৯০ দিনে মারা গেছেন ১০ লাখ মানুষ

 

 

অনলাইন ডেস্কঃ ২৮ শে এপ্রিল বিশ্বে একদিনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে। এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ লাখ। এরপর প্রতিদিন এ সংখ্যা কমে আসতে থাকে। ২১ শে জুন একদিনে আক্রান্তের এই সংখ্যা সর্বনিম্নে দাঁড়ায়। ওইদিন বিশ্বজুড়ে ৩ লাখের বেশি আক্রান্তের রেকর্ড করা হয়েছিল। কিন্তু এরপরই আবার বিশ্বজুড়ে এই সংখ্যা বাড়া শুরু হয়েছে। ১৫ই জুলাই একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ লাখ ৩০ হাজার। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখে পৌঁছে যায়।১৫ই জুলাই পর্যন্ত বিশ্বে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে ১৮ কোটি ৮৯ লাখ। বেশির ভাগ দেশে অধিক সংক্রমণশীল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। এতে এই সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের প্রভাবশালী অনলাইন দ্য হিন্দুর সম্পাদকীয়তে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১১ টি দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিয়েছে। গত সপ্তাহে এই ভাইরাসে আক্রান্তে সংখ্যা সবচেয়ে বেশি রেকর্ড করা হয়েছে ব্রাজিল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বৃটেন এবং কলম্বিয়াতে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে জিম্বাবুয়েতে। সেখানে আক্রান্ত বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৭২ ভাগ। এরপরেই রয়েছে ইন্দোনেশিয়া (৪৪ ভাগ)। যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮ ভাগ। বাংলাদেশে ৩৫ ভাগ এবং বৃটেনে ৩০ ভাগ। ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ এশিয়ার অনেক দেশ এই ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে এনেছিল। কিন্তু এসব দেশেও এখন নতুন করে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ায় নতুন করে করোনার ঢেউ শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই সেখানে আগের দিনের রেকর্ড ভেঙে অধিক সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। ১৫ই জুলাই সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৬,৭৫৭। বর্তমানে এই দেশটি এশিয়ার নতুন এপিসেন্টার হয়ে উঠেছে। ১৫ই জুলাই ভারতে আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৯ হাজার মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, টানা ৯ সপ্তাহ কমে যাওয়ার পর আবার কোভিড-১৯-এ মৃত্যু বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন আফ্রিকায় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। ৭ই জুলাই বিশ্বে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। শেষ ১০ লাখ মানুষ মারা গেছেন মাত্র ৯০ দিনে। প্রতি ১০ লাখ মানুষ মারা যাওয়ার ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে কম সময়।যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বেশির ভাগ অংশ এটা দেখিয়ে দিয়েছে যে, কিভাবে উচ্চ মাত্রায় টিকা দেয়ার মাধ্যমে মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা দ্রুত নামিয়ে আনা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বৃটেনে প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষদের মধ্যে শতকরা ৮৭ ভাগের বেশি সংখ্যক মানুষকে কমপক্ষে এক ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে দুই ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে কমপক্ষে ৬৭ ভাগ মানুষকে। ফলে সেখানে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেক কম মানুষ। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যৃর সংখ্যাও কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে যেসব রাজ্যে টিকা দেয়ার হার কম সেখানে করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে যাদেরকে টিকা দেয়া হয়নি তাদের মৃত্যুর ঘটনা বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫৫ ভাগের বেশি মানুষকে কমপক্ষে এক ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে শতকরা ৪৮ ভাগ মানুষকে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে মৃত্যু রোধ এবং ভয়াবহ ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার রোধে বিশ্বজুড়ে টিকা দেয়া এবং টিকা দেয়ায় সমতার দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে এনেছে আবার। আফ্রিকার অনেক দেশে স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে পূর্ণাঙ্গ টিকা দেয়ার পরও দৃঢ়ভাবে কিছু দেশে বুস্টার ডোজ দেয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। ইসরাইল এরই মধ্যে লোকজনকে বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনও বুস্টার ডোজ দেয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতের অনেক রাজ্যে টিকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় করোনার তৃতীয় ঢেউকে বিলম্বিত করতে এবং কমিয়ে রাখতে একমাত্র উপায় হলো পূর্ণাঙ্গ টিকা দেয়া এবং কঠোরভাবে বিধিনিষেধ মেনে চলা।

SHARE