“প্লাস্টিক” এ মরণ ফাঁদ

 

।। তাইফুর সরোয়ার।।

দৈনন্দিন জীবনে আমরা সবাই কম বেশি প্লাস্টিক পন্য ব্যবহার করে থাকি। সচেতন মানুষ মাত্রই প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেখে উদ্বীগ্ন হয়। কিন্তু প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের জীবন জুড়ে থাকা প্লাস্টিক আমরা কেন বা কী ভাবে বর্জন করব, এটা একটা বড় প্রশ্ন ।

আসলে প্লাস্টিক হল বেশ কিছু যৌগের পলিমার রূপ। এই যৌগগুলি মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়া তৈরি করে। প্লাস্টিকের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল, এটি ‘বায়োডিগ্রেডেবল’ নয় অর্থাৎ প্রকৃতিতে মিশে যায় না। পৃথিবীতে প্রথম তৈরি প্লাস্টিকটিও আজও ধ্বংস হয়নি। প্লাস্টিকের বোতল বা ডায়াপারে বহুল ব্যবহৃত বিসফেনল ‘এ’, থ্যালেট প্রজননতন্ত্রের ক্ষতি করে। প্লাস্টিকের কাপে বা অন্য পাত্রে গরম পানীয় বা খাবার খেলে তার থেকে যে ডাইঅক্সিন শরীরে ঢোকে তা প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিয়ে দেয়, মহিলাদের বন্ধ্যত্ব ঘটায়। এ ছাড়াও ‘এন্ডোক্রিন ডিজ়রাপটার’ রাসায়নিকগুলি দেহের হরমোনের কাজে ব্যাঘাত ঘটায় । ব্যবহৃত প্রায় সব প্লাস্টিকের সামগ্রিতেই লুকিয়ে রয়েছে একটি বিষ, যার নাম এক্সেনোস্ট্রেজেন। এটি শরীরে প্রবেশ করা মাত্র ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে হরমোনাল ইমব্যালেন্স দেখা দেওয়ার কারণে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়। প্লাস্টিকের বোতল থেকে শুরু করে থালা, বাটিতে উপস্থিত থাকে এই কেমিক্যালটি। তাই তো এমন বাসন বা বোতল ব্যবহার করা মাত্র খাবারে এক্সেনোস্ট্রেজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে এমন পানি, ভাত বা অন্য কোনও খাবার দীর্ঘ দিন ধরে খেয়ে গেলে শরীরের অবনতি ঘটতে শুরু করে। বাজারে বিক্রি হওয়া প্রায় সব ধরনের প্লস্টিকের সামগ্রিতেই এই উপাদানটি উপস্থিত থাকে। এমনকী যেসব প্লাস্টিকের বাসন পত্রে “বি পি এ” ফ্রি লেখা থাকে সেগুলিতেও এক্সেনোস্ট্রেজেনের মাত্রা বিপদ সীমার উপরে থাকে। ফলে এমন প্লাস্টিকের জিনিস ব্যবহার দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।পলিথিন ও প্লাস্টিকের পাত্রে খাদ্য দ্রব্য পরিবহন ও সংরক্ষণের দ্বারাও খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে মানুষের শরীরে পরোক্ষভাবে ঢুকছে প্লাস্টিকের বিষ।

প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ কমাতে পুড়িয়ে ফেলাও বিপজ্জনক। কারণ তা মারাত্মক বায়ুদূষণ করে যাতে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি এমনকি ক্যানসার অবধি হতে পারে। এই বর্জ্য প্লাস্টিকের কারণে তৈরি মিথেন, ইথিলিনের মতো ‘গ্রিনহাউস গ্যাস’ উষ্ণায়ণে প্রত্যক্ষ কুপ্রভাব ফেলে।

প্লাস্টিক থেকে অল্প বৃষ্টিতে পানি জমা, বন্যা, তার থেকে পানি, মাটি, বাতাসের দূষণ- এ সবও ঘটে। জমিতে বা মাটিতে প্লাস্টিক জমে থাকলে বলে জমির উর্বরতা হ্রাস পায়, গাছের ক্ষতি হয়, মাটির নীচে পানি ঢুকতে বাধা পায়।

নিজেদের সুস্বাস্থ্য এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে কালবিলম্ব না করে প্লাস্টিকের ব্যবহার সীমিত করতে হবে। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে কাঁচ, এলুমিনিয়াম, কাঠ ও পাটের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্লাস্টিকের উপর নির্ভরতা কমাতে কাঁচ, এলুমিনিয়াম, কাঠ ও পাটের তৈরি পন্য সহজলভ্য এবং সর্বক্ষেত্রে ব্যবহার নিশ্চত করতে সরকার ও জনগনকে স্বতস্ফুর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

তথ্যসূত্রঃ
বিবিসি নিউজ, আনন্দবাজার পত্রিকা, ডয়েচ ভেলে, প্রথমআলো, ইনকিলাব ও ইন্টারনেট।

SHARE