‘তিস্তার পানি পাওয়া সহজ হবে না’

ডেস্ক: অনলাইন-ভোলানিউজ.কম,

বহুল আলোচিত তিস্তার পানি পাওয়া বাংলাদেশের জন্য এতটা সহজ হবে না বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক বিগ্রেডিয়ার (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সম্মতি ছাড়া তিস্তার পানি আসবে না, আর মমতা এত সহজেই এতে সম্মত হবে না বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।

শনিবার রাতে চ্যানেল আইয়ের নিয়মিত আয়োজন ‘আজকের সংবাদপত্রে’ অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন মীর মাসরুর জামান।

গত শুক্রবার দুই দিনের সফরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও ছিলেন।

এই সফরে নরেন্দ্র মোদি এবং মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন শেখ হাসিনা। এই সফরে তিস্তার প্রসঙ্গ আলোচনা হবে না বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আগেই জানানো হয়েছিল। তবে ভারতের দুই নেতার সঙ্গে একান্ত আলোচনায় শেখ হাসিনা এই প্রসঙ্গটিও তুলেন বলে সূত্রে জানা গেছে। যদিও এ ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার মতো কোনো আশ্বাস মিলেনি।

প্রধানমন্ত্রীর পশ্চিমবঙ্গ সফর নিয়ে আলোচনার শুরুতেই ডি-লিট পদক পাওয়ার বিষয়টি আসে। এ ব্যাপারে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এটা বেশ আলোচিত বিষয়। প্রথমত হলো শান্তি নিকেতনে বাংলাদেশ ভবন যেটা তৈরি হয়েছে এটা আমাদের সরকারের তরফ থেকে ভালো উদ্যোগ। একইসঙ্গে বলবো শান্তিনিকেতন কর্তৃপক্ষ এবং ভারত যে আন্তরিকতা দেখিয়েছে এটা আমার মনে হয় খুব ভালো। কারণ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যতগুলো সুফল এসেছে এর মধ্যে একটা হলো বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে যাওয়া। দেশ স্বাধীন না হলে এটা সম্ভব হতো না। আর যেহেতু শান্তিনিকেতনকে ধরা হয় বাঙালিদের ঐতিহ্যের জায়গা, আগে অনেকটা অরক্ষিত মনে হয়েছিল, সেদিক থেকে এই সেন্টারটা এখন কাজ করবে। সেখানে ভাষা চর্চা হবে।’

এই বিশ্লেষক বলেন, ‘একইসঙ্গে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে সরকারের সম্পর্ক এর থেকে উচ্চ পর্যায়ে আগে ছিল না। সেদিক থেকে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা পররাষ্ট্রনীতির পিলার বলবো, সেই সঙ্গে সমৃদ্ধির বিষয়ে এক ধরনের সহযোগিতার বিষয় আছে। ভারত অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি দেশ। সেখানে যদি আমাদের অর্থনৈতিক জোনকেন্দ্রিক মার্কেট হয় সেটা ভালো। কিন্তু এখন পর্যন্ত সবকিছু বিচার বিবেচনা করে ব্যবসার কথা বলি তাহলে আমাদের পাল্লা খুব নিচে। ভারতের পাল্লা খুব উপরে।’

‘আমি যদি বাংলাদেশে ভারতীয় ব্যবসা, পণ্য, বাণিজ্য, লগ্নির কথা বলি সেটা অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে এখানে বেশি। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও গত ৩০-৩৫ বছরের চেয়ে অনেক ভালো। সে হিসেবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’

সাখাওয়াত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সফরে আর যে দুটি বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে এর মধ্যে একটি হলো রোহিঙ্গা ইস্যু। আমরা মনে হয় এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছি। তারা (ভারত) ডিপ্লোমেটিকভাবে বলছে এই ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে আছে। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে ভারতের যে চাপ দেবে আমার কাছে সেটা মনে হয় না। নিজেদের স্বার্থে ভারত এটা করবে না। এটা হয়তো ডিপ্লোমেটিক কথাবার্তার মধ্যেই থাকবে। এটা মনে হয় আমাদের সরকার, প্রধানমন্ত্রীও ভালো করে জানেন। তবুও তিনি এটা উল্লেখ করেছেন।’

