জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান আর নেই

 

মোঃ আশরাফুল আলম
দেশবরেণ্য শিক্ষক, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান আর নেই। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স
হয়েছিল ৮৩ বছর।
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ড. আনিসুজ্জামানের ছেলে আনন্দ জামান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর পর ফেসবুকে পৃথক এক স্ট্যাটাসে আনন্দ জামান জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তার বাবা ড. আনিসুজ্জামানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। দুপুরের দিকে তিনি বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। সিএমএইচের চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরেই ফুসফুসের সংক্রমণসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন দেশবরেণ্য এই ব্যক্তিত্ব। মহাখালীর ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালে (সাবেক আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল) গত ২৭ এপ্রিল থেকে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৯ মে পরিবারের ইচ্ছায় তাঁকে সিএমএইচ হাসপাতালে নেয়া হয়। ওই সময় ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী জানিয়েছিলেন, ড. আনিসুজ্জামান হার্ট, কিডনিসহ বেশ কিছু জটিল রোগে ভুগছিলেন। এক পর্যায়ে তার স্মৃতিভ্রষ্টতা দেখা দেয়। ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত এই শিক্ষাবিদ ও লেখক। ভারত ভাগের পর ছাত্রাবস্থাতেই তার পরিবার ঢাকায় চলে আসেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভূত্থান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তীকালে প্রতিটি জাতীয় গণআন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল এই বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদের।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতে গিয়ে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন ড. আনিসুজ্জামান। বর্তমানে বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে তিনি তাঁর কর্মজীবন শেষ করে অবসরে ছিলেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিস্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস বিষয়ে তাঁর গবেষণাগ্রন্থগুলো সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
প্রবন্ধ গবেষণায় অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি থেকে প্রদত্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন বিশিষ্ট এই গবেষক ও সাহিত্যিক। শিক্ষা ও সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে দেশটির তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত করে। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
এছাড়াও ১৯৯৩ ও ২০১৭ সালে দুইবার আনন্দবাজার পত্রিকার ‘আনন্দ পুরস্কার’, ২০০৫ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট. ডিগ্রি এবং ২০১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদকে ভূষিত হন ড. আনিসুজ্জামান। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার দেশবরণ্যে এই শিক্ষাবিদকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।
এদিকে ড. আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন । এছাড়াও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সহ মন্ত্রিপরিষদের বিভিন্ন সদস্য, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরও দেশের বরেণ্য এই অধ্যাপকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

SHARE