অনিদ্দিষ্ট কালীন ধর্মঘটে অচল নৌপথ, ভোগান্তিতে সাধারন মানুষ

মোঃ বাবুল
ঢাকা সহ সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে দেশের সব নৌ-রুট। নিয়োগপত্র, ভাতা, চাঁদাবাজি বন্ধ করাসহ ১১ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিকরা মঙ্গলবার মধ্যরাতে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়। এরপর আজ সকাল থেকেই সব ধরণের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেন তারা। বন্ধ রয়েছে পণ্য খালাসও। ফলে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম জানান, মধ্যরাত থেকে আমরা কর্মবিরতি শুরু করেছি। দেশের যেখানে যে নৌযান আছে (নদীতে বা সাগরে) সেটাকে সেখানেই অবস্থান করতে বলা হয়েছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে বলেও জানান তিনি।

এই ১১ দফার মধ্যে মালিকপক্ষের কাছে সাতটি এবং সরকারের কাছে চারটি দাবি ফেডারেশনের। দাবিগুলো হলো- প্রত্যেক শ্রমিককে মালিকের পক্ষ থেকে পরিচয়পত্র, নিয়োগপত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান; সামাজিক নিরাপত্তার জন্য জীবন বীমা; সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রভিডেন্ট ফান্ড; খোরাকি ভাতা প্রদান; কর্মকালীন মৃত্যুতে পরিবারকে ১০ লাখ টাকা প্রদান; নৌপথে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী বন্ধ করা; ভারতগামী জাহাজের ল্যান্ডিং পাস প্রদান; সমুদ্র ভাতা প্রদান; মাস্টার ড্রাইভারদের ইনচার্জ ভাতা প্রদান; মাস্টার ড্রাইভার পরীক্ষার অনিয়ম দূর করা; এবং মেরিন কোর্টের হয়রানি বন্ধ করা।

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা লাগাতার কর্মবিরতি চলছে। অভ্যন্তরীণ রুটের নৌযানগুলো শহরের বিকল্প লঞ্চঘাটে ও ডাকাতিয়া নদীতে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে চাঁদপুরসহ আশপাশের জেলার হাজার হাজার যাত্রী। আজ বুধবার ভোর ৬টা থেকে সিডিউলে থাকা চাঁদপুর-ঢাকার মধ্যে সকল লঞ্চ বন্ধ রয়েছে। তবে বুধবার দিবাগত রাত ১২টার পরে সিডিউলে থাকা লঞ্চগুলো ঢাকার উদ্দেশ্যে চাঁদপুর ঘাট ত্যাগ করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্ব থেকে শ্রমিকদের কর্মবিরতির কথা না জানার কারণে চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলা, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী থেকে আসা অনেক যাত্রী লঞ্চঘাটে এসে অপেক্ষা করে ফিরে গেছেন। যার ফলে চরম ভোগান্তি, সময় ব্যয় ও অর্থ সমস্যায় পড়তে হয়েছে যাত্রীদের।

উল্লেখ্য, এর আগে ১৫ই এপ্রিল একই দাবিতে কর্মবিরতিতে গিয়েছিলেন নৌযান কর্মচারীরা। এরপর ১৬ই এপ্রিল শ্রমিক, মালিক ও সরকার পক্ষের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ৪৫ দিনের মেয়াদ শেষ হলে গত ১৫ই জুলাই ত্রিপাক্ষিক সভার আয়োজন করা হয়। তবে ওই সভায় মালিক সমিতির নেতারা উপস্থিত হননি। পরে গত ২০শে জুলাই (শনিবার) নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা সিদ্ধান্ত নেন- দাবি না আদায় হলে ২৩শে জুলাই মধ্যরাত থেকে সকল প্রকার নৌযান শ্রমিকরা লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবেন। ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে কর্মবিরতিতে যান নৌযান শ্রমিকরা।

এদিকে নৌ ধর্মঘটে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা যেন না ঘটে সেজন্য বিভিন্ন এলাকায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ- এর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার।

SHARE