একাকিত্বে ইবাদতে নিমগ্ন মন।।

ইসলাম |

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
একাকিত্ব, নিঃসঙ্গতা মানুষের মধ্যে আত্মোপলব্ধি ও ইবাদতের আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। তবু মানুষের অসহায় উচ্চারণ :

‘কী ভয়ংকর এই একাকিত্ব!

কী নির্মম এই বন্ধনহীনতা!’

জনমে মরণে মানুষ বড়ই একা ও অসহায়। কেউ একা হয়ে যান না এক দিনে বা হঠাৎ, বরং একাকিত্বের দিকে জীবন গড়ায় অবহেলা, অপমানে এবং আপনজনের অপছন্দের মাত্রা ছাড়ায় যখন। নানা দূরত্ব ও দ্বন্দ্বের কারণে তৈরি হয় ফাঁক-ফাঁকি, ফাটল ও ভাঙন। পরস্পরকে উজাড় করে দেওয়ার ইচ্ছাসত্ত্বেও দায়ী-দোষী কেউ না থাকলেও কিছু সম্পর্ক কখনো থমকে দাঁড়ায়।

মানুষ তার আপনজনের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি অভিমান-অভিযোগ করে। অথচ প্রিয় নবী (সা.)-এর দর্শন—এক মুসলমান অন্য মুসলমানের কাছে সুদৃঢ় প্রাসাদতুল্য, যার একাংশ অন্য অংশকে সুদৃঢ় করে। (মিশকাত)

ইসলাম নিঃসঙ্গতা পরিহার করে মানুষে মানুষে সব সময় সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়। এমন বাস্তবতাকে পবিত্র কোরআনে ‘সিসা ঢালা প্রাচীরতুল্য’ বলা হয়েছে। সৃষ্টিগত কারণে সবাই অভিন্ন উৎসজাত মানুষ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদের একটি প্রাণসত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই তার জুটি সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের উভয়ের থেকে অসংখ্য নর-নারীর বিস্তার ঘটিয়েছেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ০১)

প্রিয়নবী (সা.) বলেন, তুমি মুমিনদের পারস্পরিক করুণা প্রদর্শন, পারস্পরিক সহানুভূতি প্রদর্শনের দিক থেকে একই দেহের মতো দেখতে পাবে। যখন দেহের কোনো একটি অঙ্গ কষ্ট অনুভব করে, তখন গোটা দেহটই জ্বর-নিদ্রাহীনতা দ্বারা এর প্রতি সাড়া দিয়ে থাকে। (বুখারি)

তবু নিঃসঙ্গতা ও একাকিত্ব থেকে দূরে থাকতে ইসলামে বাস্তবসম্মত নির্দেশনা রয়েছে। যেমন—

আল্লাহর স্মরণ ও দোয়া

মনের প্রশান্তির জন্য মহান আল্লাহর স্মরণ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের অমীয় বাণী : ‘জেনে রেখো! আল্লাহর জিকর দ্বারা অন্তরে স্থিরতা ও শান্তি আসে।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২৮)

প্রিয় নবী (সা.) যখন কোনো দুঃখ-কষ্ট বা হতাশাগ্রস্ত হতেন, তখন বলতেন—ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ূমু বিরাহমাতিকা আস্তাগিছ অর্থাৎ হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আপনার রহমতের মাধ্যমে আপনার নিকটে সাহায্য চাই। (তিরমিজি)

প্রিয় নবী (সা.)-এর আরো একটি দোয়া—আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালায়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল। অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর ঋণের দায় ও মানুষের দমন-পীড়ন থেকেও আপনার আশ্রয় চাই। (বুখারি ও মুসলিম)

নামাজে একাগ্রতা

বিপদ ও হতাশায় নামাজ প্রশান্তির পথ দেখায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার সাহায্য প্রার্থনা করো। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সেসব বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৫)

হাদিসে আছে, প্রিয় নবী (সা.) যখন কোনো কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতেন, তখন নামাজ আদায় করতেন। (আবু দাউদ)

সাহাবায়ে কিরামের অভ্যাস ছিল, তাঁরা অতি সামান্য বিষয়ের জন্যও নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন, এমনকি জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও।

মহান আল্লাহর প্রতি ভরসা

মনঃকষ্টমুক্ত হতে মহান আল্লাহর প্রতি ভরসার বিকল্প নেই। কেননা, তিনিই বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ০৩)

ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান

SHARE