়ার স্বর্ণ ব্যাবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম ছিল নাগ পরিবার। সেই নাগ পরিবারের একজন দ্বীপক নাগ। শহরের ওয়েষ্টার্ণ পাড়ার নাগ অলংকার নিকেতনের স্বত্ত্বাধিকারী ছিলেন তিনি। তার সাথে ভোলা শহর এবং জেলার অন্যান্য উপজেলার একাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর সাথে ব্যাবসায়ীক সম্পর্ক ছিল। দীর্ঘদিন যাবত ভোলার ব্যবসায়ীরা তার সাথে স্বর্ণ ব্যবসার কারবার করতো। এছাড়াও ভোলা শহরের অনেক ব্যবসায়ীরা তার কাছে টাকার বিনিময়ে স্বর্ণ বন্দক রাখতো। এছাড়াও অনেক লোক তার কাছে টাকা রাখতো লাভের আশায়। তাদের টাকা ও ব্যাবসায়ীদের রক্ষিত স্বর্ণালংকার নিয়ে গত শনিবার সকালে স্ব-পরিবারে ভোলা থেকে উধাও হয়ে গেছেন। সবাই বলছেন দ্বীপক নাগ ভোলা থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা নিয়ে ইন্ডিয়ায় চলে গেছেন।

ভোলা শহরের অফিসার পাড়ার আসমা আক্তার নামের এক গৃহিনী জানান, তিনি দ্বীপক নাগের কাছে প্রায় ২০ লাখ টাকা এবং ৫ ভড়ি স্বর্ণ জমা রেখেছিলেন লাভের আশায়। তার ওই টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে দ্বীপক ভোলা ছেড়েছেন। তিনি আরো বলেন শুধু আমি একা নই। আমার মত শহরের আরো ৩০ থেকে ৪০ জনের কাছ থেকে এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ইন্ডিয়ায় অবস্থান করছেন। টাকা ও স্বর্ণালংকার হারিয়ে তিনি এখন পাগল প্রায়।

শহরের খেয়াঘাট রোডের সেতারা মঞ্জিলের বাসিন্দার কাছ থেকেও নগদ ৪লাখ টাকা ও ৬ ভড়ি স্বর্ণ নিয়ে গেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। আলীনগর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সাহেব আলী চৌকিদারের স্ত্রীরও কাছ থেকে নগদ ৫ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে উধাও হয়েছেন এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এছাড়া বোরহানউদ্দিনের মেজবাহ উদ্দিন স¤্রাট জানান, তিনিও দ্বীপক নাগের কাছে ৪ ভড়ি পুরাতন স্বর্ণ ও নগদ ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা জমা রাখেন। পুরাতন স্বর্ণ ও নগদ টাকা দিয়ে তাকে নতুন মডেলের জিনিস বানিয়ে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু দ্বীপক নাগ উধাও হওয়ায় তিনি এখন হতাশায় ভুগছেন। কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।

সূত্রে আরো জানা যায়, স্বর্ণ ব্যবসায়ী দ্বীপক নাগ ভোলা থেকে উধাও হয়ার আগে তিনি একে একে পরিবারের সবাইকে ইন্ডিয়ায় পাঠিয়ে দেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে দ্বীপকের পরিবারকে ভোলা থেকে যেতে দেখেছেন ওয়েষ্টার্ণ পাড়ার জাকির হোসেন নামের এক ঔষধ ব্যবসায়ী। দ্বীপক যে ভোলা থেকে উধাও হচ্ছেন এ বিষয়টি তখন তিনি বুঝতে পারেন নি। তবে গত শনিবার যখন দ্বীপকের ওয়েষ্টার্ণ পাড়ার দোকান বন্ধ থাকায় সবার সন্দেহ ঘনিভুত হয়। এ খবর এক কান থেকে দু’কান হলে ভোলা শহরে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তারপর থেকে নাগের ভাড়া বাসায় পাওনা দাররা ছুটে আসতে থাকেন। কিন্তু তখন আর কি করা। সবাই এসে দেখেন বাসা বন্ধ। এ খবর শুনে শহরের শত শত মানুষ ওয়েষ্টার্ণ পাড়ায় ছুটে আসেন বিষয়টি দেখতে ও শুনতে। তখন ওয়েষ্টার্ণ পাড়া লোকে লোকারণ্যে পরিনত হয়। কেউ কেউ তার ব্যবসায়ীক দোকানে তালাও মেরেছেন। সূত্রে আরো জানা যায়, দ্বীপকের বড় ছেলে অমিত নাগ ভোলা শহরে ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। তার কারণে ওয়েষ্টার্ণ পাড়ার অনেক ছেলে বখাটে পরিনত হয়েছে। এছাড়া শহরের বেশ কয়েকজন ভিআইপি’র কাছ থেকেও টাকা নিয়েছেন। তবে তারা লোক-লজ্জার কারণে মুখ খুলতে পারছেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোলা শহরের একাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ী জানান, দ্বীপক নাগের কাছে ভোলার অনেক ব্যবসায়ী (কেউ ৫ লাখ, কেউ ১০ লাখ, কেউ ২০ লাখ, কেউ ৩০ লাখ, কেউবা তার চেয়ে বেশি) টাকা পেত। সব ব্যবসায়ীকে দ্বীপক নাগ টাকা দেই দিচ্ছি বলে কাল ক্ষেপনের মাধ্যমে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে ইন্ডিয়া চলে গেছেন। এতে করে ভোলার স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং হুন্ডি ব্যবসায়ীরা এখন পথে বসে গেছেন। দ্বীপক চলে যাওয়ায় ভোলার স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মাঝে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুধু ব্যবসায়ী নয় একাধিক লোকের কাছ থেকে দ্বীপক নাগ প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ইন্ডিয়া চলে গেছেন।

ভোলা জেলা স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অবিনাষ নন্দি’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এমন খবর শুনেছি। তবে আমাদের কাছে কেউ এখনও অভিযোগ দায়ের করেনি।

ভোলা মডেল থানার ওসি ছগীর মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি এমন খবর শুনিনি। বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি। কারো লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

SHARE