‘আর একটা বিষয় যেটা আমাদের সব থেকে বড় সমস্যা তিস্তার পানি। তিস্তার পানির বিষয় আমার যা মনে হয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে পানি পাওয়া আমাদের জন্য সহজ হবে না। এখানে দুটো দিক- এক হলো- রাজনৈতিক  অন্যটা হলো- তাদের অর্থনৈতিক দিক।’

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পশ্চিম বাংলার উত্তরবঙ্গ এখনো অর্থনৈতিকভাবে ভারতের অন্যান্য দিকের মতো উন্নত নয়। অনেক জায়গায় অনুন্নত অবস্থায় আছে। সেই জায়গায় রাজনৈতিকভাবে মমতা ব্যানার্জি মনে করেন এটা তার হাতে একটা বড় টুল। তিনি সবসময় বলেন, আগে আমাদের পানি বুঝে নিয়ে পরে চিন্তা করবো। তিস্তার উজানে অনেকগুলো বাঁধ দিয়ে ইতিমধ্যে কিন্তু পানি ডাইভার্ড করা হয়েছে। এছাড়া ভারতে যে আন্তঃনদী সংযোগ এটা আমরা মাঝে মাঝে ভুলে যাই, সেটা কিন্তু ফ্যাক্ট অফ রিয়েলিটি। সেখানে আমরা এত সহজে তিস্তার পানি আমরা পাবো বা এটার সমাধান হবে আমি মনে করি না। আবার পানি যে নেই সেটাও কিন্তু বড় ফ্যাক্টর। সেই দিক থেকে তিস্তার পানি নিয়ে আশাবাদী হওয়া যাবে না।’

শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদে রেখেছে মিয়ানমার- গণমাধ্যমের এমন সংবাদের বিষয়ে উপস্থাপক জানতে চাইলে সাখাওয়াত বলেন, ‘আমি জানি না এই খবরের সূত্র কোথায় পেয়েছে। মিয়ানমার হলো সাপ্লাইয়ার। এখন সেটা মিয়ানমার সরকার না সেখানকার অন্য কোনো শক্তিশালী গ্রুপ সরবরাহ করে সেটা বিষয়। কারণ থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী এলাকায় এসব গ্রুপের অন্যতম ব্যবসা হলো ইয়াবা। এটা সরাসরি মিয়ানমার হয়ে আসে। এখন বর্ডার এলাকায় কোনো ফ্যাক্টরি গড়ছে কি না জানি না। থাকলেও আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জানার কথা। এখন মিয়ানমার সরকার এদের পুষে রাখছে কি না জানি না, তবে আমার সেটা মনে হয় না। এরা হয়ত অন্য কোনো গ্রুপের আশ্রয়ে থাকতে পারে, যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কারণ মিয়ানমারের অনেক এলাকায় সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই।’

এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, ‘মিয়ানমারের কন্ট্রোল না থাকায় ইয়াবা ব্যবসা আরও চলছে। মিয়ানমার সরকার এটাকে পুষছে কি না সেই বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’

চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাদক ব্যবসা এমনভাবে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে তাতে এই ৮৩ জনকে (গতকাল পর্যন্ত) মেরে তো কোনো লাভ হবে না। ফিলিপাইনে বহু লোক মরেছে কিন্তু কাজ হয়নি। এটার জন্য সবচেয়ে বড় হলো যাদের ধরা হয়েছে তাদের আলাদা ট্রাইবুনাল করে বিচার করা উচিত।’

‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেশেও যেমন গ্রহণযোগ্য না তেমনি বিদেশেও গ্রহণযোগ্য না। এগুলো নিয়ে পরবর্তিতে নানা ধরনের কাহিনি বের হয়। এরমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেকখানি ইনভলব হয়ে যায়। তার থেকে যদি একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা যায়, গ্রামগঞ্জে যদি প্রচারণা চালানো যায়, রাজধানীতে যেসব বস্তিতে এসব হচ্ছে সেখানকার মানুষকে যদি সচেতন করা যায়, সেটা ভালো হয়। পাশাপাশি দ্রুতগতিতে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যেমন- মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে দেখেছি ঢোকার আগেই কিন্তু বলা হয় মাদক পেলে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে। কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের এক লোককে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হলো। এমন কিছু কঠোর আইন করা হয় তাহলে এটা হয়ত কমে আসবে।

(আল-আমিন এম তাওহীদ, ২৭মে-২০১৮ইং)

SHARE