পাশে দাঁড়ানোর সঠিক সময় এখনই 

। তাইফুর সরোয়ার।।

দেশে করোনা ভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি না কমায় গত ১লা জুলাই ২০২১ ইং থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। গত সোমবার চলমান কঠোর বিধি-নিষেধ ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। লকডাউনে জরুরি সেবা প্রদানের সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তর-সংস্থা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস, যন্ত্র চালিত যানবাহন, শপিং মল দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। বিধি নিষেধ বাস্তবায়ন ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মাঠে রয়েছেন সেনাবাহিনী। বিনা প্রয়োজনে বের হলেই জরিমানা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে।

করোনা সংক্রমণের পর থেকেই দেশের সিংহভাগ মানুষের আয় কমে গেছে। কর্ম হারিয়ে অনেকেই বেকার জীবন যাপন করছেন। অধিকাংশ ব্যবসায়ীই তাদের পূঁজি ভেঙে খাচ্ছেন। ধার কর্য করে, অল্প স্বল্প রোজগার দিয়ে কোন রকম দিনাতিপাত করছিল দেশের গরীব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষগুলো। ১লা জুলাই থেকে আরম্ভ হওয়া কঠোর লকডাউন এই শ্রেণির মানুষদের জন্য যেন “মরার উপর খাড়াঁর ঘা” হয়ে দাড়িঁয়েছে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো কর্ম হারিয়ে এখন ঘরবন্দী। অনাহারে অর্ধাহারে কাটছে তাদের দিন। অধিকাংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের কষ্টের করুণ আর্তনাদ চাপা পরে যাচ্ছে লজ্জা নামক এক অদৃশ্য কাঁটা তারে। তারা না পারছেন কারো কাছে হাত পাততে, না পারছেন নিজেদের অভাব মিটাতে।

গত বছর করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ সরকার, বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন এবং ব্যক্তি পর্যায় থেকে অনেক ত্রান ও অর্থিক সহায়তা পেয়েছিল। নিজ নিজ জায়গা থেকে অনেকেই অসহায় গরীব মানুষদের কিছু না কিছু সাহায্য করার চেষ্টা করেছিল। গরীব ভিক্ষুক নাজিম উদ্দীন তার ঘর মেরামতের জন্য জমানো টাকা তুলে দিয়েছিল সরকারি কোষাগারে, অনেক স্কুল শিক্ষার্থী তাদের মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা নিয়ে দাঁড়িয়েছিল অসহায় মানুষদের পাশে। ঈদে নতুন জামা না কিনে অনেকেই সেই টাকা দিয়ে খাদ্য সামগ্রী কিনে পৌছে দিয়েছিল অনেক অনাহারী অর্ধাহারী পরিবারে। কিন্তু এই বার করোনার ২য় ঢেউ এ ত্রান ও অর্থিক সহায়তা তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। সরকার থেকে কিছু সহায়তা করা হচ্ছে যা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। বেসরকারি সংগঠন এবং ব্যক্তি পর্যায় থেকে ত্রান এবং অর্থিক সহায়তাও খুব সামান্য দেখা যাচ্ছে।

করোনা সংক্রমণের মাত্রা কমাতে লকডাউনকে সর্বচ্চো কার্যকর করতে মানুষকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে, ঘরে থাকতে হবে। কিন্তু অনাহারী অর্ধাহারী মানুষকে আইনের ভয় দেখিয়ে কত দিন ঘরবন্দী করে রাখা যাবে? মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা নিশ্চত করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে আরও এগিয়ে আসতে হবে। সামর্থ্যবান প্রত্যেককেই তার নিকটতম অসহায় মানুষদের খোঁজ খবর নিতে হবে। সাহায্য সহোযোগিতা করতে হবে সাধ্য মত।

এখনই সঠিক সময় – অসহায় গরীব মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর, নিজের মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করার, “মানবতা যে শুধু ফাঁকা কোন বুলি নয়” তা প্রমান করার। করোনা সংক্রমণের তীব্রতা কমে যাবে এক সময়, ইনশাআল্লাহ। আঁধার কেটে উঠবে সোনালী সূর্য। আজকের দুর্দিনে একটু সহোযোগিতা, সামান্য ভালোবাসা, পাশে দাঁড়ানোর প্রয়াসগুলোই হয়ে থাকবে আগামীর প্রেরণা।

SHARE