অবহেলায় কেনো তরুন সংবাদকর্মীরা?

ইয়ামিন হোসেন

ভোলা নিউজ-১৫.০৪.১৮
দুরন্তে কাটানো সময়। মুখে হাসি আর বুকে বল নিয়ে ছুটে চলা। বহু প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে পাঠশালা যাওয়া-ফেরা। কখনও গ্রাম কিংবা উপকূলে দুর্যোগ-দুর্বিপাক দাঁড়ায় বাঁধা হয়ে। তবুও সামনের পথে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগুনো। বন্ধুদের সাথে আড্ডা। জমে ওঠে চোরদান্ডা, মুরগির লড়াই, লাঠি দিয়ে কোবাকুবি, ক্রিকেট-ফুটবলের মতো যতসব খেলা। অঁজোপাড়া গাঁয়ের মেঠো পথেই বেড়ে ওঠা। এমনভাবে পাঠশালায়ও দুরন্ত। গল্পগুলো স্মৃতি বিজড়িত শৈশবের।

বলা হয়ে থাকে, “আঘাত মানুষকে বদলে দেয়”। ঠিক তেমনি শৈশব পাড়ি দেওয়া সময়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে অনেকে। দেখা যায়, চলার রাস্তাটি ভাঙা, সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ। প্রাথমিক শিক্ষা পার হয়ে মাধ্যমিকে পা রাখা। তখনি শৈশবের পথচলার এমন বাঁধাগুলো যখন মনে আঘাত হয়ে দাঁড়ায়, তখনি মনে জাগ্রত হয় স্বদেশপ্রেমের। যা শৈশবের
ক্লান্তিলগ্নে। উঁকি দেয় কৈশর বয়েসের অন্য অর্থে কিশোর বয়সের। এ কিশোর বয়সেই অনেকের মনে সৃজনশীল ভাবনা জেগে ওঠে। পুথিগত বিদ্যার বাইরে কেউ কেউ পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন প্রকাশনা পড়তে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তখনি
ভাবনার জগতে লেখালেখি করা ইচ্ছে জাগে। প্রবল ইচ্ছে শক্তি নিয়েই অনেকে লেখালেখি জগতে বিচরণ করে। শুরুটা কারো কবিতা লিখে, কারো গল্প লিখে, কারো-বা উপন্যাস লিখে। হয়তো কোন মাধ্যমে সে কিশোররা শিখে যায়
সংবাদ লেখার কৌশল। কেউ লিখে সংবাদ কেউবা ফিচার সংবাদ। মোটকথা একজন সংবাদকর্মীর ভূমিকায় বেড়ে ওঠা। কিন্তু সে কিশোর, সে ছোট। তাই বলে বৈষম্যের শিকার সে। সে কি লিখলো? লেখাটা মূল্যায়ন করা উচিত, সে যে ছোট ওদিকে তাকিয়ে নয়। ছোট বলে তাকে হিংসা? আর এসব প্রতিবন্ধকতা হতাশায় ভোগায়। মানসিক যন্ত্রণা বেড়ে
যায়। আজকাল ছোট বলেই পত্রিকা কর্তৃপক্ষ কিশোর সংবাদকর্মীদের মূল্যায়ন করছেনা। ওরাতো বেতন চায় না, চায় লেখা প্রকাশের অধিকার। এতে সমস্যা কোথায়? লেখার দিকে চোখ ফেরালে কি লেখক ছোট না বড় তা কি দেখা যায়?

পত্রিকা কর্তৃপক্ষ ছোট বলে ছোট’র লেখাকে তেমন গুরুত্ব দেয়না। আহা! এটা চরম ভুল। কেননা, হয়তো ওই কিশোরের এমনও লেখা পত্রিকাটিকে আলোচনায় নিয়ে আসতে পারে কিংবা ওই পত্রিকার মানতো বাড়ছেই।
অনেক সময় সমাজের কাছেও এ কিশোর সংবাদকর্মীরা চোখে না পড়ার মতো। “এতো ছোট পোলা, কিসের আবার সাংবাদিক?” এভাবে ঠাট্টা করা হয়। আবার বিভিন্ন অফিসে সংবাদ সংগ্রহকালে একই দশা। মাঝে মাঝে এমনও ঘটে, অনেক পাঠক ছোট বলিয়া ওই কিশোর সংবাদকর্মীর অনুসন্ধানকৃত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকে ছোট বলে দেখে থাকেন। কিন্তু তা কি ঠিক হচ্ছে?

এরাই আগামির কর্ণধার। তারাই তো আপনার-আমার কণ্ঠস্বর গণমাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করে। চোখ খুলে দেখুন, ওরা সমাজে অনন্য। লাখ লাখ কিশোরের ভিড়ে ওরা যেন আলোকিত ফুল। ওরাতো সমাজে বিপথগামী নয়। ওরা ব্যস্ত সৃজনশীল চিন্তায়। এ সমাজকে কিভাবে বদলানো যায়, সে ভাবনা ঘুরে ওদের মাথায়। ওদের লেখা কেন দিনের পর
পত্রিকার ডেক্সে আটকে থাকবে? ওরা কি বড়দের মতো লিখতে পারেনা? কিশোর বয়সে যারা সাংবাদিকতার
হাতে খড়ি, তাদের অনেকের মুখ থেকে শোনা যায়, পত্রিকায় লেখা পাঠালে তারা আমাদের লেখা ছাপাতোনা। তাই আমরা বন্ধুরা মিলে নিজেরাই সবগুলো লেখা একত্রে করে ম্যাগাজিন আকারে বের করি। আচ্ছা, তাহলে দেশের এত পত্র- পত্রিকা, অনলাইন কেন বের হয়েছে? টেলিভিশনের দিকে চোখ ফেরালে ক’জন ভালো উপস্থাপক কিংবা ভালো সংবাদকর্মী দেখবেন? জেলা পর্যায় থেকে এসব টিভি কর্তৃপক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রতিনিধি নিয়োগ দেন। অভিযোগটি খুবই দুঃখজনক।

দেশে অসংখ্য টিভি চ্যানেল রয়েছে। এগুলোর ক’টাতেই বা কিশোর সংবাদকর্মীদের জন্য দরজা খোলা রয়েছে?
এসব মন-মানসিকতা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। এ কিশোর সংবাদকর্মীদের গণমাধ্যমে সঠিকভাবে যুক্তের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনে রয়েছে বিরাট সুযোগ। আমরা কেন এ সুযোগ হাতছাড়া করবো? আমরা চাইনা যে, এ সমাজটা পরিবর্তন হোক, এ সমাজে আলো ফিরুক? এ কিশোর সংবাদকর্মীদের লেখালেখি কিংবা ভিডিও ডকুমেন্ট তৈরিতে উৎসাহ দিন, পরামর্শ দিন, পাশে দাঁড়ান। দেখবেন এরাই বড়দের মতো সমাজের শেকড়ে আলো ফেলছে।

লেখকঃ সংবাদকর্মী

SHARE