করোনার আতঙ্কে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,পাঠদান হবে টিভির মাধ্যমে

মোঃ আশরাফুল আলম
করোনা ভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সংসদ টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে সেরা শিক্ষকদের রেকর্ডিং করা ক্লাস প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রাথমিকের বিষয়ে আজ রোববার আলোচনা করে করণীয় ঠিক করা হবে।
মাউশি ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দুজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন। করোনাভাইরাসের কারণে প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বন্ধের এই সময়ে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী অনেকটা ঘরবন্দী অবস্থায় আছে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী পৌনে দুই কোটির মতো।
আর মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী এক কোটির ওপরে। একদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, অন্যদিকে কোচিং বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ওপর প্রভাব পড়ছে। পরিস্থিতি অবনতি হলে এই বন্ধের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে।
এমন অবস্থায় সরকার বিকল্প উপায়ে ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী তিন মাসের পরিকল্পনা নিয়ে এই কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাউশির একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা।
মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী এই উদ্যোগের কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সরকারের এ টু আই প্রকল্পের সঙ্গে মিলে এই কাজ করা হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেরা শিক্ষকদের ক্লাস রেকর্ডিং করে সংসদ টিভির মাধ্যমে এই ক্লাস প্রচার করা হবে। সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টার মধ্যবর্তী সময়ে এই ক্লাসগুলো প্রচার করা হবে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত একেকটি বিষয়ের জন্য মোট ৩৫টি ক্লাস থাকবে।
মাউশির সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার থেকেই এসব ক্লাস রেকর্ডিং করা শুরু হয়েছে। তিনটি স্টুডিওয়ে এই ক্লাস রেকর্ডিং করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি স্টুডিও সরকারের শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর। এ ছাড়া ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং মোবাইল ফোন অপারেটর রবির স্টুডিওতে এসব ক্লাস রেকর্ডিং করা হচ্ছে। আগামী মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার পরীক্ষামূলকভাবে এসব ক্লাস প্রচার করা হবে। এরপর নিয়মিতভাবে এটি চলবে। আগামী সপ্তাহ থেকেই নিয়মিতভাবে এভাবে ক্লাস হবে
প্রাথমিক স্তরের শিশুদের জন্যও বিকল্প উপায়ে ক্লাস নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেছেন, তাঁরাও বিকল্প উপায়ে কীভাবে ক্লাস বা পড়াশোনা চালু রাখা যায়, সে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। টিভির মাধ্যমে ক্লাস প্রচারের বিষয়টিও তাদের চিন্তাভাবনায় আছে। রোববার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এই বন্ধের সময়ে কোনো শিক্ষার্থীকে অযথা বাইরে ঘোরাফেরা না করতে এবং বাড়িতে নিরাপদে রাখার জন্য অভিভাবকদের নির্দেশনা দিতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ করেছে।
এদিকে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার কাজ চালিয়ে নিচ্ছে।
এমন পরিস্হিতিতে অনলাইন ও টিভির মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার বিকল্প উদ্যোগটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসান। তিনি বলেন, শুধু এই বন্ধেই নয়, বিকল্প উপায়ে শিক্ষাদানের পদ্ধতি অন্যান্য সময়েও থাকা দরকার। কারণ, বিদ্যমান শিক্ষাক্রমে একজন শিক্ষার্থীর পুরো জীবনের সঙ্গে মিল নেই। আবার শুধু শ্রেণিকক্ষেই সব শিখতে পারে না। তাই বিভিন্ন বিকল্প উপায়ে শেখার পদ্ধতিগুলোও থাকা দরকার। আর এই বন্ধের সময়ে অভিভাবকদের ভূমিকাটি অনেক বেশি। এই সময়ে শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য ও মূল্যবোধসহ অন্যান্য বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

SHARE