নিয়ন্ত্রনহীন দ্রব্যমূল্যের বাজার,অস্থির পুরো বাংলাদেশ

মেসকাত আহাম্মেদঃ-

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছে। এতদসত্ত্বেও এ দেশের অধিকাংশ জনগণ এখনও দারিদ্র্যসীমার মধ্যে বসবাস করছেন। বর্তমানে দেশের অন্যতম আলোচ্য বিষয় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি। কালোবাজারী, মুনাফাখোর, মজুতদার প্রভৃতির কারণে খাদ্যদ্রব্য, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মরিচ, চিনি, দুধ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য দ্রব্যগুলোর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন এবং ক্রমে এসব পণ্য সংগ্রহ কঠিনতর হচ্ছে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর জন্য।

সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সীমাকে অতিক্রম করে অশ্বের ন্যায় দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে প্রতিটি পণ্যের মূল্য। বাজার ব্যবস্থায় যেন পুঁজিবাদ চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে। ধনীরা আরো ধনী হয়ে ওঠছে আর সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষেরা কোনরকমে খেয়ে পরে জীবনের সাথে নিত্য যুদ্ধ করে চলেছে। এ যুদ্ধ যেন থামবার নয়। বৈষম্য ক্রমেই বেড়ে চলেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ জনগণ আজ সীমাহীন ভোগান্তিতে আছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বর্তমানে দেশের জাতীয় সমস্যাগুলোর অন্যতম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। অধিকাংশ নিত্যপণ্যের মূল্যই এখন নিম্ন-আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্য হরদম বেড়েই চলেছে। এ প্রসঙ্গে দেশের ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো-ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ।

এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ গড়ে তুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বলে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে। সরকারও বিভিন্ন সময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য এসব ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটকেই দায়ী করেছে। শিল্প মালিক, উদ্যোক্তা, উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের ওপর মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ।

ব্যবসায়ী এবং উৎপাদকরা চাঁদাবাজদের প্রদত্ত চাঁদার ক্ষতি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে পুষিয়ে নেন। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ ভোক্তারা। আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব অভ্যন্তরীণ বাজারেও পড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে অভ্যন্তরীণ বাজারে স্বাভাবিকভাবেই এর মূল্য বেড়ে যায়।

শুল্ক বৃদ্ধির কারণেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। সরকার কঠোর নজরদারি ও তদারকির মাধ্যমে অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে ভেঙে দিয়ে পণ্যের অবৈধ মজুদ ও কৃত্রিম সংকট বন্ধ করার মাধ্যমে এবং বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা অনেকাংশে সম্ভব। কিন্তু অনেক সময় প্রভাবশালী অসাধু ব্যবসায়ীগণ পার পেয়ে যাওয়ার ফলে শুল্ক কমানো সত্ত্বেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দ্রব্যমূল্য কমে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলামের এমন সব কালজয়ী কল্যাণধর্মী সুচিন্তিত নীতিমালা ও সুদূরপ্রসারী বাজার পরিকল্পনা রয়েছে; যা বাস্তবায়িত হলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও অনাকাক্সিক্ষত মূল্যস্ফীতি রোধ এবং সর্বোপরি বাজারের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি ও অস্থিতিশীলতা দূর করা সম্ভব। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে ইসলামের ব্যবসায়িক নীতিমালা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম; আলু, পেঁয়াজ, আদা, মুরগির দামও বাড়তি। সরু চালের পর এবার মোটা ও মাঝারি মানের চাল ইরি/স্বর্ণা, পাইজাম ও লতার দামও বাড়ল। রাজধানীর খুচরা বাজারে মোটা ও মাঝারি মানের চালের দাম এক সপ্তাহের মধ্যেই দুইবার বাড়লো।

প্রতি বছর ধানের মৌসুমের সময় চালের দাম কমে। কিন্তু এবার সদ্য সমাপ্ত আমনের মৌসুমেও চালের দাম কমেনি। বরং উলটো বেড়েছে এবং এখনো বাড়ছে। এদিকে শুধু চালের দামই নয়, গত এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে আলু, পেঁয়াজ, আদা ও ব্রয়লার মুরগিও। এছাড়া গত প্রায় দুই মাস ধরেই ভোজ্য তেলের বাজার অস্থির। কিন্তু কেন বাড়ছে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম তা যেন কারোরই জানা নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছর কোনো কারণ ছাড়াই রমযানে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। এবার রমযানের এক/দেড় মাস আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন। যাতে রমযানে দাম বাড়ানোর জন্য সমালোচনার মুখে পড়তে না হয়।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) অতিসম্প্রতি তাদের দৈনন্দিন বাজারদরের প্রতিবেদনে জানায়, মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা কেজিতে দুই টাকা করে বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে দুই টাকা বেড়ে মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৮ টাকা। তবে সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে সরু চাল নাজিরশাইল/ মিনিকেটের দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা উল্লেখ করলেও রাজধানীর বিভিন্ন খুচরাবাজারে দেখা গেছে তা বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ টাকায়।

টিসিবির হিসেবে গত এক বছরে মোটা চালের দাম ৪১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, সরু চালের দাম ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ ও মাঝারিমানের চালের দাম ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। এদিকে দফায় দফায় চালের দাম

SHARE