করোনায় ব্যাংকগুলো মানেনি কোনো প্রজ্ঞাপন, চরম সংকটে এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ

মোঃ আশরাফুল আল-
১৯শে মার্চ-২০২০ করোনার বিপর্যয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুবিধা রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, আগামী জুন পর্যন্ত কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ না করলেও ঋণের শ্রেণিমানে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। এর ফলে বর্তমানে কোনো ঋণগ্রহীতা যদি ৩০ জুন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন, তাহলে তাঁকে খেলাপি করা যাবে না। প্রজ্ঞাপনে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১–এর ৪৯ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করে।
বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে মানুষ কর্মহীন ও অসহায় হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বর্তমানে দেশে লক-ডাউন চলছে। সকল শ্রেণি পেশার মানুষ গৃহে অন্তরীণ থেকে এক দূ্র্বিসহ দিনাতিপাত করছে।
দেশের প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে নানাবিধ পেশাগত বৈষম্যের শিকার। শিক্ষকগন তাদের সন্তানদের শিক্ষা, দূরারোগ্য ব্যধি, ছেলেমেয়েদের বিবাহ, বাসস্থান মেরামত ও নির্মাণ, বসতভিটা জমি ক্রয় ইত্যাদি বিষয়ে তফসিলী ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে খরচ নির্বাহ করেছেন।
দেশের এমনি এক ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ছাড় দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা সত্ত্বেও তফসিলী ব্যাংকগুলো এতে কোনো প্রকার কর্ণপাত না করে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা থেকে কিস্তির টাকা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক সমাজ গৃহে অন্তরীণ থেকে মানবেতর জীবন-যাপনে বাধ্য হচ্ছেন।
বিগত ২৫ শে মার্চ থেকে দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মহা পরিচালক মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরিচয় গোপন করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক তার বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করেন এইভাবেই-
তিনি জানান আমর মার্চ মাস-২০২০ বেতন হিসাব নাম্বারে ৬১২ টাকা স্থিতি ছিল। ১ লা এপ্রিল ২০২০ উক্ত ৬১২ টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ দেখিয়ে হিসাবে শুন্য টাকা দেখায়। বিগত ৭ এপ্রিল তারিখ বিগত মার্চ ২০২০ মাসের সরকারি অংশ বেতন ভাতা বাবদ ২৪,৩২৪ টাকা জমা হয়। ৮ মার্চ ব্যাংক কিস্তির অবশিষ্ট ১৮৫৮৪ টাকা কর্তন করে নিয়ে যায়। অবশিষ্ট স্থিতি থাকে ৫৭৪০ টাকা। এতদসত্ত্বেও দেশের মানুষের অসহায়ত্ব বিবেচনা করে এবং মানবিক কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে একদিনের বেতন দান করেন ৯৪৬ টাকা এই শিক্ষক। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে কিভাবে পরিবার পরিচালনা করবেন ভেবে কুলকিনারা করতে পারছেন না তিনি। লক ডাউনের কারণে ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। দেশের এই ক্রান্তিকালে ঋন পাবেন এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।
শিক্ষক সমাজ দয়া দাক্ষিণ্য বা ঋন মওকুফ চায়নি। ছয়মাসের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত চেয়েছিলো। প্রকৃতপক্ষে মনে হচ্ছে দেশের পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক সমাজ এই দেশেরই অংশ নয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব সাইদুল ইসলাম সেলিম স্যারের সাথে কথা বললে তিনি জানান তফসিলী ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং প্রজ্ঞাপন পত্র দেখিয়েও কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। ব্যংক কর্মকর্তাদের এমন আচরণে দেশের বিপর্যস্ত শিক্ষক সমাজ হতবাক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জাতি বিনির্মাণের নিপুণ কারিগর এবং সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত শিক্ষক সমাজের এমন করুন চিত্র আজ সর্বত্র। যারা জীবন যৌবন উৎসর্গ করে জাতিগঠনে নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছেন, সেই শিক্ষকদের সুখ দুঃখ প্রকাশের নেই কোন নির্ভরশীল অভিভাবক। শুধুমাত্র কাগজে পত্রে শিক্ষকদের সম্মান মর্যাদা দিলেই তা যথেষ্ট হয়না এ বোধ সকলের জাগ্রত হোক।

SHARE