অনলাইন ডেস্ক:
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনশ আসনে নৌকার মনোনয়ন চাইছেন চার হাজারের বেশি প্রার্থী। শুক্রবার থেকে টানা চারদিন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষে সোমবার এ তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, চারদিনে চার হাজার ২৩ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এদের মধ্য থেকে ৩০০ জনকে বাছাই করতে হবে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ডকে।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্য থেকে ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে বুধবার থেকে সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করবে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড।
৩০০ আসনে নিজেদের প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর জোটে আসন ভাগাভাগি হলে এর কেউ কেউ প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়বেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল পেছানোয় এখন ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। ভোটগ্রহণ হবে ৩০ ডিসেম্বর।
আওয়ামী লীগের প্রতিটি ফরমের দাম ছিল ৩০ হাজার টাকা। অর্থাৎ মনোনয়ন ফরম বিক্রি থেকে ১২ কোটি ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার তহবিল গড়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
মনোনয়ন ফরম বিক্রিতে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানাচ্ছেন, শুক্রবার প্রথম দিনে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩২৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়। শনিবার ১ হাজার ১৩২ জন এবং রবিবার ৮৩৫ জন মনোনয়ন ফরম কেনেন। শেষ দিন সোমবার ফরম বিক্রির পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুল-উল আলম হানিফ সাংবাদিকদের বলেছেন, চার দিনে ৪ হাজারের বেশি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। তবে শেষ দিনে ফরম বিক্রির সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ঢাকার ধানমণ্ডিতে দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেওয়া চলে। এই উপলক্ষে নেতা-কর্মী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উপস্থিতিতে সরব ছিল। ফলে যানজটের ধকলও পোহাতে হয় ওই এলাকার বাসিন্দাদের।
সাতটি আসনে একজনের বেশি প্রার্থী নেই
সারাদেশে সাতটি আসনে আওয়ামী লীগের একটি করে মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ সেসব আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী।
এর মধ্যে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের আসন রয়েছে।
শুক্রবার সকালে শেখ হাসিনার জন্য দুটি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের মধ্যে দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
শেখ হাসিনার নিজের আসন গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গীপাড়া-কোটালীপাড়া) এর জন্য একটি ফরম নেয়া হয়। ওবায়দুল কাদের ফরমটি কিনে আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক গোপালগঞ্জের শেখ আবদুল্লাহর কাছে হস্তান্তর করেন।
শেখ হাসিনার জন্য কেনা অন্য ফরমটি কোন আসনের, তা পরে প্রকাশ করা হবে বলে কাদের জানিয়েছেন।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসনের পাশাপাশি তার শ্বশুরবাড়ির এলাকা রংপুরের পীরগঞ্জ (রংপুর-৬) আসনে নির্বাচিত হন। পরে তিনি রংপুর-৬ আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে ওই আসনের এমপি হন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এবারও শিরীন শারমিন চৌধুরীর জন্য রংপুর-৬ আসনের মনোনয়ন ফরম কিনে সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজের কাছে হস্তান্তর করেন কাদের।
সাধারণ সম্পাদক কাদেরের জন্য নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ) আসনের একটি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ।
কাদেরের আসনে আর কেউ মনোনয়ন ফরম কেনেননি।
গোপালগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বাদে আর কেউ মনোনয়নপত্র কেনেননি।
বরিশাল-১ (গৌরনদী) আসনেও একক মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। বাগেরহাট-১ আসনে শেখ হেলাল উদ্দিন এবং খুলনা-২ আসনে শেখ সালাহ উদ্দীন জুয়েল একমাত্র মনোনয়ন প্রত্যাশী।।
এদের মধ্যে শেখ সেলিম ও হাসানাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ফুপাত ভাই। অন্য দিকে শেখ হাসিনার চাচাত ভাই হলেন শেখ হেলাল ও শেখ জুয়েল।
মৌলভীবাজার-১ (কুলাউড়া) আসন থেকে শাহাবুদ্দিন আহমেদ একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তিনি বর্তমানে সংসদের হুইপ।
মনোনয়ন ফরম কেনার ক্ষেত্রে এক আসনে এক পরিবারের দুইজনও ফরম কিনেছেন।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অসুস্থ থাকায় কিশোরগঞ্জ সদর আসনে তার জন্য নেওয়ার পাশাপাশি তার তিন ভাই নিজেরাও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচনের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও তার ভাই এ কে মোমেন মনোনয়নপত্র কিনেছেন। মুহিত এই আসনে বর্তমানে এমপি; কিন্তু আর ভোটে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা রয়েছে তার।
সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এবং তার ছেলে তানভীর শাকিল জয় ফরম কিনেছেন। নবম সংসদ নির্বাচনে আইনি জটিলতায় নাসিম ভোট করতে না পারায় ছেলে জয় নির্বাচন করেছিলেন।
চাঁদপুর-২ আসনে ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং তার ছেলে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামান, তার ছেলে মশিউজ্জামান রোমেল দুজনেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আসাদুজ্জামান বর্তমানে অসুস্থ।
হাজি মোহাম্মদ সেলিম অসুস্থ থাকায় ঢাকা-৭ আসনে তার পাশাপাশি ছেলে সোলায়মান সেলিমও মনোনয়নপত্র কিনেছেন।
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে একই পরিবারের কয়েকজন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শহীদ মমতাজ উদ্দীন, তার ছোট ভাই বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, আরেক ভাই শহীদ মমতাজ উদ্দীনের স্ত্রী ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেফালী মমতাজ, শেফালী মমতাজের ছেলে ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক শামীম আহম্মেদ সাগর।
নাটোর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এবং তার মেয়ে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে একই পরিবারের তিন ভাইবোন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তাদের একজন বর্তমান সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল। তার বড় ভাই রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজলও বসে নেই। অন্যদিকে তাদের ছোট বোন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনিন সরওয়ার কাবেরীও মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
পাবনা-৪ আসনে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর পাশাপাশি তার মেয়ে মাহাজাবিন শিরিন পিয়া ও তার স্বামী আবুল কালাম পিন্টুও মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
একই পরিবার থেকে কয়েকজন ফরম কেনেন
আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ ফরম কিনেছেন কুষ্টিয়া-৩ আসন থেকে। তার ভাই রশিদুল আলম কিনেছেন কুষ্টিয়া-১ ও কুষ্টিয়া-২ আসনের জন্য।
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ১২নভেম্ববর-২০১৮ইং)