অনলাইন ডেস্ক:ভোলানিউজ.কম,
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও ভোট ডাকাতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আর এরজন্য খুলনার পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবিরকে দায়ী করেছেন তিনি, শুরু থেকেই বিএনপি যার প্রত্যাহার দাবি করে এসেছিল। এই পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশেই জাল ভোট দেয়া হয়েছে বলে দাবি রিজভীর।
রিজভী বলেন, ‘খুলনার পুলিশ কমিশনার দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত যখনই ভোটার কম থাকবে তখনই নৌকার প্রতীকে সিল মারতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।’
মঙ্গলবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ও পুলিশ মিলে আমাদের নির্বাচনী এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে নৌকায় সিল মেরেছে। সব কটি কেন্দ্রে এমন ঘটনা ঘটলেও আমাদের কাছে পাওয়া তথ্য মতে ১৫০টি কেন্দ্রের ঘটনা গুরুতর।’
এ সময় বিভিন্ন স্থানে হামলার স্থির চিত্র সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন রিজভী।
খুলনার ভোট নিয়ে রিজভীর যত অভিযোগ
এর আগে দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ৪০টি কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করেছিলেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘২ নং ওয়ার্ডের কৃষ্ণমহন স্কুলের কেন্দ্র দখল করে নৌকা প্রতীকে সিল মারছে। ৪নং ওয়ার্ডের দেয়ানা দক্ষিণপাড়া ভোটকেন্দ্র দখল করে নৌকায় সিল মারা হচ্ছে। এছাড়া এই ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম আনামকে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ও তার বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা।’
৪নং ওয়ার্ডের দেয়ানা উত্তরপাড়া ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।’
‘কেন্দ্র নং-২৫, ২৬, ২৮ ও ৩১ থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা।’
‘১৮নং ভোট কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্ট ও ভোটারদের বের করে দিয়েছে।’
‘২৪নং আব্দুল গণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দিয়ে নৌকা মার্কায় সিল মারছে যুবলীগ-ছাত্রলীগের ক্যাডাররা।’
’১০নং ওয়ার্ড ভাষানী বিদ্যাপিঠ ও ১১নং ওয়ার্ডের ৮০নং কেন্দ্রে বিএনপি এজেন্টদের বের করে দিয়ে বুথের সামনে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নিজেদের এজেন্টদের বলছে, নৌকা মার্কায় জাল ভোট দেয়ার জন্য।’
’১৩, ১৫, ২৪, ২৫ ও ৩১ নং ওয়ার্ডের সকল কেন্দ্র দখলে করে নৌকায় সিল মারছে আওয়ামী লীগ।’
‘১৯নং ওয়ার্ডে ইসলামাবাদ কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেয়া যাবে না, ভোট দিলেও প্রকাশ্যে সিল দিতে হবে বলে আওয়ামী ক্যাডাররা অস্ত্র হাতে হুমকি দিচ্ছে।’
‘বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপি নেতাকর্মী ও ভোটারদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে।’
’২০নং ওয়ার্ডের শেখ পাড়া আইয়্যুব আলী ভোটকেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দিয়ে নৌকা মার্কা সিল মারছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।’
’২১নং ওয়ার্ডের উদয়ন বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডাররা ভোটারদের বের করে দিচ্ছে।’
’২২নং ওয়ার্ডের ফাতেমা স্কুল কেন্দ্র, কেন্দ্র ১৮৪, আবু হানিফ সিরাতুল মাদ্রাসা, পায়রাঘাট সরকারি প্রাথমিক ভোট কেন্দ্র এবং খুলনা সরকারি জেলা স্কুল ভোট কেন্দ্র থেকে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় বিএনপির এজেন্টদের বের করে দিয়েছে এবং নৌকা প্রতীকের জাল ভোটের উৎসব চলছে।’
’২২নং ওয়ার্ডের জেলা স্কুলকেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়েছে এবং অয়ন নামের এক বিএনপির কর্মীকে ধরে নিয়ে স্থানীয় কাজি অফিসে আটক করে নির্যাতন চালাচ্ছে।’
’২৪নং ওয়ার্ডের ১৯৮ নম্বর দারুসসালাম ও ২০১ ও ২০২ নম্বর ইকবাল নগর বালিকা ভোট কেন্দ্রে থেকে এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়েছে। বিএনপির কোনো ভোটারদের ঢুকতে দিচ্ছে না। নৌকা মার্কায় জাল ভোট চলছে।’
‘২৪নং ওয়ার্ডের সোনাপাতা স্কুল কেন্দ্রে ধানের শীষের প্রার্থী মঞ্জুর নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।’
‘২৪নং ওয়ার্ডের ইকবাল নগর স্কুল কেন্দ্র ও সোনাপাতা স্কুল কেন্দ্রে কোনো ব্যালট পেপার নেই। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ভোরেই ব্যালট কেটে বাক্সভর্তি করে রেখেছে।’
‘২৪নং ওয়ার্ডের গণি বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের সমর্থকদের বের করে দিয়েছে।’
’২৫নং ওয়ার্ডের ২১৭ নং কেন্দ্র দারুল কোরয়ান সিদ্দিকীয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র ও ২২০ নং কেন্দ্র নুরানী বহুমুখী মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ব্যালট পেপার নিয়ে নৌকা মার্কায় সিল মারছে।’
‘২৬নং ওয়ার্ড এর গল্লামারী লায়ন্স স্কুল কেন্দ্রের সামনে যুবলীগ নেতা হাফিজের নেতৃত্বে কেন্দ্রটি সন্ত্রাসীরা দখল করে নিয়েছে।’
‘নিয়াখামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কেন্দ্রটি দখলে নিয়েছে।’
’২৮নং ওয়ার্ড ২৫২ নম্বর কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়েছে। এবং এই ওয়ার্ডের চারটি কেন্দ্র আওয়ামী লীগ দখল করেছে।’
’৩০নং রূপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে ধানের শীষের প্রার্থীর ভোটার ও সমর্থকদের মারধর করে বের করে দিয়েছে।’
’৩১নং ওয়ার্ডের ২৭৫, ২৭৬, ২৭৭ ও ২৭৮ লবণচোরা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড কমিশনার প্রার্থী আসাদুজ্জামান রাসেলের নেতৃত্বে কেন্দ্র দখল করে নৌকা মার্কায় জাল ভোট চলছে।’
’৩১নং ওয়ার্ডের ১৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১৪টি ভোট কেন্দ্রই দখল করে নিয়ে নৌকায় সিল মারছে। একই ওয়ার্ডের বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী আসলামের বাড়িতে হামলা ও তার পিতামাতাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।’
(অাল-আমিন এম তাওহীদ, ১৫মে-২০১৮ইং)