অনলাইন ডেস্ক: ভোলানিউজ.কম,
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শিগগিরই জোরাল কর্মসূচি দেয়ার কথা জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীকে কর্মসূচি ঠিক করতে যৌথ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। তবে এই জোরাল কর্মসূচি কী ধরনের হবে তা ব্যাখ্যা করেননি তিনি।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনেক দিন কর্মসূচি নেই- এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘কথাটি ঠিক না। আমরা প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো কর্মসূচি পালন করছি। সময়মত জোরালো কর্মসূচি আসছে। তখন দেখবেন কেমন কর্মসূচি দেয়া হয়।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায়ের তারিখ ঘোষণার পর বিএনপি দেশে ‘আগুন জ্বালানোর’ হুমকি দিয়েছিল। তবে খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর কর্মসূচি দেয়া হয় নমনীয়। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খালেদা জিয়া হটকারিতা করতে নিষেধ করেছেন।
এরপর থেকে অবস্থান, মানববন্ধন, অনশন বা সমাবেশের মতো কর্মসূচি দিয়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা করেছে বিএনপি। পাশাপাশি আদালতে চলছে আইনি লড়াই।
এর মধ্যে আবার আগামী জাতীয় নির্বাচন কড়া নাড়ছে। বিএনপি বলছে, তাদের নেত্রীকে বন্দী রেখে নির্বাচনে যাব না।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। আমরা বলেছি, আমাদের চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিতে হবে, নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার হতে হবে, নির্বাচন কমিশনকে ভেঙে পুনর্গঠন করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে, সকল দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। এ কথাগুলো আমরা বারবার বলছি।’
‘একাদশ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এমন যদি হয় বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিল না তাহলে কি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে? গ্রহণযোগ্য হবে না।’
বিএনপিকে মাঠে মোকাবেলার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় বিএনপির প্রস্তুতি কেমন-এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘সরকার বিএনপি ছাড়া কাকে মোকাবেলা করবে? বিএনপি ছাড়া কোনো দল আছে নাকি?’
‘খালেদা জিয়া উড়ে এসে রাজনীতিতে বসেননি। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার পর অনেকে ভেবেছিল বিএনপি শেষ, ভেঙে যাবে। কিন্তু তখন খালেদা জিয়া জাতীয়তাবাদী পতাকা হাতে দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাই তো সরকারের ভাবনায় খালেদা জিয়া ও বিএনপি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, জনগণ তাদের ভোট দেবে না। সেই জনগণকে তারা কীভাবে মোকাবেলা করবে? ইতিমধ্যে দেখেছেন জনগণ কীভাবে তাদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। তাই তারা যদি ফের জোর করে ভোটবিহীন নীলনকশার মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায় তাহলে জনগণের প্রতিরোধে তাদের ঘর তাসের ঘরের মতো ভেঙে যাবে।’
‘জনগণ তাদের ভোট দেবে না তাই যত রকমের দুষ্টুমি আছে সব করছে। শুনতে পাচ্ছি ইভিএম আমদানি করবে, অথচ আমরা এর বিরোধিতা করছি। আবার পুলিশকে বলা হচ্ছে সবাইকে আটক করতে। এসব কি? যদি নির্বাচন করতে চান তাহলে সবাইকে মুক্তি দিতে হবে।’
নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে ২০ দলের বাইরে নানা দলের সঙ্গে চলছে ঐক্য প্রক্রিয়ার আলোচনা, বিএনপি যাকে বলছে ‘জাতীয় ঐক্য’।
এই ঐক্যের আলোচনা কতদূর আগাল- জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ‘মাঝে মাঝে কিছু গণমাধ্যম এমন সব খবর প্রকাশ করে তারা কোথায় এসব তথ্য পায় আমরা জানি না। এই দেখি অমুকে এই আসনে, অমুকে ওই আসন পাচ্ছেন। আমরা কিছু জানি না।’
সংবাদ সম্মেলনে ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে বিএনপি সমাবেশ করবে বলে জানানো হয়। এজন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। যেখানে অনুমতি পাওয়া যাবে সেখানে সমাবেশ করা হবে।
এছাড়াও ওইদিন সকালে দলের নেতারা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। আর ২ সেপ্টেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন,আব্দুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী, ওলামা দলের আব্দুল মালেক, যুবদলের নূরুল ইসলাম নয়ন, গিয়াস উদ্দিন মামুন, ছাত্রদলের নাজমুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ২৮আগস্ট-২০১৮ইং)